ঘুষ বা স্পিড মানির দৌরাত্ব কমেছে বলে প্রমাণ নেই রাজকর্মচারীদের বেতন শতভাগ বাড়িয়েও । বাজারেও লেগেছে আগুন। বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়িয়েছেন, বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। স্কুলের ভর্তি ও টিউশন ফি বাড়ছেই, লাগাম যে কার হাতে বলা মুশকিল!
চালের দাম আর পেঁয়াজের ঝাঁজ নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাইছি না। তবে এই তীব্র শীতে একটু উষ্ণতা এনে দিয়েছে সবজি বাজার, যেন অগ্নিকুণ্ড… তবে আগুন পোহাতে গিয়ে গেলো কয়েকদিনে প্রাণ হারিয়েছেন কম করে হলেও ১৩ জন। আর ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট এখন এই আগুন পোহাতে গিয়ে পুড়ে যাওয়া রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
নির্বাচনের বছরে চলছে দাবি উত্থাপন ও আদায়ের মহোৎসব। মাঝখানে দ্বীনের মেহনতে থাকা ভাইদের একাংশের রাজপথ দখল করে জনদুর্ভোগ ছিল বাড়তি পাওনা।
সাত কলেজ অধির্ভূক্তি ও বাতিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল। ক্ষমতাসীন ছাত্রদের উপর ভর করে প্রশাসন স্বস্তির ঢেঁকুর তুলতে না তুলতেই নারায়ণগঞ্জ রণক্ষেত্র।
সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অব্যবস্থাপনার প্রদর্শনে হাজার হাজার চাকরি প্রার্থী পরীক্ষার হলেই বসতে পারেনি। পরীক্ষা বাতিলের দাবিকে আমলে না নেয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে পাথে নামে প্রার্থীরা। অবশেষে ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটি পিছু হটে ও পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
পক্ষকাল প্রেসক্লাবের সামনে তীব্র শীত উপেক্ষা করে অবস্থান ও অনশন করে আশ্বাসে বাড়ি ফিরেছেন এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকেরা। তাদেরই একজন অসুস্থ হয়েবাড়িতে গিয়ে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়েছেন ইতিমধ্যে।
রাজপথ দাবি আদায়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ও পরিক্ষিত একটি পদ্ধতি, তবে এই সব দাবি দাওয়া টেবিলে বসে আলোচনা করে সমাধান করাটাই শ্রেয়। রাজপথ শক্তি প্রদর্শনের স্থান হতে পারে না।
আমরা যারা সরকারের খাইও না পড়িও না তারা কি এমন করি? যারা বেসরকারি চাকরি করি, হয়তো আমাদের মেধা কম, জনগণের ট্যাক্সের উপর নির্ভরশীল রাজস্ব খাত থেকে বেতন নেই না বা বলা ভালো পাই না। আমাদের চাকরি আজ আছে কাল নেই , আর এই নিয়ে অনশনেও বসি না। চাকরি চলে গেলে কষ্ট বুকে চেপে পরেরদিনই নব উদ্যোমে পথে নামি জীবিকার সন্ধানে। বেতন যা পাই যোগ্যতা অনুযায়ী, কোন আফসোস নাই।
উপসচিব পদ মর্যাদার প্রশাসনের কর্মকর্তা যারা তারা সুদবিহীন ঋণ পেয়েছেন গাড়ি কেনার জন্য, সাথে মেইন্টেনেন্সের জন্য মাসে পাবেন অর্ধ লক্ষ টাকা। সমমানের হলেও অপরাপর ক্যাডারের রাজকর্মচারীরা নাখোশ, দাবি আদায়ে তারাও তলে তলে ফন্দি আঁটছেন নিশ্চিত। আমরা বেসরকারি কামলারা কিন্তু আমলাদের মতো কোন প্যারা সরকারকে দেই না।
আমরা কাজ না করলে, গাফিলতি কিংবা প্রতিষ্ঠানের লোকসান হলে নিয়োগকর্তা কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়েই চাকুরিচ্যুত করেন। আদালতেও যাই না, বড় উকিল ধরার পয়সা কই?
রাজস্ব ভাণ্ডার পূর্ণ করতে আমরা বিনাবাক্যে ধার্য করা ট্যাক্স দিয়ে এইবার স্মার্ট কার্ড পেয়েছি, কী কাজে আসবে তা এখনো জানি না। আমাদের দেয়া করের টাকা নিজেদের অর্জন দেখিয়ে রাজস্ব বিভাগের বাহাদুর কর্মীরা শুনেছি এই বাবদ মোটা ইনসেনটিভ পেয়ে থাকেন। আরে বাহ্….
পোশাক শ্রমিকদের শ্রমে ঘামে অর্থনীতি চাঙ্গা, তাদের বেতন কাঠামো নিয়ে এক বছর হাতে থাকতেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেইজন্য সাদুবাদ পাবে শিল্প মালিক ও সরকার। তবে তাদের কারখানার অশোধিত তরল পরিবেশ ও নদী নালার বারোটা বাজিয়েই যাচ্ছে, এই নিয়ে কারো মাথাব্যাথা আছে বলে মনেও হয় না।
আমি তাদেরই একজন যার সাথে জাতীয় আয় কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদের পরিসংখ্যান কখনোই মিলবে না। অগুনতি আমজনতার একজন আমি, বিশেষ কোন দাবি নাই। সরকারি চাকরি চাইছি না, বেতন বাড়াতে মামা বাড়ির আবদারও করছি না। বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য তদবিরও করতে চাইছি না। ফুটপাথে হকার বসুক কিংবা হোন্ডা উঠুক, সম্পদের অসম বণ্টন, কর ফাঁকি, খুন, গুম, রাহাজানি, ধর্ষণের মহামারি কিংবা আসছে নির্বাচনের উতলা হাওয়া কিছুই আমাকে স্পর্শ করে না ইদানীং। তাই কোনো প্রকার দাবি অথবা সুযোগও চাইছি না।
তবে নিজের কাজটুকু করে যাওয়া মতো একটা কর্মপরিবেশ আর সেই সাথে পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে পথচলার একটা নিরাপদ রাজপথ কামনা করি।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা পবিত্র সংবিধানে উল্লেখিত এই অধিকারটুকুই চাইছি…
লেখক: উন্নয়ন ও অধিকারকর্মী