সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কপালে একের পর এক জওয়ানদের আত্মহত্যা ভাঁজ ফেলছে । গত দেড় বছরে অন্তত ৯ জন জওয়ান আত্মঘাতী হন। পরিসংখ্যানটা সেনা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। গত শনিবার সকালেই শ্রীনগরের সোনওয়ার এলাকায় কর্মরত সিআরপিএফ-এর ৭৯ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল প্রুখা সুখদেব সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। ঘটনাটি সেনা ছাউনির ভেতরেই ঘটে। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান প্রুখা। তার ঠিক দিন কয়েক আগে ৭ মার্চ বুধবারের সকালে কুপওয়ারার হান্দোয়ারা এলাকায় একই ঘটনা। ৩০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্য বীরেন্দ্র সিংহও সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। কুপওয়ারার লাঙ্গাটে ছাউনির সদস্য ছিলেন তিনি।

তার আগের দিন কুপওয়ারারই লোলাবের ওয়ার্নভে ছাউনিতে আর একজন জওয়ান সার্ভিস রিভলভারের গুলিতে শেষ করে দেন নিজেকে। রাজস্থানের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী সেই জওয়ান নায়েক শঙ্কর সিংহও প্রাণ হারান ঘটনাস্থলে।

সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যা বা সহকর্মীকে খুন করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কাশ্মীরে এমনটা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা বেড়ে যাওয়ায় উঠছে প্রশ্ন। গত বছর অনেকটাই বেশি ছিল এই সংখ্যা। ২০১২-১৫ সালের মধ্যে ১২টি এমন ঘটনা ঘটেছিল। ব্যতিক্রম ২০০৬। শুধু এক বছরেই ২৩টি এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের স্পর্শকাতর এলাকায় জঙ্গি দমন বাহিনী ভিক্টর-এ থাকা শীর্ষ সেনা অফিসার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা বিষয়টা দেখতেই পাই না। প্রশিক্ষণ, চাপ নেওয়ার কৌশল নিয়ে নানাবিধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু তার পরও এমন ঘটনা ঘটছে, যা আমাদের চেষ্টাকেই ঠাট্টা করছে।’
বাহিনীর অফিসারদের একাংশ আত্মহত্যা বা সহকর্মীদের প্রাণনাশের পেছনে মানসিক চাপ, কর্মক্ষেত্রে নিদারুণ অবস্থা, বাড়ি যাওয়ার জন্য অপ্রতুল ছুটি ও ঊর্ধ্বতন অফিসারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া— এই সব কারণকেই দায়ী করেছেন। তবে অন্য মতও আছে। জঙ্গি দমন এলাকায় ‘কিলো বাহিনী’র জেনারেল অফিসার এ কে সিংহ যেমন বলছেন, ‘নিয়মিত যোগাসন, ধ্যান সবই করানো হয় জওয়ানদের মানসিক চাপ দূর করতে। তা ছাড়াও মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিং করিয়েও ফল মেলে।’

তবু আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপে কেউ কেউ বাধ্য হন এবং এটা সেনার বড় সমস্যা, মানছেন এ কে সিংহ। তার কথায়, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি ব্যাপারটা যাতে অত দূর না গড়ায়। তবে আমরা কাজের চাপটা বুঝতে পারি। বাড়ির চাপ বা ব্যক্তিগত চাপের দিকটা সব সময় সামলানো যায় না।’

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের পাশাপাশি আত্মহত্যার জন্য বাহিনীর মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের দিকেও কেউ কেউ আঙুল তুলছেন। কয়েকজন ঊর্ধ্বতন অফিসার এ জন্য দায়ী বলে তাদের ধারণা।
এক অফিসার বলছেন, ‘ছুটির আবেদন ক্রমাগত বাতিল করা (বিশেষত জরুরি পরিস্থিতিতে) বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অথচ শীর্ষ স্তরের অফিসাররা যথেচ্ছ সুবিধা ভোগ করেন।’

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031