লন্ডনি স্বামীর লোকজন তার পেটে লাথি দিয়েছিল।বিয়ের পর সন্তান গর্ভের আসাই যেন পাপ হলো বিশ্বনাথের রাজনা বেগমের। মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঠের রুল দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন রাজনা। প্রথমে তাকে বিশ্বনাথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
ডাক্তাররা বলেছেন, সন্তান রক্ষা করা যাবে না। এ কারণে শেষে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়। রাজনা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু কাহিল হয়ে পড়েছেন অনেকটা। মা হওয়ার স্বপ্ন তার কেড়ে নিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গতকাল মুঠোফোনে কথা হতেই কেঁদে ফেলেন রাজনা বেগম। বলেন, ওরা আমার পিতার বাড়ি এসেও মারধর করে। আমার সন্তান নষ্ট করে দিয়েছে। রাজনার পিতা জহির উল্লাহও তেমন সম্পদশালী না। রাজনার আগে আরো একটি বিয়ে হয়েছিল। ওই সংসারে তার বনিবনা হয়নি। শেষে মেয়েকে ঘুরে তুলে নেন। এরপর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিয়ে দিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মতিনের সঙ্গে। লন্ডন প্রবাসী আব্দুল মতিনের ওপর তাদের তেমন ক্ষোভ নেই। সব ক্ষোভ পরিবারের অপর সদস্যদের ওপর। জহির উল্লাহ জানালেন, আব্দুল মতিনের সঙ্গে তার বিয়ের কিছু দিন পর মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। মতিনের প্রথম স্ত্রীর পুত্র চাইছেন না- রাজনার ঘরে কোনো সন্তান হোক। সন্তান হলে তো সে সম্পত্তির ভাগ চাইবে। এ কারণে পারিবারিকভাবে চাপ আসতে থাকে রাজনার ওপর। বারবার তাকে সন্তান নষ্ট করার চাপ দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু রাজনা সেটি মানছিলেন না। রাজনা সন্তান রাখতে স্বামী আব্দুল মতিনের কাছেও কাকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু পরিবারের অন্যদের কথায় সায় ছিল মতিনের। রাজনা কোনোভাবেই যখন গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি হচ্ছিলেন না তখনই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের ঝড়। স্বামীর বাড়িতে থাকতেই রাজনাকে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছেন জহির উল্লাহ। এরপর সালিশ বিচারের মাধ্যমে তারা রাজনাকে নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের বাড়ি। ওখানে এসেও তারা রাজনার ওপর নির্যাতন চালায়। এই নির্যাতনে রাজনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মাথা ফেটে যায়। দুটি সেলাই দিতে হয়েছে। আর তলপেটে লাথি দেয়ার কারণে রাজনার রক্তপাত শুরু হয় এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার গর্ভপাত ঘটানো হয়। জহির উল্লাহ জানান, রাজনাকে মারধরের পরও তারা সালিশ বৈঠকের তোয়াক্কা না করেই ডিভোর্স দেয়। কিন্তু ডিভোর্স ও মারধরের ঘটনার পর আর শান্ত থাকতে পারেননি। বিশ্বনাথ থানায় তারা দুটি মামলা করেছেন। এ মামলা দুটি চলমান। তদন্ত চলছে। এদিকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে কয়েক দিন আগে রাজনাকে তার পিতার বাড়ি বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউনিয়নের চরচন্ডি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনো অসুস্থ রাজনা। গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় রাজনার স্বামী বিশ্বনাথের দশঘর নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মতিনের পক্ষ থেকে সমঝোতার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রাজনার বিয়ের কাবিন ছিল আড়াই লাখ টাকা। এই কাবিনের টাকা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজনার পরিবারের সদস্যরা। এলাকার মানুষ বসে যে সিদ্বান্ত দেবেন সেটি তারা মানবেন বলে জানান রাজনার পিতা। এদিকে বিশ্বনাথের আব্দুল মতিনের ভাই আলম আলী মানবজমিনকে জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, লন্ডনি আব্দুল মতিন এখন বয়োবৃদ্ধ। তার দেখভালের জন্য পরিবারের সদস্যরা ওই বিয়ে করিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর বৃদ্ধ স্বামীর প্রতি রাজনার কোনো খেয়ালই ছিল না। বরং স্বামীকে একা রেখে সে রাতের পর রাত মোবাইল ফোনে অন্যদের সঙ্গে আলাপ করতো। এছাড়া তার আচরণেও উগ্রভাব ছিল। তিনি দাবি করেন, রাজনার গর্ভের সন্তান আসা নিয়ে কোনো বিরোধ হয়নি। বরং রাজনার বেপরোয়া স্বভাবের কারণেই তাকে আইনমতো তালাক দেয়া হয়েছে। মারধর করা তো প্রশ্নই ওঠে না। উল্টো রাজনার পরিবার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে দাবি করেন তিনি।