দিনাজপুরে জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে ছেড়ে দেয়া হয়েছে পরিবেশের পরম বন্ধু হিসেবে পরিচিত ১০টি শকুনকে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধারের পর সেবা পরিচর্যা দিয়ে ।
আজ শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় ৭০০ একরের এই বিশাল বনভূমিতে।
এ সময় শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করণ ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচির আওতায় সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভাও।
প্রকৃতির ঝাড়ুদার এই শকুন সম্পর্কে এক সময় খারাপ ধারণা ছিল মানুষের। শকুনকে অশুভ এমনকি মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করা হতো। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুন অশুভতো নয়, বরং মৃত পশু খেয়ে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন নামের এই পাখিগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে ৬ প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে রয়েছে। ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রিফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন।
দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির বাংলা শকুনও। শকুন অধিকাংশই বিপন্নপ্রায়। বইয়ে পড়লেও অনেকে বাস্তবে দেখেননি শকুন। বাস্তবে শকুন দেখে বেশ আপ্লুত এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। তাই এই শকুন দেখতে এখন ভিড় করেছে মানুষ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যাথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে শকুন বিলুপ্তির পথে। ওই ওষুধ দেয়া পশুর মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে শকুন মারা যায়।
বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা শকুনকে সুস্থ করার জন্য দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে গড়ে তোলা হয়েছে পরিচর্যা কেন্দ্র। বন বিভাগ ও আইইউসিএন-এর উদ্যোগে এখানেই আড়াই মাসের পরিচর্যায় সুস্থ করা হয়েছে ১০টি শকুনকে। শনিবার দুপুরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পরে শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করা ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বাড়াতে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, ঢাকা’র বন সংরক্ষক মো.জাহেদুল কবির, আইইউসিএন এর রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিউবুল আমিন, পাখি বিশারদ ইনাম আল হকসহ অন্যরা।
আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং বন বিভাগের উদ্যোগে এ আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবীর মানুষ অংশ নেন।
প্রকৃতির ঝাড়ুদার খ্যাত শকুন নানাবিধ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের পরম বন্ধু এই শকুন টিকিয়ে রাখতে সরকারের যেমন দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন জনসচেতনতার। আলোচনায় এমনটাই আশা করেছেন পরিবেশ প্রেমীরা।