আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের মন্ত্রীত্ব বহাল থাকা নিয়ে সারাদেশেই তুমুল বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা চলেছে গত কয়েকদিন ধরে। প্রায় সব মহল থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, রায়ের পরপরই দুই মন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব চলে যাবে। এমনকি পরদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন কিনা এ নিয়েও সন্দেহ ছিলো। কিন্তু তারা মন্ত্রীত্ব তো হারালেন না, বরং দুই মন্ত্রী বীরদর্পে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিলেন, বৈঠক শেষে বেরিয়েই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নাকি তাদেরকে রিভিউ আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে আগুনে ঘি ঢালার মতই হল। সারাদেশের মানুষের মধ্যে তর্কের ঝড় বয়ে গেলো। অধিকাংশ মানুষই ইস্যুটি নিয়ে সরকারের এমন অবস্থানকে মেনে নিতে পারছিলেন না। এতে আওয়ামী লীগের দায় ও সংকট বাড়লো, মনে করছেন প্রায় সবাই। বিচার বিভাগকে অবমাননা করার পুরো দায় বর্তালো আওয়ামী লীগ সরকারের উপর। এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্যেও অনেকে সরকারের এমন ভুমিকায় সায় দিতে পারছেন না। বিশেষ করে এডভোকেট কামরুলের ইতিপূর্বের গম কেলেংকারিসহ নানা অপকর্মের কারণে এমনিতেই তার ওপর দলের অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলো। এখন আবার সেই কামরুলকেই রক্ষা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করলো। শুধু তাই নয়, একজন শপথ ভঙ্গকারী ও সংবিধান লঙ্ঘনকারীকে মন্ত্রিসভায় রাখার দায় বইতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। যদিও আইনমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, দুই মন্ত্রীর এই দণ্ডে শপথ ভঙ্গ বা সংবিধান লঙ্ঘিত হয়নি। কিন্তু, আইনমন্ত্রীর এমন ব্যাখ্যা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। বরং আইন বিশেষজ্ঞরা অনেকে মন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত। মীর কাসেম আলীর মামলার শুনানির শেষদিকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সরকারি প্রসিকিউটরদের সমালোচনা করেন, যথাযথ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে না পারার কারণে। দুই মন্ত্রী কামরুল ও মোজাম্মেল এতে উল্টো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। গত ৫ মার্চ রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেমের আপিলের পুনঃশুনানির দাবি তোলেন কামরুল।
তিনি বলেন, আপিলের শুনানিতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের কাজ নিয়ে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ‘রায়েরই ইঙ্গিত’ মিলছে।
তিনি বলেন, “এই মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি, এই মামলায় আর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতির মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান বলে গণমাধ্যমের খবর।
গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। তবে ওইদিনই দুই মন্ত্রীর ইতিপূর্বেকার বক্তব্যকে বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং সুপ্রিম কোর্টের সম্মান ও মর্যাদাকে হেয় করার শামিল বিবেচনা করে কারণ দর্শাতে নোটিস দেয় আপিল বিভাগ।
ওই বক্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম কেন শুরু করা হবে না- তা ১৪ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে নোটিসে। আর দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ সকাল ৯টায় হাজির হতে বলা হয় আদালতে।
৮ মার্চ আসন গ্রহণের পর ৯টা ৫ মিনিটে এই আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে অশুভ ও অবমাননাকর বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা স্তম্ভিত, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।”
দুই মন্ত্রীর পক্ষে গত ১৪ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিসের জবাব দাখিল করা হয়। এছাড়া আদালতের তলবাদেশের প্রেক্ষিতে গত ১৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক হাজিরা দেন। তবে, বিদেশে থাকায় সেদিন হাজিরা দিতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২০ মার্চ ফের দুই মন্ত্রীকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।
