একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে ভেবেছেন নবাব হয়েও ফয়জুন্নেছা সে সময় নিজেকে। তার চিন্তায় ছিলÑ তিনি নিজেও পুরুষশাসিত সমাজে একজন বঞ্চিত নারী। তিনি বলতেনÑ আমি কেন নারীদের জন্য করবো না? কারণ আমার সবকিছু থাকলেও আমি একজন নিঃস্ব নারী। কেননা, আমি শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। সোমবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘নবাব ফয়জুন্নেছা: বাঙালি সমাজের আলোকবর্তিকা’ শীর্ষক সেমিনারটির যৌথ আয়োজক জাতীয় জাদুঘর ও পিএনএফ ট্রাস্ট।
জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছার এসব বক্তৃতায় তৎকালীন সমাজের নারীদের অবস্থাই ফুটে উঠেছে। নবাব ফয়জুন্নেছা নারী শিক্ষার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি যখন যেখানে গিয়েছেন তখনই মানবকল্যাণের কথা বলেছেন। সেমিনারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছা নিজেকে মানবসন্তান পরিচয়টা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি শিক্ষার বিস্তারে যে কাজগুলো করেছেন তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তিনি যে শুধু নারীর শিক্ষা দরকার বলে সেগুলো করেছেন তা কিন্তু নয়। তিনি সমাজের একজন বিশিষ্ট, দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষ হিসেবে তার কী করার দরকারÑ সেটিই তিনি করেছেন। তিনি ছিলেন অন্ধকারের মধ্যে একটি আলো। এসময় তিনি বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছাকে কী করে জানবো তার ব্যবস্থা করা দরকার। পাঠ্যসূচিতেও কিভাবে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেটিও ভাবা দরকার। তা না হলে আমরা তাদের কিভাবে জানবো? আর তার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িও কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সেটিও এখনই আমাদের ভাবা দরকার। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনে তার ভূমিকাগুলো আমাদের পাঠাগারগুলোতে তুলে ধরা উচিত। এবং নতুনদের তা জানার ব্যবস্থা করা দরকার। তিনি অনেক দিক থেকে আজকের যুগে অনেক প্রাসঙ্গিক। তার জীবনীর মধ্যে আমাদের উজ্জীবিত করার বিষয় আছে। আমাদের সকলের উচিত তাকে কিভাবে আমরা মনে রাখবো সে ব্যবস্থা করা। সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছা ইংরেজ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বেগম উপাধি বর্জন করেছিলেন যুক্তিসঙ্গতভাবে। ইংরেজ সরকার বাধ্য হয়ে তার উপাধি পরিবর্তন করেছিল। তাকে নবাব উপাধিতে ভূষিত করেছিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, নারীর অগ্রগতির জন্য অবদান রাখায় নবাব ফয়জুন্নেছাকে আমাদের স্মরণ করা উচিত। এমন কিছু করার দরকার যেন বছরে অন্তত একবার তাকে স্মরণ করা হয়। এসময় মন্ত্রী নিজের অবস্থান থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।