‘আমাদের মধ্যে একটা ধারণা জন্ম নিয়েছিল, ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয় বা ইন্টারনেট প্রশ্ন ফাঁস করে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন। এর উত্তর খুবই সিম্পল। না, ইন্টারনেট, ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপ প্রশ্ন ফাঁস করে না। প্রশ্ন ফাঁস হয় মানুষের হাতে।’
বুধবার সচিবালয়ে সভাকক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের দুটি স্মারক ডাকটিকিট সিলমোহর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চলমান এসএসসি পরীক্ষাসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে এই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারণ করায় কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। পরীক্ষা চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এমনকি ইন্টারনেট বন্ধের সুপারিশ পর্যন্ত আসে। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
ইতোমধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে ব্যাপক তৎপর হযেছে। তবুও প্রশ্ন ফাঁস কোনোক্রমেই থামছে না। বিষয়টি নিয়ে সরকার ও দেশবাসী গভীর উদ্বেগে রয়েছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘প্রথমত প্রশ্ন ফাঁস কেমন করে হয় তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়গুলো বলতে পারবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটা ভালো বলতে পারবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার সেটি হলো প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা যে পরীক্ষা গ্রহণ করি, যেভাবে প্রশ্ন প্রস্তুত করি এবং প্রশ্ন করা থেকে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো হয় এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন যাবৎ এমনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে তাতে যত লোকের সঙ্গে এটা যুক্ত সেখানে নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা বড় কঠিন। এটা সত্যি সত্যি দুরূহ কাজ।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আর যখন প্রশ্ন ফাঁস হয় তখন ইন্টারনেটের ওপর দায়টা আসে। কারণ ইন্টারনেটে আমাদের রাষ্ট্রীয় তথ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য প্রচার করি। প্রচারের দায়টা যদি প্রযুক্তির ঘাড়ে দিতে চান তাহলে এ দায়টা হয়তো কিছুটা দেয়া যেতে পারে।’
আইসিটি মন্ত্রী বলেন, ‘বস্তুতপক্ষে আমি যেটা বিশ্বাস করি, যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়, প্রশ্ন তৈরি হয় এবং যে পদ্ধতিতে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি আমার মনে হয় এটা নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। আমরা যদি নতুন করে না ভাবি তাহলে এ প্রচলিত পদ্ধতি যা শত শত বছরের প্রাচীন পদ্ধতি। ডিজিটাল যুগে এটা অচল।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আর যদি ডিজিটাল প্রযুক্তির কথা বলেন নিঃসন্দেহে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধান করার উপায় আমাদের হাতে আছে। প্রয়োগ করাটা হ্যাঁ ওটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ শিক্ষার্থীতো দুই চারজন নয়। লাখ লাখ শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আমরা প্রযুক্তিগতভাবে এ রকম ব্যবস্থা করতে পারি যার মাধ্যমে কারও পক্ষে প্রশ্ন ফাঁস করার কোনো সুযোগই থাকবে না।’ তবে ইন্টারনেট বন্ধ করা বা ফেসবুক বন্ধ করা এটি সমাধান নয় বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমানে যে আইডি থেকে প্রথমে প্রশ্নটি ছড়াচ্ছে সে আইডি ট্রেচ করে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা যে কাউকে ট্রেস করতে পারি। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখতে হবে প্রযুক্তিতে সরাসরি যেভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ আছে তেমনি প্রযুক্তিতে ফাঁকি দেয়ার রাস্তাও আছে।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেমন ধরুন, কারোও কাছে একটা রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস থাকে তাহলে তাকে খুব সহজে শনাক্ত করতে পারবো। কিন্তু সে যদি ভিপিএন ইউজ করে তাহলে তাকে শনাক্ত কঠিন হবে। ফলে আমাকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা যেমন চলছে তেমনি আমার মধ্যে প্রযুক্তির সক্ষমতার প্রশ্ন আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে যদি বলেন বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে ২০০৯ সাল থেকে। আর এ সময়ের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেভাবে আমাদের ইন্টারনেটের নিরাপত্তার বিষয়টি গড়ে উঠেনি।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘তবে ভালো দিক হচ্ছে, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন আইনগত অবকাঠামো থেকে শুরু করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা তৈরি করা, ফরেনসিক সিস্টেম প্রস্তুত করা এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাশ হলে তখন আমরা এখানে একটা এজেন্সি স্থাপন করা যাবে। এসব কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা সরকারের গড়ে উঠছে।’