পরে ২০ মার্চ সকালে হাজির হন দুই মন্ত্রী। ওইদিন আপিল বিভাগ খাদ্যমন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন এবং ২৭ মার্চ দুই মন্ত্রীকে ফের হাজির হতে নির্দেশ দেন। এ কারণে গত ২৭ মার্চ নতুন করে আবারো নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন খাদ্যমন্ত্রী। তাদের ক্ষমার আবেদন খারিজ করে আদালত অবমাননার দায়ে উভয় মন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। শুধু তাই নয়, এই অর্থ অনাদায়ে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডেরও আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
প্রথম বক্তব্যে থেমে থাকেননি কামরুল
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শুধু বিলিয়া মিলনায়তনে গোলটেবিলে দেয়া বক্তব্যেই থেমে থাকেননি। এরপর সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি আরো ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে বক্তব্যে তিনি কিছু স্ববিরোধী কথাও বলেছেন। প্রথমে তিনি দাবি করেন, তিনি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলেননি। পরক্ষণেই বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তার করা মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি, যিনি একজন অ্যাডভোকেট।
‘আমি কিন্তু বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলিনি,’ বলেন তিনি।
পরক্ষণেই কামরুল বলেন, ‘আমি কেন মন্তব্য করেছি তার ব্যাখ্যা দিয়েছি’।
এমনকি বিচারক গাঁজা খেয়ে রায় দিয়েছেন কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রী।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দোয়া করি, প্রত্যাশা করি এখনও রায়টা ঠিক হোক। মীর কাসেম আলীকে ছাইড়া দিলে কলিজাটা ফাইটা যাইব।’
প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর মামলা ফের বিচারের দাবিকারী এই মন্ত্রী আদালত অবমাননা করেননি বলেও সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন। আইনমন্ত্রী থেকে শুরু অনেক আইনজীবী বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয় বলে মত দিয়েছেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মার্চ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকরা কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অন্য বিজ্ঞ আইনজীবীরা যেমন বুঝেন একজন আইনজীবী হিসেবে আমিও বুঝি।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন জজের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালে মামলাটার বিচার হয়েছে। প্রসিকিউটররা প্রমাণ করতে পেরেছে বলেই তো শাস্তি হয়েছে আসামির। আমি যখন দেখি প্রকাশ্য আদালতে সেই প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে একেবারে ধুয়ে ফেলছে .. .।’
‘আদালত এক পর্যায়ে, আদালত এমন কথাও বলছে যে, প্রসিকিউটররা মামলার নামে রাজনীতি করছে। যেটা মীর কাসেম আলীর লবিস্ট টবি ক্যাডম্যান বলে। বিএনপি-জামায়াতসহ আন্তর্জাতিক চক্র এসব কথা বলে বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তখন কি আমি সংক্ষুব্ধ হব না, উদ্বিগ্ন হব না, তখন কি আমার রি-অ্যাকশন থাকবে না?’ এভাবেই নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান মন্ত্রী।
আপনি তো সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, এর আগে আইন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বোপরি একজন আইনজীবীও। আপনার এমন মন্তব্য বিচারকে কি প্রভাবিত করবে না?
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো মানুষ, আমি মন্ত্রী কি আকাশের জ্বীন? নাকি অন্য গ্রহের জ্বীন? আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি এই মামলার বাদী। ষোল কোটি মানুষ এই মামলার বাদী। জনমনে সংশয় দূর করার জন্য আমি এটি বলেছি।’
প্রধান বিচারপতি আদালতে মন্তব্য করেছেন। তার মন্তব্যের বিষয়ে আপত্তি থাকলে গণমাধ্যমে কথা না বলে আদালতের মাধ্যমেই সমাধান চাওয়া সমীচীন বলে বিজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন- খাদ্যমন্ত্রীকে এমন বলা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এইটা কোথায় আছে?’
