কিশোর সবসময় তুলে ধরতেন কৃষকের কথা প্রচলিত সাংবাদিকতার ধ্যান ধারণা ভেঙে ফয়সাল রহমান। তার লেখনীতে উঠে আসতো কৃষকের সমস্যা ও সম্ভাবনা। তিনি চেয়েছিলেন, দেশি ফসলের জাতকে পরিচিত করে তুলতে। বিষমুক্ত সবজির জন্য কাজ করে যেতে। আর এ ভাবনা থেকেই বিটি বেগুনের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলেছিলেন তিনি। তৈরি করেছিলেন ‘বিটি বেগুন বিসংবাদ’ নামের প্রামাণ্যচিত্র। তার সেই ভাবনাই একসময় রুপ নেয় আন্দোলনে। তার অকাল মৃত্যুতে ভাটা পড়ে গেল সেই আন্দোলন। কিশোরের ভাবনা আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।শনিবার বিকালে রাজধানীর বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘কিশোরের কৃষি ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক ফয়সাল রহমান কিশোরের স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল জার্নালিস্ট এন্ড এক্টিভিস্ট ফেডারেশন (বিএজেএএফ)।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে কিশোরের শিক্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসরুর শহিদ তাপস বলেন, কৃষকের কথা শোনা ও মানুষকে শোনানো ছিল কিশোরের কাজ। প্রচলিত চিন্তা ভেঙে নতুন ধারা উদ্ভাবন করতো। নিজে যে স্পিরিট ধারণ করতো, সেটাই করতো।
প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সংগঠক ও গবেষক পাভেল পার্থ জানান, বিটি বেগুনকে নিয়েই কিশোরের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়েছিল। কিশোর চেয়েছেন বাংলাদেশের নিজস্ব ফসলের বীজ নিয়ে কাজ করতে। কিশোর মনে করতেন আমাদের কৃষির ওপর উপনিবেশ চলছে। এর বিরুদ্ধে কিশোর সোচ্ছার ছিলেন। বিটি বেগুনের ক্ষতিগুলো তুলে ধরেছেন তিনি। এখন আমরা এ বেগুনের ক্ষতি নিয়ে সেভাবে লেখা দেখছিনা।
তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল জার্নালিস্ট এন্ড এক্টিভিষ্টস ফেডারেশন (বিএজেএএফ) সভাপতি পুলক ঘটক বলেন, কিশোর একটি আন্দোলনের নাম। তার এই কৃষি আন্দোলন আমাদের ছড়িয়ে দিতে হবে।
কৃষি সাংবাদিকতায় কিশোর একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন উল্লেখ করে বিএজেএএফ সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ইফতেখার মাহমুদ বলেন, কিশোর পেছন থেকে কাজ করতে ভালোবাসতেন। ভালো কাজে সবাইকে সে অনুপ্রাণিত করতেন।
প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনে যুক্ত দেলোয়ার জাহান বলেন, কৃষির উপর বিদেশি আগ্রাসনের প্রতিবাদ ছিল কিশোরের লেখায়। রিপোর্টের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে মিশে যেতেন তিনি।
অনুষ্ঠানে কিশোরের ভাবনা ও কাজকে সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার পক্ষে মত দেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন ফয়সাল রহমান কিশোর। সাংবাদিকতার বাইরে যা ভাবতেন, তার আলোকে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকতেন এক্টিভিজমে। কবি হিসেবেও পরিচতি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক এই নেতা। সক্রিয় ছিলেন, প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের মফস্বল সম্পাদকের। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কিশোর গত ৯ মার্চ সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান পরপারে।