চার কিশোর এবার অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের মতো অপরাধের ঘটনায় ধরা পড়েছে। তারা সকলে স্কুল–কলেজে পড়–য়া ছাত্র। শুধুমাত্র মুক্তিপণ আদায় করতে বারো বছরের শিশু মেহেদী হাসান মিশকাতকে অপহরণ করেছিল কিশোরের দল। মিশকাত শুভপুর মোড়ের সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। এর আগেও অপরাধে জড়িত কিশোরের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসপার। বন্ধুকে হত্যা করতে যাবার পথে ধরা পড়ায় পাঁচলাইশ থানার একজন এএসআইকে গুলি করেছিল দুই কিশোর।
সদরঘাট থানার পরিদর্শক (ওসি) নেজাম উদ্দিন জানান, মুক্তিপণ আদায় করতে শিশু মিশকাতকে অপহরণ করে চার কিশোর। স্কুলশেষে বাড়ি ফেরার পথে তাকে কৌশলে অপহরণ করা হয়েছিল শনিবার সন্ধ্যায়। অপহরণে জড়িত একজনকে চিনে ফেলায় মিশকাতকে গলায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ফাঁস দেয়ার চেষ্টাওা করা হয়। মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে মারা গেছে মনে করে ফেলে চার অপহরণকারী পালিয়ে যায়। মিশকাতের বাবা আবদুল জলিল জানান, তিনি একজন ব্যবসায়ী। শিপ ব্রেকিংয়ের মালামাল বিক্রি করেন। ছয় ছেলে–মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পশ্চিম মাদারবাড়ি ডিটি রোড এলাকায় থাকেন। মিশকাত শুভপুর মোড়ের রাহাত সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। প্রতিদিনের মতো শনিবার সকাল আটটায় মিশকাত স্কুলে চলে যায়। স্কুল ছুটির পর প্রাইভেটশেষে রাত সাড়ে আটটায় বাসায় ফেরার পথে শুভপুর মোড়ের রাহাত সেন্টারের সামনে থেকে অপিসহ চার কিশোর কথা বলতে বলতে কৌশলে মিশকাতকে কলেজিয়েট স্কুলের উত্তর–পশ্চিম পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং গলায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ইতিমধ্যে মুখ থেকে ফেনা বের হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে মারা গেছে মনে করে মিশকাতকে ফেলে চার কিশোর পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মিসকাতের জ্ঞান ফিরলে অনেকটা মুমূর্ষু অবস্থায় কোনমতে বাড়িতে গিয়ে মা–বাবার কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলে। ইতিমধ্যে অপহরণকারী চার কিশোর মিসকাতের মা–বাবার কাছে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে দশ লাখ টাকা দেয়ার ফাঁদ পেতে চার কিশোরকে গতকাল রবিবার ভোরে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো : পুর্ব মাদারবাড়ির কামাল গেট এলাকার মাহজবুবুর রহমানের ছেলে মুক্তাদির রহমান (১৮), ধনিয়ালা পাড়ার জাকির হোসেনের ছেলে শাকিল (১৮), কদমতলি পোড়া মসজিদ লেনের আবদুল গফুরের ছেলে এ আল কিবরিয়া ওরফে তুষার (১৮) ও পশ্চিম মাদারবাড়ির শওকত আনোয়ার মিঠুর ছেলে শাহিদ আল মাঈন ওরফে সিয়াম (১৮)। এদের মধ্যে অপি সেন্ট্রাল স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। শাকিল ইসলামীয়া কলেজে প্রথম বর্ষ, তুষার সিটি কলেজে প্রথম বর্ষ ও সিয়াম রেলওয়ে স্কুলে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। অপহৃত মিশকাতের বাবা জানান, মুক্তাদির রহমান অপি দীর্ঘদিন তাদের বাসার পাশের গলিতে ভাড়া বাসায় ছিল। তিন চারমাস আগে বাসা বদল করে তারা পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় চলে যায়। অপিকে মিশকাত আগে থেকেই চিনতো। তাই ডাকতেই অপির সাথে গিয়েছিল বারো বছরের মিশকাত।
বাসায় ফেরার পর মিশকতা জানিয়েছে, তাকে প্রথমে বেধড়ক মারধর করে। এরপর তার মায়ের মুঠোফোনে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শিশু মিশকাত অপির কথা বাসায় বলে দেবে এ চিন্তা করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় রশি পেঁচিয়ে ফাঁস দেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে মারা গেছে মনে করে মিশকাতকে ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, মিশকাত অজ্ঞান হয়ে গেলে চার কিশোর ধারণা করেছে হয়তো মারা গেছে। সেখান থেকে পালিয়ে তারা মিশকাতের মায়ের মুঠোফোনে যথারীতি মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা দাবি কর। বিষয়টি জানার পর অপহরণকারী চার কিশোরের সাথে কৌশলে কথা বলে মুক্তিপণের দশ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলা হয়। টাকাভর্তি ব্যাগ শনিবার রাতে মাদারবাড়ি এলাকার নির্দিষ্ট এলাকায় রেখে ওঁৎ পেতে থাকে পুলিশ। রবিবার ভোরে চার কিশোর টাকা মনে করে ব্যাগটি নিতে আসলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ওসি বলেন, কলেজিয়েট স্কুল সংলগ্ন নার্সারির পাশ থেকে মিশকাতকে বাঁধার কাজে ব্যবহার করা প্লাস্টিকের রশি, তোয়ালে ও তার স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চার কিশোর জানিয়েছে মুক্তিপণ আদায় করতে তারা শিশু মিশকাতকে অপহরণ করেছিল। মিশকাত বর্তমানে মা ও শিশু হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031