পুলিশের সামনে প্রকাশ্য অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছোড়া হলেও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। সিলেটের রাজপথে অস্ত্রধারীদের নিয়ে ‘অস্বস্তি’ বাড়ছে। বরং এসব অস্ত্রধারীদের সঙ্গে নিয়ে সিলেটে বিএনপির মোকাবিলা করেছে পুলিশ। এই মহড়ার পর থেকে সিলেটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অস্ত্রধারীরা। তাদের অনেকেরই নাম ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। তবে পুলিশ বলছে- ঘটনার সময় অস্ত্রধারীদের কর্মকাণ্ড তাদের নজরে আসেনি।
পরে তারা জেনেছেন। এসব অস্ত্রধারীর সম্পর্কে খোঁজখবর
নেয়া হচ্ছে। সিলেটের রাজপথে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার অনেক পুরনো। এক সময় রাজপথে দাপিয়ে বেরিয়েছে ছাত্রদলের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। ওয়ান ইলেভেনের সময় পুলিশ ও র্যাব ছাত্রদলের ওইসব অস্ত্রভাণ্ডার তছনছ করে দেয়। এরপরও ছাত্রদলের বিভিন্ন গ্রুপের কাছে এখনো অস্ত্র রয়েছে। আর বর্তমান সরকারের সময়ে রাজপথে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এর মধ্যে বেশি অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে সিলেটের টিলাগড় ও এমসি কলেজ এলাকায়। অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে এমসি কলেজের ক্যাম্পাস দখল ও পাল্টা দখলের ঘটনা ঘটেছে অনেক বার। আবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমন হত্যাকাণ্ডের সময় প্রকাশ্য অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এসব অস্ত্রের ব্যবহার ও অস্ত্রধারীদের নিয়ে প্রায় সময় রীতিমত আতঙ্ক ছড়ায় সিলেটে। পুলিশ ও র্যাব সতর্ক হলেও অস্ত্রধারী গ্রেপ্তারে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অস্ত্র উদ্ধারেও নেয়া হয়নি ব্যবস্থা। ১লা জানুয়ারি সিলেটে ছাত্রদলের মিছিলে অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। ৪ঠা জানুয়ারি টিলাগড় ও এমসি কলেজে হয় অস্ত্রের ব্যবহার। এতদিন রাজপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অগোচরে হলেও বৃহস্পতিবার হয়েছে একেবারে চোখের সামনেই। অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে সিলেটের রাজপথে গুলি করতে দেখা গেছে। এসব অস্ত্রের গুলিতে আহত হয়েছেন কেউ কেউ। একই ভাবে ওই সময় ছাত্রদলের মিছিল থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। ফলে বৃহস্পতিবার সিলেটের রাজপথ পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সিলেটের রাজপথে চারজন অস্ত্রধারীকে দেখা গেছে। এর মধ্যে দু’নলা বন্দুক নিয়ে যিনি উপস্থিত ছিলেন তিনি মুনিম আহমদ বলে জানা গেছে। এই অস্ত্রটি তাদের পারিবারিক মালিকানাধীন অস্ত্র। এটির লাইসেন্স রয়েছে। মুনিম নিজেই ওই অস্ত্র নিয়ে জেলা পরিষদের সামনে গুলি করতে দেখা গেছে। আবার কখনো অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। যখন মুনিমসহ অন্যরা অস্ত্র প্রদর্শন করে গুলি ছুড়ছিলেন তখন পুলিশ কুশিয়ারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে অবস্থান করছিলো। ফলে পুলিশের অবস্থান থেকে তার দূরত্ব বেশি ছিল। তবে- ওই সময় আওয়ামী লীগের কোনো সিনিয়র নেতাকে সেখানে দেখা যায়নি। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ছিলেন সেখানে। মুনিম মাথায় কালো রঙ্গের একটি হেলমেট পরে ওই অস্ত্র নিয়ে নেমেছিলেন। কালো স্যুট ও নীল শার্ট প্যান্ট পরা আরো এক যুবককে দেখা যায় পিস্তল হাতে। প্রায় সময় ওই যুবক পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করছিলো। একই সময় পুলিশও বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে গুলি ছুড়ছিলো। কাটা রাইফেল হাতে নিয়ে সিলেটের রাজপথ কাঁপিয়েছেন দুই যুবক। এর মধ্যে একজনের মাথায় ছিল লাল হেলমেট ও অপরজনের ছিলো কালো হেলমেট। তারা দুইজন জেলা পরিষদের সামনে থেকে মিছিলের অগ্রভাগে এসে গুলি করতে দেখা যায়। ওই দুই যুবকের পরনে শার্ট ও জিন্সপেন্ট ছিল। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব অস্ত্রধারীদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সিলেটে তাদের নিয়ে তোলপাড় চলছে। তবে- অস্ত্রধারীদের মাথায় হেলমেট থাকায় কাছের লোকজন ছাড়া তাদের কেউ চিনেনি। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন জানিয়েছেন- অস্ত্রধারীদের খুঁজছে পুলিশ। তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এদিকে- বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সিলেটে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকে। এছাড়া আরো ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশ এ মামলা দায়ের করে। ছাড়াও এ মামলায় আরো ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। কোতোয়ালি থানার এসআই অনুজ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি জানান- পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। থানার সেকেন্ড অফিসার ফয়াজ উদ্দিন ফয়েজকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে সিলেটে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। রায় ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আদালতের অভ্যন্তর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে শটগানের গুলি ছোড়ে। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল নগরীর বন্দরবাজার এলাকা থেকে এগিয়ে আসলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। ভাঙচুর হয় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা ১৫৫ রাউন্ড গুলি, একটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে চার কর্মীকে আটক করা হয়।