ডেস্ক রিপোর্ট : নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে নিয়ে আসার পেছনে মূল কলকাঠি নেড়েছিলেন দুই চীনা নাগরিক। এদের একজনের নাম শু হুয়া গাও ও অপরজনের নাম ডিং ঝি জি। মঙ্গলবার ফিলিপাইনের সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন অর্থ লোপাটের ঘটনায় আরেক সন্দেহভাজন ব্যবসায়ী কিম ওং।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করে। গত সপ্তাহে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম ডেইলি ইনকোয়ারার অর্থ লোপাটের এ তথ্য প্রকাশ করে। সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সরানো হয় রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার পাঁচটি অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে এই অর্থ ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে পাচার হয়ে যায় বলে ইনকোয়েরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর নাম উঠে আসে। অর্থ পাচারের এ ঘটনার তদন্তে কাজ করছে ফিলিপাইনের সিনেটের ব্লু রিবন কমিটি। গত সপ্তাহে কমিটির কাছে দেগুইতো জানান, ব্যবসায়ী কিম ওংয়ের আদেশে তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো খুলেছিলেন। পরে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য কিম ওংকে নির্দেশ দেয় ব্লু রিবন কমিটি।
মঙ্গলবার শুনানির আগে সাংবাদিকদের ওং বলেন, ‘দুই বিদেশি নাগরিক ফিলিপাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে একজন ফিলিপাইনে আসা-যাওয়া করতো এবং সে পেশায় ক্যাসিনো জাঙ্কেট। তদন্তকারীদের সাহায্য করতে আমি তাদের নাম ও পাসপোর্টের ফটোকপি সিল করা খামে কমিটির কাছে জমা দেব।’তবে সিনেটের সদস্য জুয়ান পন্স এনরিল জানিয়েছেন, ওং যে দুজনের নাম জানিয়েছেন, এরা হলেন শু হুয়া গাও ও ডিং ঝি জি। এরা দুজন রিজাল ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ স্থানান্তর করেছিল।
ওং জানিয়েছেন, গাও প্রায় আট বছর ধরে ক্যাসিনোতে জাঙ্কেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। আর ডিং ম্যাকাওতে ব্যবসা করতো। ডিংয়ের সঙ্গে গাওই তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সোলাইরির ক্যাসিনোতে বিশাল অংকের অর্থ হেরে যাওয়ার পর গাও তার কাছ থেকে ৪৫ কোটি পেসো ঋণ নিয়েছিল। ওই সময় আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিটের শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতো তার শাখায় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাকে। তখন তিনি দেগুইতোর কাছে গাওয়ের নাম উল্লেখ করেন। ২০১৫ সালের মে মাসে মিডাস হোটেলে দেগুইতোর সঙ্গে দেখা করেন গাও ও কিম ওং। গাও তখন আরসিবিসি ব্যাংকে ডলারে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে চান বলে দেগুইতোকে জানান। তবে দেগুইতো জানান, তাদের ব্যাংকে কোম্পানি অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে পাঁচ ব্যক্তিকে প্রয়োজন। জবাবে গাও জানান, তাহলে তার পক্ষে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাটা মুশকিল হয়ে পড়বে। দেগুইতো গাওকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি দেখবেন।
ওং বলেন, ২/৩ দিন পর দেগুইতো তাকে ফোনে পাঁচটি ডলারের অ্যাকাউন্ট খুলতে ২ হাজার ৫০০ ডলার ব্যাংকে জমা দিতে বলেন।
ওং আরো জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি গাও তাকে জানান যে, ডিং ম্যাকাওতো তাদের ক্যাসিনো বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন এবং তিনি ম্যানিলায় অর্থ বিনিয়োগ করতে চান। পরের দিন সোলাইরি হোটেলে ওং, গাও ও ডিং দেখা করেন । এসময় দেগুইতোকে ফোন করে ওংকে গাও ও ডিং ওই পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন। ওই দিন দুপুর ১টায় দেগুইতো ফোন করে ওংকে জানান, ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে ৮১ মিলিয়ন ডলার এসে জমা হয়েছে। ওং তখন দেগুইতোর কাছে জানতে চান, তিনি সোলাইরি হোটেলে অর্থগুলো নিয়ে আসতে পারবেন কি না। ওই দিনই সন্ধ্যা ৭টার দিকে সম্ভবত দেগুইতোর অনুরোধেই বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের মাইকেল বাউতিস্তা হোটেলে ৮ কোটি পেসো নিয়ে আসেন। পরে আরো ২ কোটি পেসো নিয়ে হোটেলে আসেন মায়া সান্তোস দেগুইতো।
ওং জানান, তিনি প্রথম দফায় বাউতিস্তার বাড়ি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি পেসো ও ৩০ লাখ মার্কিন ডলার নিয়ে আসেন। পরের দিনও আরো ১ কোটি পেসো ও ২০ লাখ ডলার এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি ১ কোটি পেসো নিয়ে আসেন।
ওং তার বিবৃতিতে ব্যাংকে পাঁচটি অ্যাকাউন্ট খুলতে ভুয়া কাগজপত্র জোগাড় এবং লোপাট হওয়া অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে মায়া সান্তোস দেগুইতোই সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে যা যা করার তা মায়াই করেছে।’ বাকি প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনে জমা রয়েছে বলেও জানান ওং।