ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন যে অভিযোগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে সেই যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার মধুর কেন্টিনে ছাত্রলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনদের মোর্চা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন জাকির।
ছাত্রলীগের মিত্র জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র সমিতি এবং জাতীয় ছাত্র ঐক্যর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিও জানানো হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যাপানে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও নিয়ে যে তুলকালাম হয়, তার পেছনে আছে মেয়েদের নিপীড়নের অভিযোগ।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত ১৫ জানুয়ারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ চড়াও হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন মেয়েকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করা হয়।
এরপর থেকেই মূলত নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যাপানে মাঠে নামে বামপন্থীরা। তাদের দাবি, ওই ‘নিপীড়নে’ জড়িতদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম সুমন দাবি করেন, ১৫ জানুয়ারির কর্মসূচিতে ‘ঝামেলা’ হয়েছে দুই দল সাধারণ শিক্ষার্থীর মধ্যে।
সুমন বলেন, ‘১৫ তারিখ একদল সাধারণ শিক্ষার্থী ভিসি স্যারকে ঘেরাও করেছে, আরেক দল সাধারণ শিক্ষার্থী খবর পেয়ে সেখানে জমায়েত হয়। সেখানে সাধারণ শ্খিক্ষার্থীর দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়।’
কিন্তু সেদিনের ভিডিও ফুটেজে মামামারি ও মেয়েদের কটূক্তিতে বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে- সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের পর সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘যদি ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকে, থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘এই ঘটনায় যারা জড়িত সবার বিচার করা হবে…কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সেই যেই দলের হোক না কেন।’
এ সময় জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন বলেন, ‘এই ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক, যেই করুক, তার বিচার হবে।’
এর আগে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ অভিযোগ করেন, ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরা ও ভাঙচুরে বামপন্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল ছাত্রদল এবং শিবিরের নেতা-কর্মীরাও।
সোহাগ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করতে, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে উপাচার্যকে অবরোধ করেছিল। যদিও তাদের দাবি ছিল নিপীড়নকারীদের বিচার, তবে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করা।’
উপাচার্যের ওপর সেদিন যেভাবে হামলা হয়েছে, সেটি গত ১০০ বছরে হয়নি বলেও দাবি করেন সোহাগ।
এ সময় একজন সাংবাদিক ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সে সময়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চান।
২০১৬ সালের পহেলা জুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রকাশিত স্মরণিকায় একজনের লেখায় বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমানকে উল্লেখ ছিল। লেখকের বিচার দাবিতে উপাচার্যের গাড়িতে হামলা হয়।
ওই হামলা তবে কারা করেছিল- এমন প্রশ্ন করে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের কাছ থেকে জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনকে দেখিয়ে বলেন, ‘ওনি উত্তর দেবেন।’
তবে জবাব দেননি সুমনও। প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, ‘আপনি প্রশ্ন করেছেন, আপনি আমার চেয়ে ভাল জানেন সেইদিন কারা উপাচাযের গাড়িতে হামলা করেছিল।’
পাঁচ দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা
উপাচার্যের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে চার দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এর মধ্যে আছে ৩১ জানুয়ারি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ ছাত্র সমাবেশে, ৬ ফেব্রুয়ারি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ মানববন্ধন, ৭ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি পেশ।
এ সমং পাঁচটি দাবিও জানানো হয়। এর মধ্যে আছে:
১. ২৩ জানুয়ারির ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবেদন পেশ।
২. সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সাথে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা এবং দোষীদের শাস্তি।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের সষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অবিলম্বে পরিবেশ পরিষদ চালু।
৪. অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে যে সমস্যার দ্রুত সমাধান।