তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কারচুপি ও কারসাজি ভোট বলেছে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়ের পাঁচ তিন আগে রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভার শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। পরে খালেদা জিয়াও একই কথা বলেন।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেও বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের শর্ত দিচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দাবি, নির্দলীয় সরকারই একমাত্র সুষ্ঠ নির্বাচন করতে পারে।

অথচ নির্বাহী কমিটির সভায় বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুল দুই জন্য তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

ফখরুলের অভিযোগ, ‘বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি ও কারসাজির মাধ্যমে’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।

পরে বেগম খালেদা জিয়াও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে পাতানো ও কারচুপির নির্বাচন বলেন।

অবশ্য তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে কারচুপির নির্বাচন সম্ভব হলেও নির্বাহী কমিটির সভাতেই খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ‍তুলে ধরেন।

বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। জনগণ যেন ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সে রকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপি সরকারের আমলে মাগুরা এবং ঢাকার একটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ সংসদের বিরোধী দলগুলো।

আর দাবি না মেনে বিএনপি ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে সংযোজন করে তারা পদত্যাগ করে ওই বছরেরই ১২ জুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।

এর আগে ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ার পর সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ এনেছিল।

আবার বিএনপি ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধেও কারচুপির অভিযোগ আনে।

এরপর ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ার পরও কারচুপির অভিযোগ তোলে।

২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কে এম হাসানকে মানবে না জানিয়ে আন্দোলনে নামে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি করতে বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়েছিল বিএনপি। আর আন্দোলনের মুখে তিনি তত্ত্বাবধায়কের প্রধান হবেন না জানিয়ে দেয়ার পর সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন।

কিন্তু ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন করতে পারেননি ইয়াজউদ্দিন। তার ১১ দিন আগে জরুরি অবস্থা জারি হয়। আর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়। প্রায় দুই বছর তারা ক্ষমতায় থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দেয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে জিতে এবং বিএনপি পায় ৩০টির আসন।

আর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা অবস্থায় উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। এরপর সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান করে আওয়ামী লীগ।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031