শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্নফাঁসের ছয়টি বড় ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে পেরেছেন । এর মধ্যে প্রশ্নপত্র ছাপা থেকে বিতরণ পর্যন্ত নানা ‘ত্রুটি’, ভুল সিদ্ধান্ত এমনকি সামাজিক মাধ্যম তদারকিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির ‘ব্যর্থতা’ও রয়েছে।

মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে অবশ্য মন্ত্রী গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে জানাবেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় প্রতিটি বিষয়েই এমসিকিউ এর প্রশ্ন আগেভাগেই এসেছে সামাজিক মাধ্যমে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পারায় তীব্র সমালোচনা উঠেছে শিক্ষামন্ত্রীর। তার পদত্যাগ বা বরখাস্তের দাবিও উঠেছে জাতীয় সংসদে।

বৈঠকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে লিখিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। এতে তিনি যে ছয়টি বিষয় তুলে ধরেছেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হলে এর উৎস এবং পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত করা প্রয়োজন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কয়েকটি বড় ক্ষেত্র রয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন প্রশ্নপত্র ছাপার পদ্ধতিতেই গলদ আছে। তিনি লেখেন, ‘বিজি প্রেসে প্রশ্ন কম্পোজ, এডিট, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ জনের মত কর্মী প্রশ্ন দেখতে পারে। তারা প্রশ্ন কপি করতে না পারলেও স্মৃতিতে ধারণ কারা অসম্ভব ব্যাপার নয়। ৩/৪ জনের একটি গ্রুপের পক্ষে এভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব হতে পারে।’

দ্বিতীয় যে বিষয়টি মন্ত্রী উল্লেখ করেন, সেটি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোয় ত্রুটি। মন্ত্রীর মতে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি/ নিরাপত্তা হেফাজত হতে প্রশ্ন গ্রহণ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হলেও কর্মকর্তার যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না।

শিক্ষামন্ত্রী তৃতীয় যে বিষয়টির কথা উল্লেখ করেন, সেটির দায় একান্তভাবেই তার নিজের মন্ত্রণালয়ের। তিনি মনে করেন, পরীক্ষা নিতে অতিরিক্ত কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে যার ব্যবস্থাপনা করার মত পর্যাপ্ত জনবল নেই।

মন্ত্রীর মতে, কেন্দ্রগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল কেন্দ্র হতে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত। এসব কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠাতে সচিবরা ৩০ মিনিটের আগেই প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হচ্ছেন।

চতুর্থ যে বিষয়টির কথা মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন সেটি হলো স্মার্টফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। তিনি লেখেন, ‘পরীক্ষার্থী কিংবা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গুটিকয়েক শিক্ষক/ কর্মচারীর কারণে গোটা প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে।’

পঞ্চমত. পরীক্ষা শুরুর আগেই সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও বেশি তৎপরতা চান মন্ত্রী। তার মতে, ‘এটা পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্ব হতে করা সম্ভব হলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’

গোয়েন্দা সংস্থার লোকবল ও অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত স্বল্পতার কারণেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘দুষ্কৃতিকারীদেরকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারর ও শাস্তি প্রদান করতে না পারায় অন্যরাও অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না।’

সবশেষে মন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে বিটিআরসির নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন। তিনি লেখেন, ‘বিটিআরসি কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আপলোডকারীদের চিহ্নিত করতে পারা যাচ্ছে না এবং সন্দেহজনক একাউন্ট বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

শিক্ষামন্ত্রী যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার নিজের মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র এবং টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই বৈঠকে অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং আইসিটিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার নিজেও উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031