পচা আঙ্গুর বিক্রির প্রমাণ মিলেছে কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজারের দোকান স্বপ্নে । তবে ক্রেতার জহুরির চোখে ধরা পড়ে যাওয়ার পর তিনি সব প্রমাণ ধারণ করেছেন ভিডিওতে। আর সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েও দিয়েছেন।
আর এরপর স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ সেই ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার বাড়িতে চকলেট পাঠিয়ে মন নরম করার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার রাতে মিরপুরের প্রশিকা মোড়ে স্বপ্নের মিরপুর-৬ নম্বরের ব্রাঞ্চে রেপিং করা আঙুর কিনতে গিয়ে পচা আঙ্গুর ধরা পড়ে। পরে ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন ব্রাঞ্চের লোকজন। কিন্তু ততক্ষণে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দেয়া হয়।
তাইয়েবা মীম নামে একজন ক্রেতার ওয়ালে থেকে ভিডিওটা পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনাও দেয়া হয়েছে।
তাইয়েবা মীম লিখেছেন, ‘কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজার! কতো বড় ধোঁকাবাজি লুকিয়ে আছে ওদের এই শ্লোগানে তা আজ নিজের চোখে দেখলাম। প্রায়-ই পলিথিনে মোড়ানো বিভিন্ন ফল ও সবজি দেখা যায় স্বপ্ন শপে। কিনে কয়েকবার প্রতারিত হয়েছি। পচা আঙ্গুর, পেয়ারা, পচা পেঁপে ও সবজিসহ অন্যান্য কাঁচামাল পচে গেলেই কেবল ওরা পলিথিনে মুড়িয়ে বিক্রি করে।’
‘আজ এমনই একটি আঙ্গুরের প্যাকেট খুলে দেখা যায়, ওপরে কয়েকটি ফ্রেশ, কিন্তু নীচে পচা ও ফাঙ্গাস পড়া দুর্গন্ধযুক্ত আঙ্গুর।’
মীম জানান, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণে ‘স্বপ্নের’ লোকজন বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাধা এড়িয়েই ভিডিও করা হয়।
এ সময় ওই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের এসে বকুনি দিয়ে বলেন, ‘নষ্ট ফলগুলো যারা প্যাকেট করেছ, তাদের চাকরি থাকবে না।’
তবে মীমের এতে বিশ্বাস ছিল না। তিনি লেখেন, ‘মালিকের নির্দেশ ছাড়া এই অন্যায় কোন কর্মচারী করতে পারেন না। অবশেষে সব পচা ফল আমাদের সামনেই ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন….. আমার মনে হয় ওদের এই প্রতারণা চলতেই থাকবে।’
এই ভিডিওটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। পোস্টের নীচে ‘স্বপ্ন’ থেকে পণ্য কিনে ঠকেছেন, এমন বহু মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
তবে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়ে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষের। পোস্টটি ডিলিট করে দিতে ব্রাঞ্চের পাশাপাশি প্রধান কার্যালয় থেকেও মূল পোস্টকারীকে বারবার এটি ডিলিট করার অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে মিরপুর- ৬ নম্বর শাখার ব্যবস্থাপন ইশার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার একাধিক নম্বর থেকে চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। সবশেষ তাকে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার কথা জানিয়ে এসএমএস করলেও তিনি সাড়া দেননি।
গত দেড় যুগে নগরবাসীর বাজার করার অভ্যাস পাল্টে দিয়েছে সুপার শপগুলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান, দামদরের ঝক্কি নেই, এক জায়গায় অনেক ধরনের নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ঘরের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র পাওয়া যায় বলে সুপার শপগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজধানীর পাশাপাশি এই ধরনের দোকান এখন বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতেও চালু হচ্ছে।
তবে প্রায়ই সুপার শপগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল পণ্য বিক্রি, ওজনে কারচুপিসহ নানা অভিযোগ উঠে। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে নামিদামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা, কারাদণ্ডসহ সাজাও দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে স্বপ্ন জরিমানার মুখে পড়েছে বারবার।
এর আগেও নানা সময় মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্য, পচা মাছ বিক্রির দায়ে জরিমারা গুনেছে স্বপ্ন। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখার প্রমাণ পেয়ে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর স্বপ্ন’র বনানী শাখাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অভিযানে।
একই বছরের ৮ নভেম্বর পচা মাছ বিক্রির দায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন স্বপ্নের একটি শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে।
২০১৭ সালের ৮ মার্চ একই অভিযোগে রাজধানীর ধানমন্ডির গ্রিন রোডে স্বপ্ন’র শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রির অভিযোগে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ স্বপ্ন’র উত্তরা শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঢাকার পাশাপাশি স্বপ্নের সিলেট শাখাও পচা মাংস বিক্রির দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা গুণেছে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।
অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট স্বপ্ন’র খিলগাঁও শাখাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয় বিএসটিআইয়ের অভিযানে।
কেবল পচা, মেয়াদোত্তীর্ণ বা অবৈধ পণ্য বিক্রি নয়, অতিরিক্ত দাম রাখার দায়ে গত ১৮ ডিসেম্বর স্বপ্ন’র মালিবাগ শাখাকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা।
অবশ্য কেবল স্বপ্ন নয়, আগোরা, মীনা বাজারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানার মুখে পড়ছে বারবার।
ভেজাল পণ্য বিক্রির অভিযোগে ১০ বছর আগে করা দুটি মামলায় গত ২৮ ডিসেম্বর প্রসিদ্ধ চেইন সুপারশপ আগোরার চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিমকে এক বছর করে কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অবশ্য সেদিনই জামিন পাওয়ায় আগোরার চেয়ারম্যানকে কারাগারে থাকতে হয়নি।