২৬তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চিটাগাং চেম্বার আয়োজিত ছুটির দিনে দারুণ জমে উঠছে । এতে মেলার আমেজ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় প্রাণচাঞ্চল্য তৈরির পাশাপাশি দেশি–বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুউচ্চ, নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়ন এবং বিক্রেতাদের হাকডাক এ চাঞ্চল্যকে আরও ছড়িয়ে দিয়েছে। গত ৩ মার্চ নগরীর টাইগারপাস সংলগ্ন রেলওয়ে মালিকানাধীন পলোগ্রাউন্ড মাঠে মাসব্যাপী এ মেলা শুরু হয়। দেশি–বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এ মেলায় রয়েছে অন্তত চারশ’টি স্টল।

এদিকে মেলা উদ্বোধনের পর থেকে ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা দেখা না গেলেও ধীরে ধীরে ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে মেলায় থাকে উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, মেলার ভেতরে ও বাইরে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এ ভিড়ের মধ্যেও মেলার টানে ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারীদের আনাগোনা ছিল। বিশেষ করে ছোট্ট শিশু, তরুণ–তরুণীরা মেলায় এসে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। বিভিন্ন প্যাভিলিয়নের সামনে ও দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপনার সামনে এসে সেলফি, ছবি তুলে তা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা গেছে। বাবা–মা’র হাত ধরে ছোট্ট শিশুরাও বিভিন্ন স্টলগুলোতে ঢুকে বাহারি সব পণ্য দেখে খুশিতেও আত্মহারা হয়ে উঠছে। মেলায় অংশগ্রহণ করা একটি প্ল্যাস্টিক সামগ্রীর প্যাভিলিয়নে ছোট্ট শিশুদের জন্য তৈরি করা চেয়ার ও টেবিল ক্রেতাদের বিক্রির জন্য সাজানো ছিল। সেগুলো যেন নিজেদের মনে করে বসিয়ে ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তানদের বসিয়ে ফটোসেশন করছেন বাবা–মা।

মেলায় স্থান পেয়েছে গৃহস্থালীর পণ্য থালা, বাসন থেকে শুরু করে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, জুয়েলারী সামগ্রী, ফার্নিচারসহ সব শ্রেণির পণ্য। ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে কোম্পানিগুলোও মেলা উপলচ্ছে দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। সাধারণত ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত এ ছাড় দিতে দেখা গেছে। এগুলো বাদেও নির্ধারিত পণ্যগুলোর ওপর রয়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। এছাড়া ডিসকাউন্টের পাশাপাশি পণ্য ক্রয়ের উপর লটারির আয়োজনও করা হয়েছে। সেসব লটারিতে বিজয়ীদের জন্য রাখা হয়েছে মোটরসাইকেল, স্বর্ণসহ লাখ লাখ টাকার পুরস্কার। একটি কোম্পানিকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকার পণ্য ক্রয়ের উপর ডিসকাউন্ট সুবিধাসহ লটারির সুযোগ দিতে দেখা যায়। মেলায় পণ্যের ওপর ক্রেতাদের এতসব সুবিধার দেয়ার পরও তা কি ছেড়ে আসা যায়! ক্রেতাদেরও ডিসকাউন্টের বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ পণ্য পরখ করে দেখছেন। ভালো লাগলে কিনে নিচ্ছেন। মেলায় ক্রেতা আকর্ষণ করতে শিশুদের খাবার উৎপাদনকারী একটি কোম্পানি শিশুদের নিয়ে বায়োস্কপ, তোতা পাখি, বানর খেলা প্রদর্শন করছে। এতে আকৃষ্ট হয়ে শিশুরাও যাচ্ছে সে স্টলে। এদিকে মেলায় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতাদের চোখে মুখেও আনন্দ দেখা গেছে। নিজেদের পণ্যের বিভিন্ন ডিসকাউন্ট, অফার ও সুযোগ সুবিধা প্রচার করছে তারা হাসিমুখে। সাধারণত ক্রেতা থাকলে বিক্রেতাদের মুখে থাকে হাসি। মেলাতেও এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মেলায় যতগুলো স্টল দেয়া হয়েছে এমন একটি স্টল দেখা যায়নি যেখানে ক্রেতাদের ভিড় নেই। মেলায় সবগুলো স্টলেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। মেলার বাইরেও স্থাপিত বিভিন্ন খাবারের দোকানেও রীতিমত ভিড় দেখা যায়। মেলা শুরু হওয়ার পর ৯–১০ তারিখ থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করে বলে জানিয়েছেন মেলার স্টলগুলোর কর্মচারীরা। সাধারণত বিকেল থেকে এ ভিড় বাড়ে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে শনিবার পর্যন্ত মেলায় প্রচুর ভিড় থাকে বলে জানিয়েছেন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী লিমন মিয়া।

এদিকে ছুটির দিনে মেলায় আগতদের চাপ সামলাতে পারেনি মেলা প্রাঙ্গণের পাশে স্থাপিত পার্কিং স্পট। সেখানে একটি স্কুলের মাঠে নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল পার্কিং করার সুবিধা দেয় একটি পক্ষ । কিন্তু জায়গা না থাকায় শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা নাগাদ অবশেষে নতুন করে গাড়ি পার্কিং দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন গাড়ির মালিককে জায়গা না পেয়ে ফিরে আসতে দেখা যায়। পাশে আরও দুয়েকটি জায়গায় পার্কিং ব্যবসা করতে দেখা গেছে। এছাড়া রাস্তার পাশেও গাড়ির জট দেখা গেছে। জট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে কাজ করতে দেখা যায়। এবারের মেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রিমিয়ার গোল্ড প্যাভিলিয়ন, ১১টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, আটটি স্ট্যান্ডার্ড প্যাভিলিয়ন, ১৭২টি প্রিমিয়ার মেগা স্টল, ২৩টি মেগা স্টল, ১৪টি প্রিমিয়ার গোল্ড স্টল ও ১৩টি প্রিমিয়ার স্টল। মেলায় পার্টনার কান্ট্রি হিসেবে আছে থাইল্যান্ড। এর বাইরে ভারত, ইরান ও মরিশাসের স্টল আছে মেলায়। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এ মেলায় প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে ১০ টাকা। দেশীয় পণ্যগুলো বাইরের দেশগুলোতে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার প্রতিবছর এ ধরণের মেলা আয়োজন করে আসছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক সংগঠনটি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031