এটা অজানা ছিল না ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দর বিপজ্জনক। তারপরও ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের সঙ্গে ‘অনভিজ্ঞ’ পাইলট পৃথুলা রশীদকে পাঠিয়েছে তারা। দুর্ঘটনার পর যুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘অভিজ্ঞদেরকেও কোনো না কোনো বিমানবন্দরে প্রথম ফ্লাইট নামাতেই হয়।’

দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনে এসে নানা প্রশ্ন আসছে গণমাধ্যমে। এর মধ্যে দুই পাইলটের একজন পৃথুলার অনভিজ্ঞতার বিষয়টিও এসেছে। এই ফ্লাইটটিই ছিল নেপালে তার প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা।

সোমবার ত্রিভূবন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে ৬৭ জন যাত্রী এবং চার জন ক্রু ছিলেন। যাদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নেপালি কর্তৃপক্ষ। নিহত হয়েছেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতার ও কো পাইলট পৃথুলা রশীদ।

ত্রিভূবন বিমানবন্দরে এখন পর্যন্ত ৭০টির বেশি দুর্ঘটনায় ছয় শতাধিক যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছে। আর পৃথুলার প্রথমবার বিমান পরিচালনাই এমন বিপজ্জনক একটি বিমানবন্দরে।

দুর্ঘটনার পর দিন ইউএস বাংলা বলেছে, তাদের পাইলট আবিদ সুলতানের ত্রিভূবন এয়ারপোর্টে ১০০টিরও বেশি অবতরণের অভিজ্ঞতা ছিল। তবে পৃথুলার যে এটি প্রথম অবতরণ, সেটি সেদিন জানায়নি তারা।

বুধবার বারিধারার করপোরেট কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে ইউ এস বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিষয়টি নিয়ে।

কামরুল জবাব দেন, ‘পাইলট যতোই ফ্লাইট চালাতে অভিজ্ঞ হোক না কেন কোনো না কোনো বিমানবন্দরে তাদের প্রথম ফ্লাইট চালাতে হয়েছে।’

যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটির ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল-এসিটির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাহলে প্রথমবারের মতো বিমান পরিচালনায় যাওয়া পৃথুলাই কি বিমান অবতরণ করছিলেন-জানতে চাইলে কামরুল বলেন, ‘ল্যান্ডিংয়ের সময় ক্যাপ্টেন কথা বলতে পারবেন না এমন কোনো কথা নেই।’

পৃথুলার ফেসবুক পাতা থেকে জানা যায়, তিনি ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের সঙ্গে যুক্ত।

বিমানটির ফিটনেস নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল কি না, জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যদি এই এয়ারক্রাফটের ফিটনেস না থাকতো তাহলে সিভিল এভিয়েশন থেকে এওসি সার্টিফিকেট দিত না। পাইলট যদি ফিট না থাকতো তারা তাকে ফ্লাই করার পারমিশনও দিত না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইউএস বাংলার কর্মকর্তা বলেন, এটিসির সঙ্গে পাইলটের যে কথোপকথন প্রকাশ হয়েছে তাতে এটিসির কর্মীদের কারণেই পাইলট দুইজন বিভ্রান্তিতে পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

কামরুল বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ, দুর্ঘটনার সময় টাওয়ারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয়জনকে দুর্ঘটনার পরদিনই বদলি করা হয়েছে। কোনো ব্যর্থতার ইঙ্গিত না পেলে এদের বদলি করার কোনো সুযোগ নাই। এছাড়া এয়ারক্রাফটের ব্ল্যাকবক্স থেকে আরও কিছু জানা যাবে।

কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আপাতত এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা। দুর্ঘটনায় পাইলটদের ত্রুটি দেখছে না বেসরকারি সংস্থাটি। তবে তদন্তের পরই বিস্তারিত বলতে পারবে তারা।

ইউএস বাংলা বরাবর নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেয় জানিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনদিনের পর্যবেক্ষণে বিমান বিধ্বস্ত হওয়াকে আমরা একটা দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছি। এটা একটি অ্যাক্সিডেন্ট। কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৩৬ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করেছি আমরা।’

আহতদের চিকিৎসায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে (কাঠমান্ডু) এখন আমাদের দুইজন ডাক্তার আছেন।  আগামী দুই একদিনের মধ্যে ৭/৮ জনের আরেকটি মেডিকেল টিম পাঠাব। এছাড়া আজ  রাতে এয়ার এম্বুলেন্সে করে আমাদের তত্বাবধানে ড. রেজওয়ানুল হককে সিঙ্গাপুরের  জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। বাকিদেরও নিয়ে যাওয়া দরকার পড়লে আমরা তা করব।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031