বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা ভুল করেছেন বলে মনে করেন ।
সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ে এক টক শোতে এ কথা বলেন জাফরুল্লাহ। এ সময় জাফরুল্লাহর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘খালেদার জামিনের বিষয়ে সরকারের হয়তো এদিক ওদিক একটু করতে পারে, তার চেয়ে আমি কিন্তু বিএনপির আইনজীবীদের দায়ী করব।’
‘তাদের (বিএনপি) এতো আইনজীবী, এতো কিছু আছে, ৮ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার রায়ের তারিখ, সেখানে ধরেই নিতে হবে তোমাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। অন্যদিন ১১টায় কোর্টে যেতেন, ওই দিন দেড়টায় গেলেন। অনেক দেরিতে তিনি (খালেদা জিয়া) কোর্টে গেলেন।’
‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমি পড়ি, যেখানে এই সমস্ত মামলায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাওয়া, নয়টার সময় হাজির হয়েছেন তিনি। কারণ সে (বিচারক) তো কনভিকশন দেবেন, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সকালে রায় দেবেন, বিকালে ডিস্ট্রিক জজের কাছে জামিন নিয়ে আসতেন।’
“খালেদা জিয়ার মামলায় তাদের একটা ব্যর্থতা ছিল। আট তারিখে তার সাজা হলো, তারা (আইনজীবীরা) কেন রবিবারের মধ্যে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করতে পারলেন না? আইনজীবীর তখনই উচিত ছিল, ‘মাননীয় আদালত পুরো রায় পরে শোনান আমাদের’। তাদের বলা উচিত ছিল, ‘৬৩২ রায় পুরোটা পড়েন এবং আমাদের রায়ের কপি দেন’।”
‘বিএনপির আইনজীবীরাই অনেক লম্বা সময় নিলেন, তারা ১৩ দিন সময় নিলেন হাইকোর্টে আসার জন্য।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপির আইনজীবীদের উচিত ছিল রায়ের সঙ্গে ফাইলটা পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এখানে আমি মনে করছি বিএনপির আইনজীবীরা এটা ভালোভাবে হ্যান্ডেল করে নাই। ১৫ দিন নেওয়াটা এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া উচিত বলেও মনে করেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘জামিনটা একজন আসামির অধিকার। ফাঁসির আসামিকেও জামিন দেয়া হয়েছে। এরকম একাধিক ঘটনা ব্যারিস্টার মঈনুলের বইতে লেখা আছে। বি এ সিদ্দিকীর (১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি যিনি টিক্কা খানকে শপথ পড়াতে অস্বীকার জানিয়েছিলেন) আমল থেকে সিনহার আমল পর্যন্ত অন্তত কয়েকটা ঘটনা উল্লেখ আছে ওই বইতে।’
বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি না দেয়ারও সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘পুলিশের আর একটা কাণ্ড বিএনপিকে মিটিং করতে দিল না। কোনো রিজন জানাবেন না এটা তো হতে পারে না। কেন আপনি মিটিং করতে দেবেন না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে?’
‘পত্রিকায় খবর বের হলে পুলিশ হ্যাভ বিন ইনফরমড। পুলিশ এসে বলবে যে, ভাই এই করতে পারবেন এই করতে পারবেন না। পথ ঘাট ব্লক করবেন না। কিন্তু নামতে দেব না আপনাকে? পুলিশের দায়িত্ব নয় রাজনৈতিক কাজ করা। এই জায়গাগুলিতে সংস্কার দরকার। তা না হলে কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন কিন্তু আমাদের জীবনে শান্তি আনবে না।’
টক শোর উপস্থাপক জিল্লুর রহমান এর আগে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা ছিল, জামিন হলেও তড়িঘড়ি করে কুমিল্লার মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হলো। সব মিলিয়ে বেগম জিয়ার জামিনে বের হয়ে আসতে পারবে কি না? নির্বাচন তিনি করতে পারবেন কি না? কেননা অনেকগুলো মামলা ঝুলে আছে।’
সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির বলেন, ‘আদালত খালেদা জিয়াকে তিন, চারটা কারণে জামিন দিয়েছে। ওনার শারীরিক অসুস্থতা, দ্বিতীয়ত. ওনার বয়স, তৃতীয়ত. ওনার ব্যাকগ্রাউন্ড এবং চতুর্থত. ওনি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না। সে কারণে আমাদের দেখতে হবে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদক কী জন্যে আপিল করছে, কীভাবে আপিল করছে।’
‘কুমিল্লা আদালতের বিষয়টা যদি এখানে নিয়ে আসে, এটার সঙ্গে এটাকে জড়ানোটা ঠিক হবে না। এটা আলাদা একটা কেস, ওইটা আলাদা একটা কেস। সেটাকে আইনানুগভাবেই দেখতে হবে।’
‘মামলার ক্ষেত্রে কোনো রকম রাজনীতিকরণ করা উচিত না। জুডিশিয়াল প্রসেসস হ্যাজ টু বি এবাভ পলিটিকস এবং সে কারণেই জুডিশিয়াল প্রসেসে এখন পর্যন্ত সরকার দৃশ্যমান কোনো হস্তক্ষেপ করে নাই, আমি দেখি নাই।’