আমরা শোকাহত। আমরা মর্মাহত নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অর্ধশত লোকের প্রাণহানির ঘটনায় । শোক প্রকাশের ভাষা নেই আমাদের। কোনো রকমের সংকেত সময় প্রদান ছাড়াই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তাঁরা। বাকিরা হাসপাতালে। অনিঃশেষ দহনযন্ত্রণার শিকার স্বজন ও নিকটজনদের জানাই সমবেদনা। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের বিনীত প্রার্থনা– তিনি যেন সবাইকে শোক সইবার শক্তি দেন। প্রত্যাশা করি আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অগ্নিদগ্ধ মৃত যাত্রীদের সারিবদ্ধ চিত্র আমাদের বেদনাহত করে। আমাদের কাঁদায়। আমরা এ দৃশ্য আর দেখতে চাই না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ৭৮ আসনের প্লেনটিতে ৭১ জন আরোহী ছিল। ইউএস–বাংলা কর্তৃপক্ষ বলছে, ড্যাশ–৮ কিউ ৪০০ মডেলের ওই বিমানে ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৬৭ জন ছিলেন যাত্রী, বাকিরা ক্রু। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, ১ জন চীনা ও ১ জন মালদ্বীপের নাগরিক। নেপালিরা ফিরছিলেন ঘরে, বাংলাদেশিরা যাচ্ছিলেন বেড়াতে। বিমানটির জীবিত ১৯ জন যাত্রীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশি যাত্রীদের মধ্যে নয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তারা কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন; তাদের খোঁজ–খবর নিচ্ছেন সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। বাকি দুটি শিশুসহ বাংলাদেশি ২৩ যাত্রীর সবাই মারা গেছেন বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নিশ্চিত করেছেন।
‘৩৪ বছর পর বাংলাদেশি বিমানের এত বড় দুর্ঘটনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটায় বাণিজ্যিক বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ বছর ছিল ২০১৭ সাল। যা স্বস্তি এনেছিল বিমান যাত্রীদের মনে। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম আড়াই মাসেই ৩৬৩ ছোট–বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সর্বশেষ নেপালের কাঠমুন্ডুতে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। চলতি বছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ‘অনিরাপদ যাত্রা’ নিয়ে নতুন করে আতংক তৈরি হয় যাত্রীদের মনে। এর আগে বিমান দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এত বাংলাদেশীর প্রাণহানি ঘটেছিল ৩৪ বছর আগে ১৯৮৪ সালে। ওই বছরের ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ–২৭ (ফ্লাইট নাম্বার এস–২ এবিজে) তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে বিধ্বস্ত হলে প্রাণ হারান ৪৯ জন। নিহত যাত্রীদের মধ্যে ৪৩ জন ছিল বাংলাদেশি। ডাচ পরামর্শক সংস্থা ‘টু ৭০’ ও এ্যাভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক (এএসএন) বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
যদিও প্রাথমিকভাবে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানা যায় নি। কারণ তা তদন্তসাপেক্ষ। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যাপারগুলো চিহ্নিত করার জন্য যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, আমরা আশা করবো, ওই কমিটি যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। তবে ফ্লাইট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের দিক থেকে কোনো ভুলভ্রান্তি ছিল না বলেই মনে করছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে ইউএস বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে, ক্যাপ্টেনের কোনো প্রবলেম আমরা আসলে খুঁজে পাইনি। ইউএস–বাংলার ড্যাশ–৮ কিউ৪০০ মডেলের বিমানে তিনি ১৭০০ ঘণ্টা ফ্লাই করেছেন। বাংলাদেশের এভিয়েশনে ৫০০০ ঘণ্টার উপরে কাজ করেছেন। কাঠমান্ডু এয়ারফিল্ডে শতাধিক ল্যান্ডিং ওনার আছে। এয়ারফিল্ড, এয়ারক্রাফট ওনার জন্য নতুন কিছু না। আমাদের মনে হয় না, এখানে ক্যাপ্টেনের কোনো ভুলভ্রান্তি আছে।’ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কী–আশা করি যথাযথ তদন্তে তা বের হয়ে আসবে। অবহেলাজনিত কিংবা পুরাতন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। গত কয়েক বছরে আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের বহর বড় হয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি দেশের অভ্যন্তরে ও আশপাশের দেশগুলোতে যাত্রী পরিবহনে যুক্ত। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে প্রায় প্রতিদিন ওঠানামা করে নানা দেশের বিমান। ছোটখাটো দুর্ঘটনা মাঝেমধ্যে হয় বটে, কিন্তু কাঠমান্ডুতে আমাদেরই একটি বেসরকারি কোম্পানির বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেটা মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক।