অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যেসব ব্যাংক আশানুরুপ কাজ করতে পারছে না, সেগুলোকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ।

খেলাপী ঋণকে ব্যাংকিং খাতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী এই বিষয়েও অগ্রগতির আশা করছেন।

সোমবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নরওয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরকে এসব কথা বলেন মুহিত।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কয়েক বছর আগে ছয়টি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়া নিয়েও সমালোচনা রয়েছে।

শেষ বারে অনুমোদন পাওয়া সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ফারমার্স ব্যাংক দুর্দশায় পড়ে দেশের ব্যাংক খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে বলেও সম্প্রতি সংসদীয় কমিটি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়কে। এই ব্যাংকটি আমানতকারীদেরকে টাকা ফেরত দিতে পারছে না বলেও খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

সম্প্রতি আরও তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে আবার বেশ কিছু ব্যাংকের শেয়ার পুঁজিবাজার থেকে কিনে মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে এবং বেশ কিছু ব্যাংকে পরিবর্তনের দাঁড়প্রান্তে। ব্যাংকগুলো পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘প্রটেকশন’ও চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতের মধ্যে হলমার্ক সহ নানা ঋণ কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। সম্প্রতি বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়েছে। এ নিয়ে সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরাও সমালোচনায় মুখর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ৫৮টি ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকের সংখ্যা বেশি মনে হলেও সমস্যা নেই। বর্তমানে কয়েকটি ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকের অবস্থা ভালো। এমনও হতে পারে যেসব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ সেগুলোকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেয়া হবে।’

‘আগামীতে ব্যাংকিং সেক্টরকে আরও সুশৃঙ্খল করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।’

খেলাপী ঋণের দিক থেকেও সামনের দিনগুলাতে অগ্রগতির আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এমনও শোনা গেছে, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে। বিষয়গুলো এতদিন খুব কড়াকড়িভাবে নজর দেয়া হতো না। কিন্তু বর্তমানে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও নজর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

‘মোট ঋণের বিপরীতে খেলাপির হার খুব বেশি, যা একটি দেশের জন্য খুবই খারাপ। তবে আশার কথা হচ্ছে, এক সময় মোট ঋণের ৪০ শতাংশই ছিল খেলাপি বর্তমানে তা ৯ থেকে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। আশা করছি আগামীতে আরও কমে আসবে।’

ব্যাংকগুলোর মধ্যে সরকারি ব্যাংক নিয়েই বেশি চিন্তিত মুহিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে, এর মধ্যে দুটিতে সরকার মেজর স্টেকহোল্ডার। এদের কর্মদক্ষতা খুবই কম। এখানে তারা নন পারফর্মিং লোন নিয়ে বড় সমস্যা রয়েছে।’

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও কথা বলেন মুহিত। বলেন, ‘বিদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা জন্য বিডা কাজ করছে। আমরা বর্তমানে বিনিয়োগের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছি বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতকে। বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’

আগামীতেও জনগণ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করলে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে বলেও মন্তব্য করেন মুহিত।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ডিসেম্বরের ‘খুব ফেয়ার’ হয়েছিল জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে ফেয়ার নির্বাচন হয়েছিল কিন্তু সে সময় বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ফলে জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে বিরোধী দল হিসেবে আছে।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031