তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়সার ৩২ ধারা সাধারণ নাগরিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের আপত্তি থাকলে অভিযোগ বা বক্তব্য থাকলে তথ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে তা জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন ।
মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চূড়ান্তভাবে সংসদে পাস হওয়ার আগে এটা পরিমার্জনের সুযোগ আছে। তাই এটা নিয়ে যদি কারো কোনো বক্তব্য থাকে সেটা আমাদের কাছে দিলে আমরা এটা নিয়ে সংশ্লিষ্টমহলের সঙ্গে কথা বলব।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন-অ্যাটকোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
ইনু বলেন, ‘যেকোনো নাগরিক অথবা গণমাধ্যমের যেকোনো কর্মী এবং অ্যাটকো কর্তৃপক্ষকে বলব ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো কিছু যদি আপনাদের কাছে উদ্বেগজনক মনে হয় বা যদি মনে করেন ডিজিটাল এই আইনটির কোনো অংশ পরিমার্জন করা দরকার। এ ব্যাপারে আপনারা লিখিত বক্তব্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে দেবেন।’
‘এ বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করবে আইনটি চূড়ান্ত করার সময় আপনাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার জন্য।’
গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হওয়া আইনটি পাসের জন্য সংসদে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। তবে অনুমোদনের পর থেকেই খসড়া আইনের ৩২ ধারা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই ধারাটির কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে সমালোচনা করে আসছেন সাংবাদিকরা।
এই ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থার কোন গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার নেটওয়ারর্কে ধারণ, প্রেরণ, সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেটা হবে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’
এই ‘গুপ্তচরবৃত্তির’ সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর জেল বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা। কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য বলেছেন, এই আইন সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি আর প্রতিবেদন তৈরি করতে গোপনে ভিডিও করলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না।
তথ্যমন্ত্রীর এই মতবিনিময়ের দিন সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে করা মিট দ্য প্রেসে আইনমন্ত্রী এমনও বলেছেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার জন্য যদি কোনো সাংবাদিককে ৩২ ধারায় অভিযুক্ত করা হয় তাহলে আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বিনা ফিতে তার জন্য আদালতে দাঁড়াব।’
সংসদে পাসের আগে ‘ন্যায়সঙ্গত কারণ থাকলে দরকার’ হলে জনস্বার্থে ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুরক্ষায় ৩২ ধারায় একটি সাব সেকশন অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন একই ধরনের কথা। বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা মন্ত্রিপরিষদে উঠেছে। এখন এটি সংসদীয় কমিটিতে যাবে। এরপর এটি সংসদে যাবে। এরপর চূড়ান্ত হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা, নারীদের নিরাপত্তা, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য এই আইনটি প্রনয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রিসভা। তারপরেও আমি বলব এটা নিয়ে যদি আপনাদের কোনো উদ্বেগ থাকলে অবশ্যই আমরা আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
ব্যয় কমিয়ে কীভাবে চ্যানেলগুলোকে লাভজনক করা যায় সেটা নিয়েও আলোচনা হয় সেখানে। আর এ বিষয়ে অ্যাটকোকে বলেছি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতেও বলেছেন মন্ত্রী।
ইনু টেলিভিশন মালিকদের বলেন, ‘দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে আপনারা দেশজ সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ করবেন।’
‘সংস্কৃতির বিকৃতি যেন না হয় সেটাও দেখবেন। একই সঙ্গে বাঙালিয়ানার চর্চা করবেন। যেন বাংলিশ না হয়। বাংলা চর্চাটা যেন ভাল হয়।’
এর বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী আদর্শ, ‘জঙ্গি সন্ত্রাস’, ‘আগুন সন্ত্রাস’ বা যুদ্ধাপরাধী, খুনি চক্র, সাম্প্রদায়িক চক্র এবং ধর্মান্ধ চক্রের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সংবিধানবিরোধীদের বর্জন করতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান ইনু।
বৈঠকে অ্যাটকোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান, মোজাম্মেল বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।