ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির । দীর্ঘ ছয় বছরেও এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালত থেকে একের পর এক সময় নেয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো সেটি জমা হয়নি।
এত দিনেও এ মামলার বিচার না হওয়ায় হতাশ সাগর-রুনির পরিবার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি। সেদিন তাদের একমাত্র ছেলেশিশু মেঘও বাসায় ছিল, তবে সে বেঁচে যায়।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে খুনিদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরেও এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই দেয়া হয়নি।
কয়েক হাত ঘুরে মামলার তদন্তকাজ এখন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কাছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ৫৪ বার সময় নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি ধার্য দিনে আবার সময় চাওয়া হলে আগামী ১৩ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় দেয় আদালত।
বর্তমানে র্যাব সদর দপ্তরের তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিউদ্দিন আহমেদ সাগর-রুনি মামলার তদন্ত করছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলাটির আলামত পরীক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে কিছু তথ্য এসেছে। তদন্ত চলছে। এ মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত ও বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে রুনির ভাই নওশের আলম রোমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিচার কী চাইব। সরকার এ মামলার বিচার করতে চায় না। র্যাব তদন্ত করছে না।’
সাগর-রুনি হত্যার বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন সাংবাদিকরা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ আজ সাগর-রুনির মৃত্যুবার্ষিকীর দিন সভা, সেমিনার ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
সাগর-রুনি খুন হওয়ার পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরে বাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসের বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে দেয়া হয়।
এই হত্যাকাণ্ডে আটক আটজন হলেন- রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুন কবির, ডা. নিতাই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হাত-পা বাঁধার রশিসহ বিভিন্ন আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন ২১ জন এবং গ্রেফতার ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনাও পাঠায় র্যাব। সেই পরীক্ষার রিপোর্টও পেয়েছে তারা।