‘আমিও তো বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করিনি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করাটা সমীচীন নয় এটা আমি আগেই বলেছি। কিন্তু, কেন মন্তব্য করেছি সেটাও বলেছি। এখন বুঝে নাও,’ ব্যাখ্যা দেন খাদ্যমন্ত্রী।
কিন্তু আপনি তো রায়ের আগেই মন্তব্য করলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, ‘কেন মন্তব্য করেছি সেটা এতক্ষণ পর্যন্ত বললাম। সাতখণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ বললে তো হবে না। মামলার শুনানিকালে (বিচারকরা) এত কথা বলবেন কেন? এত কথা বইলা তারা আমাকে হার্ট করছেন কেন?’
‘আজকে বিচারাধীন মামলা নিয়ে বিএনপির রিজভী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল একই ভাষায় কথা বলছেন। জামায়াত-বিএনপি যেখানে বিচার নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে মন্তব্য করছে, সেই জায়গায় আদালতও যদি বলে প্রসিকিউটররা রাজনীতি করছে, তাহলে তো একই ভাষায় কথা বলা হচ্ছে। এদেরকে তো আমরা সরকার নিয়োগ দিয়েছি। তাহলে রাষ্ট্র বা সরকার কি বিচার নিয়ে রাজনীতি করছে?’ প্রশ্ন রাখেন সাবেক এই আইন প্রতিমন্ত্রী।
প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মামলার আপিল শুনানির দাবি কতটা যৌক্তিক? প্রধান বিচারপতি নিজেই তো আদালত- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, ‘(উচ্চ) আদালত চাইলে চলমান মামলা আবার শুনানির জন্য উইথড্র করে নিয়ে আসতে পারে। প্রয়োজনে ভিন্ন বেঞ্চে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে।’
বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতের প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছি। আসলে তারা সুপ্রিমকোর্টে যেহেতু প্র্যাকটিস করেন তাদের অনেক স্বার্থ জড়িত, (তাদেরকে) আদালত সন্তুষ্ট রেখেই কথাবার্তা বলতে হয়।’
রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ আইন কর্মকর্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম) তো সিভিল মামলা ছাড়া ক্রিমিনাল মামলা জীবনে করে নাই। যাই হোক অ্যাটর্নি জেনারেল বিরাট ল’ইয়ার। কিন্তু এই সমস্ত কথাবার্তা, গালাগালি, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, তাদের (প্রসিকিউটরদের) প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে।’
ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বপালনকারী প্রসিকিউটরদের আপিল শুনানিতেও নেওয়ার পক্ষপাতী সাবেক এই আইন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের ওইখানে নিতে পারত, তাদেরকে নেয় নাই অ্যাটর্নি জেনারেল, নেয় নাই কেন? সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা তিনি তো কোনো সুযোগই দেন না। তিনি সবই করবেন।’
এরপর রসিয়ে রসিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল বলেন, ‘চিন্তা করে দেখ, তাদের (অ্যাটর্নি জেনারেল ও আদালত) ভাষায় এই ভাঙ্গাচোরা প্রসিকিউশন দিয়েই তো ২২টা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, নাকি। এই সিনহা বাবুই তো আপিল বিভাগে মামলা শুনছেন। তাদের তুমি এত গালাগালি কেন করবা? (ট্রাইব্যুনালের) জজ সাহেব যে রায়টা দিছে তাহলে জজ সাহেব গাঞ্জা খাইয়া রায়টা দিছে? আর না হয় জজ সাহেব প্রভাবিত হয়ে দিছে। ৪২ বছর সাজা নট এ ম্যাটার অব জোক।’
কামরুল বলেন, ‘আজকে মীর কাসেম আলী যখন পয়সাওয়ালা মাথা তখন ওরা (প্রসিকিউটররা) হয়ে গেছে খারাপ। আর এরা করে রাজনীতি। এইগুলা কোনো কথা হইল,’।
মীর কাসেম কারাগারে থাকলেও তার পয়সা-কড়ি বাইরে ঘুরছে বলে মন্তব্য করেছেন। এই কথার অর্থ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল আবারো রসিয়ে রসিয়ে বলেন, ‘এই কথার অর্থ ব্যাখ্যা করতে হয় না। ইশারাতেই কাফি।’
উল্লেখ্য, আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীকে দণ্ড দেয়ার প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এমন মন্তব্য করেছেন, ‘দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়েই দেখা মিলবে টাকার খেলা কোন দিকে হয়েছে।’
