খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ইভেন্টে অনুশীলনের জন্য একমাত্র মাঠ সার্কিট হাউজ ময়দান খুলনার । এখানে অনুশীলন করে থাকেন স্থানীয় অর্ধশতাধিক ক্লাবের খেলোয়াড়রা। কিন্তু খেলার মৌসুমে বিভিন্ন ইভেন্ট ও মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় খেলা কিংবা অনুশীলন করতে পারছেন খেলোয়াড়রা।
স্থানীয় ক্রীড়াবিদরা বলছেন, বছরের অধিকাংশ সময় ধরে মাঠটি দখলে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবার মেলার পরে মাঠটি খেলার উপযোগী হতে মাস কেটে যায়। সেসময় পার হতে না হতেই চলে আসে নতুন আঙ্গিকে আরেক মেলা। সব মিলিয়ে মেলায় মেলায় শেষ হচ্ছে পুরো বছর। খুলনার ক্রীড়াঙ্গনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও খেলারমাঠ উন্মুক্ত রাখতে সরকারি আইনের কোন বাস্তবায়ন নেই। খুলনা জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত সার্কিট হাউজ মাঠে বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এরমধ্যেও শত শত খেলোয়াড় তাদের অনুশীলন চালিয়ে থাকেন। আবার বাণিজ্য মেলার নামে মাসব্যাপী খেলা বন্ধ থাকে এ মাঠে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন আয়োজিত মাসব্যপী মেলা শেষ হতে না হতেই সার্কিট হাউজ মাঠটিতে ফের শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ইতোমধ্যে মাঠে শুরু হয়েছে খোড়াখুড়ি, খুটিপোতা ও স্টল নির্মাণ কাজ। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে খেলা কিংবা অনুশীলন।
এখানে খেলতে আসা খেলোয়াড়রা বলেন, আমাদের বিকল্প কোন খেলার মাঠ না দিয়ে সার্কিট হাউজ মাঠটি সাড়া বছরই মেলার নামে দখল রাখেন ব্যবসায়ীরা। তাহলে আমরা কি খেলাধুলা ছেড়ে দেব?
নাম না প্রকাশ করা শর্তে খুলনার অধিকাংশ ক্লাবের কর্তারা জানান, একশ্রেণির ব্যবসায়ী, ক্রীড়া সংগঠক ও স্থানীয় রাজনৈতিক কয়েকজন লোভী নেতার লালসার শিকার হচ্ছে মাঠটি। প্রতিবাদ করলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন না ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এই মাঠে অনুশীলন করে ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ইভেন্টে জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছেন অনেক কৃতি খেলোয়াড়। ফুটবলার আসলাম, সালাম মুর্শেদী, রুমী, জসিসহ অনেকে অনুশীলন করতেন এ মাঠে। জাতীয় ক্রিকেটে মাঞ্জারুল ইসলাম রানা, মেহেদী মিারাজ, সোহানরাও নিজেকে প্রস্তুত করেছেন এ মাঠে।
খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনা মহানগরীর জনসংখ্যার তুলনায় খেলাধুলা ও বিনোদনের জায়গা খুবই কম। একমাত্র ভরসা খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠ। বছরের অধিকাংশ সময় ধরে নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি মেলার নামে মাঠটি দখল থাকে। ফলে এ অঞ্চলের সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড় গড়ে উঠছে না। বিশেষ করে বাণিজ্য মেলার নামে পুরো মাঠটি কয়েক মাস দখলে থাকে। ঠিক ওই সময়টিতে অনুশীলনের ভরা মৌসুম। এর ফলে খুলনায় খেলাধুলার মান দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহসান বলেন, সকল অন্যায় সহ্য করে যাচ্ছি। প্রতিবাদ করার মতো অবস্থা নেই। ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুব গেইমসে খুলনার অবস্থান খুবই ভালো।কিন্তু খুলনার একমাত্র উন্মুক্ত মাঠটি মেলার নামে দফায় দফায় দখল হচ্ছে। প্রশাসনসহ মেলার আয়োজকরা ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ গুলোর কষ্ট বুঝতে চায় না। এই বাণিজ্য মেলার কারণে খুলনায় সকল প্রকার ইভেন্টে অনুশীলন বন্ধ থাকছে। তিনি খুলনার খেলার মাঠ খেলোয়াড়দের জন্য উন্মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।