এলার্ট নিউজ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্র সোহেল হত্যার মূল হোতা সহপাঠী ইব্রাহিম সোহান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সোহেলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে অমানবিকভাবে খুন করেছে সোহান। তার সহযোগী ছিল আরো ১৫ জন। হত্যাকা-ে অংশ নেয়া সকলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সোহেল হত্যার মধ্য দিয়ে কলংকিত হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
প্রিমিয়ারে এমবিএতে অধ্যয়নরত সোহান নোয়াখালীর সুধারাম থানার শালগলিয়া গ্রামের শফিক উল্লার ছেলে। নগরীর আলফালাহ গলিতে হাজী নুর আহমদ রোডের মঞ্জুর মিয়া কলোনিতে থাকে মা বাবার সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে গা শিউরে উঠা সোহেল হত্যার ভয়ংকর দৃশ্য। ফুটেজ দেখে হত্যাকা-ে অংশ নেয়া ১৬ জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী এগারোজন পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় দ্বিতীয় জানাজাশেষে শেরশাহ কবরস্থানে সোহেলকে দাফন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে দেখা যায়, মঙ্গলবার বেলা একটা এক মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় কয়েকজন যুবক সোহেলকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরো দুই তিনজন যুবক এসে সেখানে যোগ দেয়। ৪/৫ জনের বেধড়ক পিটুনির এক পর্যায়ে সোহেল মেঝেতে পড়ে গেলে যুবকদের একজন তাকে পেছন থেকে ধরে রাখে আর সোহান তার হাতে থাকা ছুরি বের করে সোহেলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। সোহেলের দেহ ক্যাম্পাসের মেঝেতে ঢলে পড়লে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সোহান।
এদিকে সোহেল হত্যার ঘটনায় ১৬ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতনামা ২০/৩৫ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সোহেলের বাবা আবু তাহের বাদী হয়ে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটায় মামলাটি দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো : রাউজানের নেয়ামত তালুকদার বাড়ির উত্তর সর্ত্তা গ্রামের মো. হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশরাফ, কক্সবাজার লাইট হাউজ এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান নিশান, রাউজানের গহিরার গিয়াস উদ্দিন হায়দার চৌধুরীর ছেলে জিয়াউল হায়দার চৌধুরী, হাটহাজারীর ধলই তালুকদার বাড়ির সামসুল আলম তালুকদারের ছেলে এস এম গোলাম মোস্তফা, ফটিকছড়ির আজাদী বাজারের আলমগীর হোসেনের ছেলে তামিম উল আলম ওরফে তামিম।
এজাহারভুক্ত পলাতক আসামিরা হলো : মূল হত্যাকারী ইব্রাহিম সোহান, রাউজানের কাজী মোয়াজ্জেম বাড়ির কাজী মো. জয়নাল আবেদীন, কক্সবাজার রামুর জোয়ারিনাইয়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে সাইফ উদ্দিন, হাটহাজারীর ধলই এনায়েতপুরের আবু তালেবের ছেলে আবু জাহের ওরফে উজ্জ্বল, পাঁচলাইশ উত্তর শুলকবহরের মহিউদ্দিনের ছেলে নিজাম উদ্দিন আবিদ, সাতকানিয়ার বাজালিয়ার আবু তাহেরের ছেলে সাইকুল মোহাম্মদ তারেক, নগরীর দেওয়ানবাজার ডিসি রোডের মৃত হাজী বদিরুল রহমানের ছেলে নুরুল ফয়সাল ওরফে স্যাম, সিইপিজেড নিউমুরিং রোডের পাটোয়ারি ভবনের বাসিন্দা জাফর উল্ল্যার ছেলে সাইফুল ইসলাম সাকিব, কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়া নালার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবু ফয়েজ, পূর্ব নাসিরাবাদ ওআর নিজাম রোডের শামছুল হকের ছেলে রাশেদুল হক ওরফে ইরফান ও সাতকানিয়ার মৈশামুড়া গ্রামের আহমদুল হকের ছেলে নাজমুল হক। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের ধারণা, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহেলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাড়াও বহিরগত বেশ কয়েকজন অংশ নিয়েছে।
গতকাল দুপুরে চকবাজার থানায় আলাপকালে সোহেলের বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আবু তাহের বলেন, সোহেল প্রিমিয়ারে এমবিএ পড়তো। আশা করেছিলাম ছেলে অনেক বড় হবে। পরিবারের সকলের ছোট হওয়ায় তাকে নিয়ে স্বপ্নও ছিল বড়। অথচ পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ছেলেকে ফিরে পাবো না তা জানি। তবে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেন মরতে পারি। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
চকবাজার থানার পরিদর্শক (ওসি) আজিজ আহমেদ বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িত রয়েছে এ ধরনের ১৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল হত্যাকারী সোহানসহ এগারোজন পলাতক রয়েছে। আশা করছি তারাও ধরা পড়বে।