আইন বিশেষজ্ঞরা যা বলেছেন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকে মন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। দুইমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ আদালত দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ রোববার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীরা কিভাবে আগামীকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বসবেন?” তিনি বলেন, “আমার প্রত্যাশা হবে, আদালত অবমাননার দায়ে নৈতিক দায়িত্ব থেকে সরকারের দুই মন্ত্রী আজকের মধ্যেই কোন একসময় পদত্যাগ করবেন।” আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দুই মন্ত্রী নিজ পদে বহাল থাকতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সাংবিধানিক পদ যারা ধারণ করেন তাদের শপথ নিতে হয়। আর এই শপথের মূলমন্ত্র হলো ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করব।’ আর এই শপথ যখন ভঙ্গ হয় কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি এই শপথ ভঙ্গ করে তাহলে তিনি ওই পদে বহাল থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েন।
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, শপথ ভঙ্গের অপরাধে সর্বোচ্চ আদালত দোষী সাব্যস্ত করে দুই মন্ত্রীকে সাজা দিয়েছেন। নৈতিকতার বিষয় থাকায় তাদের অবিলম্বে মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। যদি তারা পদত্যাগ না করেন তবে প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেয়া। তিনি বলেন, দুইজন মন্ত্রী যে ভাষায় প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারকদের নিয়ে জঘন্য মন্তব্য করেছেন, এরপর তারা গাড়িতে জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, দুই জন মন্ত্রীকে জরিমানা করে যে সাজা দেয়া হয়েছে তা লঘুদণ্ড। এই শাস্তি আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেয়া হয়। তাতে তার প্রধানমন্ত্রীত্ব পদ চলে যায়। আমরা মনে করি আপিল বিভাগ দুই মন্ত্রীকে যে সাজা দিয়েছেন এজন্য স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটি নৈতিকতার প্রশ্ন, এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি বলেছেন, অনৈতিক কারণে সাজা হলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া কোন সংসদ সদস্যের দুই বছরের বেশি সাজা হলেও তার সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, তাদের মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের ওপর।
শপথ ভঙ্গ হয় কিসে?
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী দুই মন্ত্রীই শপথ ভঙ্গ করেছেন। যে কোনো ব্যক্তি যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে সোজা পথে চলবে। দুই মন্ত্রী গোটা বিচার বিভাগকে পদদলিত করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তাদের বক্তব্যে তারা সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন সংবিধান রক্ষার, এই শপথ ভঙ্গ করলে পরিণতি কী?’ ২০ মার্চ রোববার দুই মন্ত্রীর আদালত অবমানার মামলার শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি এমন মন্তব্য করেন।
অথচ আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হক গত ২৮ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তার দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘দুই দণ্ডিত মন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করেননি; সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এ ধরনের মন্তব্যে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ, এর আগে শুনানিকালে আপিল বিভাগ বলেছেন, দুই মন্ত্রীর মন্তব্যে সংবিধানের লঙ্ঘন ঘটেছে। বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধান লঙ্ঘন আর শপথের লঙ্ঘনকে আলাদা করা যাবে না। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। আর মন্ত্রীরা সংবিধান রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধানের শপথ নেন। অনেক বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন, আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার মানে তাহলে আমজনতা কি বুঝবেন? কি করে তারা বুঝবেন যে, দুই মন্ত্রীর শপথ ঠিক আছে, আবার আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন সেটাও ঠিক আছে। এই দুটি পরস্পরবিরোধী বিষয় একসঙ্গে ঠিক হয় কী করে?
