মাছটি কত বড় সে বিষয়ে অবশ্য সুস্পষ্ট তথ্য নেই। মুক্তিযুদ্ধের দুই বছর আগে ঢাকার বাজারে একটি ইলিশ মাছের দাম ছিল এক টাকা চার পয়সা।

১৯৬৯ সালে একটি বাজারের ফর্দ মিলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যাতে ইলিশ মাছ কিনতে এই পরিমাণ খরচের কথা লেখা আছে।

একটি পারিবারিক আয়োজনের জন্য বেশ কিছু বাজার করতে হয়েছে ওই ফর্দ তৈরি করা ব্যক্তির। আর এই সূত্রে তখনকার পণ্যমূল্য সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। এই ফর্দটি আজহার উদ্দিন নামের এক লোকের।

পণ্যমূল্য বরাবরই বাংলাদেশে আলোচনার বিষয়। ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলো বরাবর সরকারকে আক্রমণ করেছে পণ্যমূল্য নিয়ে। কিন্তু এটাও অসত্য নয় যে, প্রতি বছরই পণ্যমূল্য বেড়েছে, বাজারের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখা যায়নি কখনও।

ওই ফর্দ ঘেঁটে দেখা যায়, গত ৫০ বছরে চালের দাম বেড়েছে ৫০ গুণ। ডালের দাম বেড়েছে ১০০ গুণ। চিনির দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ গুণ, মুরগির দাম বেড়েছে অন্তত দেড়শ গুণ। আর নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লবণের দাম, প্রায় আড়াইশ গুণ।

তবে পণ্যমূল্য বাড়লেও এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে, বেড়েছে মানুষের ভোগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক বলছেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি সব সময় খারাপ না। কারণ এতে উৎপাদন লাভবান হয়। আবার আমাদের দেশে কৃষি পণ্যের উৎপাদক যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিম্ন আয়ের বা দরিদ্র্য মানুষ, পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে তারাও লাভবান হয়েছে।

মুলত এ কারণেই সরকার মূল্যস্ফীতির হার শূন্যে রাখতে চায় না। গত এক দশক ধরেই সরকার প্রতি বাজেটেই মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করেছে ৫ থেকে ৮ শতাংশ।

১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশের বেশি। সেটি এখন কমে ২২ শতাংশের কিছু বেশি।

১৯৬৯ সাল তো বটেই ৯০ দশকেও বাংলাদেশে একটি বড় অংশের মানুষ অভুক্ত থাকত, সেই পরিস্থিতি এখন দেখা যায় না বললেই চলে।

১৯৯৬ সালেও সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ। অর্থাৎ পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পরও মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়েছে।

তবে কেউ যেন কৃত্রিম চাহিদা বা যোগানের তারতম্য ঘটিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সে দিকেই নজর রাখার তাগাদা দিয়েছেন অর্থনীতি শাস্ত্রের ওই শিক্ষক।

আবার পণ্যমূল্যের চেয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আর কর্মসংস্থানের বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

ওই ফর্দ অনুযায়ী দেখা যায়, ১৯৬৯ সালে এক সের চালের দাম তখন ছিল ১ টাকা ৩৯ পয়সা। আর বর্তমানে এই চালের দাম ৪৫ থেকে ৭০ টাকা।

এক কেজি চিনির দাম ছিল ২ টাকা ৫৬ পয়সা। আর এখন এক কেজি কিনতে গুণতে হবে লাগে ৭০ টাকা।

আর ওই সময় একটি দেশি মোরগের দাম ছিল ৩ টাকা ৫ পয়সা। আর এখন একটি দেশি মোরগের দাম পড়বে ৬০০ টাকারও বেশি।

ওই সময় মাপের একক ছিল সের। সেটি এখনকার কেজির ‍তুলনায় কিছুটা কম।

ওই সময় এক সের ডালের দাম ছিল এক টাকা ১২ পয়সা। আর এখন এক সের ডালের দাম ৯০ টাকা।

আর ৪৯ বছর আগে এক সের পেঁয়াজের দাম ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা। আর এখন তা ৫০ থেকে ৬৫ টাকা।

ওই সময় লবণের সের ছিল ১৫ পয়সা, এখন লবনের কেজি ৩৮ টাকা।

ওই সময় শুকনা মরিচের দাম ছিল এক টাকা ২৫ পয়সা, এখন তার দাম ১৫০ টাকার মতো।

আর রসুনের দাম ছিল সেরপ্রতি ১৯ পয়সা, এখন সেটির দাম ৮০ টাকা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম সারা ‍বিশ্বেই বেড়েছে এই সময়। উৎপাদন খরচ বেড়েছে, বেড়েছে সরবরাহ ব্যয়, বাজার চেইনেও পরিবর্তন এসেছে। উৎপাদন থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত আগে যত হাত বদল হতো, এখন তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। এর প্রতিটি পর্যায়েই মুনাফা করার প্রবণতাও বেড়েছে।

এই বাজার বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এই সময়ে পণ্যমূল্য বেড়েছে, কিন্তু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে আরও বেশি। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে এই, যে দামটা বাড়ছে সেটা কি প্রান্তিক মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে কি না।

‘যেমন গত বছর চালের দাম যেভাবে বেড়েছিল সেটা কিন্তু প্রান্তিক মানুষের সীমার বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তারা দরিদ্রসীমার বাইরে চলে যাচ্ছিল। এখানেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনার আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ড. সায়মা হক বলেন,  পণ্যের যৌক্তিক দাম কে নির্ধারণ করবে? বাজারে চাগিদা ও যোগানের ভিত্তিতেই এই দাম নির্ধরিত হয়।

‘তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়া সব সময় খারাপ না। যারা উৎপাদক তাদেরও ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আছে।’

সব ক্ষেত্রে কি উৎপাদক ন্যায্যমূল্য পায়?- এমন প্রম্নে ড. বিদিশা বলেন, ‘সেটার জন্য আমাদের মধ্যসত্ত্বভোগীরা দায়ী। তারা কৃষককে ঠকায়। কোনো জিসিনের দাম ৬০ টাকা হলে কৃষকে তারা দেয় ২০ টাকা। বাকি ৪০ টাকা মধ্যস্বত্বভোগী উপভোগ করে। এখানে সরকারে অনেক কিছু করণীয় আছে।’

সরকারের কী করণীয় থাকতে পারে?- এমন প্রশ্নে অর্থনীতির এই শিক্ষক বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সরকার কৃষককে প্রণোদনা দিতে পারে। তারা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031