প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা থেকে কীভাবে সরিয়ে আনা যায় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে , অপরাধীদের শুধু শাস্তি নয়, তাদের সংশোধন করে সুষ্ঠু জীবনে ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব। রোববার সকাল ১১টায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কয়েদিদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীদের বিষয়গুলো মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অপরাধীকে আমরা শাস্তি দেবো। কিন্তু শুধু শাস্তি নয়, তাদের অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন মোবাইলের যুগ। অনেকে চুরি করে মোবাইল ব্যবহার করে। কারাগারে পাবলিক ফোন ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। কয়েদি যাতে অন্তত মাসে একবার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারে। তাহলে সে মানসিকভাবে শান্তি পাবে, স্বস্তি পাবে। এতে হয়ত অপরাধের কাজ থেকে দূরে থাকবে। কারণ, দীর্ঘদিন আপনজনদের না দেখার কষ্ট আমাদের (বঙ্গবন্ধু পরিবারের) জানা আছে। শেখ হাসিনা বলেন, ৬৬ সালে আগরতলা মামলায় গ্রেফতারের পর ছয় মাস বঙ্গবন্ধু কোথায় ছিলেন,কীভাবে ছিলেন,তা আমরা জানতাম না। ৫ মাস পরে ষষ্ঠ মাসে কোর্টে উঠানোর পর আমরা দেখলাম। তিনি বলেন,এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শাস্তি দিলাম, এটাই শেষ নয়। আমি মনে করি তাদের অপরাধ প্রবণতা থেকে সরিয়ে আনতে হবে।অপরাধীদের সংশোধন করে সুষ্ঠু জীবনে ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব।
জেলখানার সুযোগ-সবিধা বাড়ানো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এখানে বিদ্যুৎ দেবো। তবে প্রতিটি বিল্ডিংয়ে সোলার প্যানেল বসাতে হবে।বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধারও থাকতে হবে।জেলাখানায় (কর্মরত)যারা থাকেন,তাদের চাকরিকালীন সমস্যা আছে। আমরা সেটা দেখবো। কারাগারে অফিসারও বাড়াতে হবে। হাসপাতাল আরও বড় করতে হবে। ছোটখাটো হাসপাতাল দিয়ে হবে না। অন্তত ২ তিনশ বেডের হাসপাতল হতে হবে। নিরাপত্তার দিকেও নজর দিতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিরোধীতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা এদেশের মানুষের আছে। জানি না এটা কীভাবে আসে! কয়লার ট্রলার ডুবে গেছে নদীতে, বলছে, পানি নাকি সব দূষিত হয়ে গেছে! আমি জানি না এটা কতটা সার্টিফাইড। অথচ কয়লা দিয়ে পানি দূষণমুক্ত হয়। আমরা কয়লা দিয়ে দূষণমুক্ত করে পানি খেতাম। তিনি বলেন, এই যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে বাধা দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণহানি হলো।আমি জানি না, উদ্দেশ্যটা কী? আমি বলতে পারবো না। ৯৬’র আমলে রংপুরেও এমন বিরোধীতা হয়েছে। অথচ আমরা সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি,কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
যতদ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দিয়েছি, সেটা উন্নয়নের জন্য দরকার। আমরা সার্বিভাবে সারা দেশে উন্নয়ন করছি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। উল্লেখ্য, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম মডেল কারাগার। নবনির্মিত এ কারাগারে এক সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার ৫৯০ জন পুরুষ বন্দি রাখা যাবে। পুরুষ কারাগারটির পাশে নতুন একটি নারী কারাগার নির্মাণাধীন রয়েছে।সেটি নির্মাণ শেষ হলে ২৭০ নারী বন্দি থাকতে পারবেন। প্রায় সোয়া ২০০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কারাগারটি। একই সঙ্গে বদলে গেছে কারা স্থাপনার লাল রং।