আদালত অবমাননা নানা আচরণে হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে দেখা যায়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ গিলানি আদালতের আদেশ অমান্য করেছিলেন, এজন তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। তাকে বলা হয়েছিল, সুইস কোর্টে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে চালু থাকা বিচারাধীন মামলার শুনানি পুনরায় শুরু করতে। সেই আদেশ তিনি তামিল করেননি। অবশ্য, এরও একটা যুক্তি ছিল। তা হলো, পাকিস্তানের সংবিধানে স্পষ্ট লেখা ছিল যে, কর্মরত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চালু করা যাবে না। এমনকি সেসব বিধান থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ড হয়, প্রকাশ্যে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। তার পক্ষে পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেনও যে, সব ধরনের আদালত অবমাননাই কিন্তু শপথ ভঙ্গের কারণ সৃষ্টি করে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন, আর সেকারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর শপথ রক্ষা করার প্রচেষ্টা বা তার যা দাবি সেটা কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এককথায় নাকচ করে দিতে পারেননি।
তিন সদস্যের পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ, যার আদেশে প্রধানমন্ত্রী অপসারিত হলেন, তারাও কিন্তু স্বীকার করেন যে, পার্থক্য একটা আছে। সব আদালত অবমাননাই গর্হিত নয়। বা আদালতকে হাস্যকর করে তোলার প্রচেষ্টা নেই। সেখানে আসিফের বিরুদ্ধে সুইস কোর্টে শুনানি না করতে দিতে পিপিপির একটি দলীয় সিদ্ধান্তও ছিল। হয়তো সেকারণে ৩ সদস্যের বেঞ্চ আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তাকে এক মিনিটের জন্য দণ্ডিত করে প্রথম যে ৭ সদস্যের বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, তারা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতকে ‘হাস্যকর’ করার অভিযোগ তুলেননি। তিন সদস্যের বেঞ্চ বরং বারবার একথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল রায় হওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে আপিল করা। তারা আপিলের শুনানিতে এসব যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে পারত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আপিল না করার ফলে সেই রায়টি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। আর তদুপরি লক্ষণীয় যে, এরপরেও ইউসুফ গিলানি কেন আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন সেজন্য তার শপথ লঙ্ঘন ঘটেছে বলেই গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশে দুই মন্ত্রী বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে যা বলেছেন, সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজেই বলেছেন যে, এটা সংবিধান সম্মত হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল যে মন্তব্য করেছেন তাতে এটা পরিষ্কার যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মনে করেন দুই মন্ত্রী সংবিধানের লঙ্ঘন ঘটিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞমহলের মতে, এতকিছু করার পরেও যদি মন্ত্রীদের শপথ ভঙ্গ না ঘটে তাহলে আর কিসে শপথ ভঙ্গ হবে।
অবশ্য, প্রধান বিচারপতি যেহেতু প্রশ্নটি তুলেছিলেন, তাই এই বিষয়ে আদালতের কোনো অভিমত পূর্ণাঙ্গ রায়ে মেলে কিনা, সেটা একটা দেখার বিষয়।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মকর্তা এবং কংগ্রেস সদস্যদের জন্য ‘ওথ অব অফিস’ লঙ্ঘনের বিরাট শাস্তি ধার্য আছে। শপথ লঙ্ঘন একটি ফেডারেল অপরাধ। ১৯১৮ সালের আইনে কেবল যে অফিস থেকে অপসারণ তাই নয়, জেল ও জরিমানা দুটোই আছে।
তোপের মুখে দুই মন্ত্রী
