হাইকোর্ট প্রশিকা ভবন বুঝিয়ে দেয়া বিষয়ে আদালতের আদেশ অমান্য করায় প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী ফারুক আহমদকে এক মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন ।
একইসঙ্গে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ ওয়াদুদের কাছে চেয়ারম্যানের কার্যালয় বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এ আদেশ প্রতিপালন করে ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার একক হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমএ ওয়াদুদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সিরাজুল ইসলামের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।
আদালতে আবেদনকারীরপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বারেক চৌধুরী, নুরুল আমীন, নুরুল ইসলাম মাতুব্বর ও মো. সোলায়মান।
কাজী ফারুকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, জেড আই খান পান্না, মাহবুব আলী এমপি, এএম আমিনউদ্দিন ও রমজান আলী শিকদার।
অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন জানিয়েছেন, হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের আবেদন করা হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৪ মে সংস্থাটির গভর্নিং বডির একসভায় চেয়ারম্যান পদ থেকে কাজী ফারুককে অপসারণ করে এমএ ওয়াদুদকে চেয়ারম্যান করা হয়।
এ সিদ্ধান্তের পরদিনই অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে মামলা করে কাজী ফারুক। একইসঙ্গে এমএ ওয়াদুদের কমিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। এ আবেদন ওইবছরের ৩১ মে খারিজ করে দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আবেদন করেন তিনি। এ আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিলে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওইবছরের ১১ আগষ্ট রায় দেন। রায়ে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেওয়া হয়। রায়ে প্রশিকা ভবনে কোনো সমাবেশ বা র্যালী না করতে কাজী ফারুকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে কাজী ফারুক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ এ আবেদন খারিজ করে দেন।
এরপর ২০১২ সালে আবার প্রশিকা ভবনে অবস্থান নেন কাজী ফারুক। পরবর্তীতে কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করেন এমএ ওয়াদুদ। কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে প্রশিকা ভবনে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এ অবস্থায় আদালত কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। রুলে কাজী ফারুককে কেন দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখা হবে না এবং কেন তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
এ রুলের ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রায় দেন। রায়ে ৭ দিনের মধ্যে এমএ ওয়াদুদকে কার্যালয় বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কাজী ফারুককে ৭ দিনের দেওয়ানি কারাদণ্ড ও ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পাশাপাশি এ আদেশ কার্যকর করে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান কাজী ফারুক। আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন। এ নির্দেশে হাইকোর্টে শুনানি শেষে গতকাল রায় দিয়েছেন। রায়ে কাজী ফারুককে একমাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দেন।