আদালত অবমাননার দায়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে দেশের সর্বোচ্চ আদালত দণ্ড দেয়ার পর তাদের মন্ত্রিত্ব বহাল থাকায় খোদ সরকারি দলের মধ্যেও বিতর্ক চলছে। এভাবে নিজেদের অপকর্মে দলের মধ্যে তোপের মুখে পড়া দুই মন্ত্রী দল ও সরকারকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন বলে অভিযোগ দলের মধ্যে অনেকের। আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন, আদালত অবমাননার পুরো দায় সরকারকের ওপরই পড়ছে। এতে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সরকারের মধ্যেও যেন এই দুইমন্ত্রীর অবস্থান ক্যান্সারের মতই মনে হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকের অভিমত, সরকারকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে ক্যান্সার রূপী এই দুইমন্ত্রীকে অপসারণ করে সরকারের হারানো ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে হবে। ফলে তাদের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে দলের বিভিন্ন ফোরামে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, ২৮ মার্চ মন্ত্রিসভা বৈঠকে আদালতে দণ্ডিত দুই মন্ত্রী উপস্থিত থাকছেন কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা চলছিল। অবশেষে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে যোগ দেন তারা। তবে বৈঠকে যোগ দিলেও তারা ছিলেন বেশ বিমর্ষ। অন্য মন্ত্রীরা তাদের উপস্থিতি দেখে বিরক্তির ভাব প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তাদের নিয়ে একান্তে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ‘সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডিত হওয়া দুই মন্ত্রীকে নিয়ে হাইকমান্ড চরম বিরক্ত। দল দুই মন্ত্রীর বক্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি। এখন তারা কী করবেন সেটা তাদের বিষয়।’
জানা গেছে, দণ্ডিত দুই মন্ত্রী ছাড়াও বিশেষ আলোচিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওপরও চরম বিরক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে উল্লিখিত তিন মন্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই বৈঠকে দলের নেতাদের প্রশ্নবাণে পড়েন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রীদের ‘লাগামছাড়া’ বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে নাসিম বলেন, ‘মন্ত্রীরা এভাবে কথা বললে সরকারের ভাবমর্যাদা সঙ্কটে পড়ে।’
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রীদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এসব মন্ত্রীর অপকর্মে দল ও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। সেজন্য সরকারের ইমেজ রক্ষায় তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত। না হলে ভবিষ্যতে তারা আরো বেশি অপকর্ম করার সাহস পাবে।”
আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ‘দল ও সরকার চরম বিব্রত হলেও উল্লিখিত মন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন না সেটা প্রায় নিশ্চিত। সেজন্য জনগণের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর উচিত এসব মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা।’ ‘অতিবচন’ দেয়া মন্ত্রীদের নিয়ে প্রায়ই সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এসব নাজুক পরিস্থিতি থেকে এড়াতে হলে সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব মন্ত্রীদের অপসারণ করতে হবে। তবে এ নেতা অনেকটাই হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব মন্ত্রী এবারো হয়তো পার পেয়ে যাবেন। কারণ, এর আগেও পচা গম কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরও অজানা কারণে পার পেয়েছেন। এখন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পরও দলীয়ভাবে কোনো শাস্তি না দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা বলা হচ্ছে।’
কী হতে পার
আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত দুইমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক রায়ের পরপরই রিভিউ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু মামলার রায় অনুযায়ি জরিমানার টাকা পরিশোধ করায় তারা এখন রিভিউ করার কথা বলছেন না । এ ছাড়া তাদের রিভিউ করার আর সুযোগও নেই। সবাই এখন অপেক্ষা করছেন তাদের লিখিত রায় দেখার জন্য। ধারণা করা হচ্ছে লিখিত রায় বের হওয়া পর্যন্ত এভাবেই তারা স্বপদে বহাল থাকছেন- সেটা নৈতিক হোক কিংবা অনৈতিক যাই হোক । তবে এই দুই মন্ত্রী আপাতত অতিকৌশল ত্যাগ করেছেন যাতে সবাই যেন এসব কিছু ভুলে যান। অতি কথনে খ্যাত কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক আপাতত চুপসে গেছেন। ইদানিং কোন সভা-সমাবেশে বক্তব্য -মন্তব্যও রাখছেন না । মনে হচ্ছে লাগামহীন ও অতিবচন বন্ধ রাখতে তারা মুখে কুলুপ এটেঁছেন।