বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল বাজারগুলোতে মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ট্রানশান হোল্ডিংস এর প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ব্র্যান্ড টেকনো মোবাইল। ২০০৬ সালে আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম ডুয়েল সিম ব্র্যান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করে টেকনো মোবাইল। প্রতিটি হ্যান্ডসেটে সর্বাধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানের উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ভোক্তার চাহিদা পূরণ এবং ব্যবহার সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা টেকনো মোবাইলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এবার প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে হ্যান্ডসেট নির্মাণের জন্য কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ যুক্ত এসব ফোনের দাম আমদানি করা টেকনো ফোনের দামের তুলনায় ২০ শতাংশ কম দামে মিলবে।
বর্তমানে ৫৮টিরও বেশি দেশে টেকনো মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি ও বাজারজাত করছে। বিশ্বজুড়ে নিজেদের পরিধি আরোও বিস্তৃত করতে উন্নয়নশীল বাজারগুলোতে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে প্রবেশ করেছে টেকনো মোবাইল। স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে আনার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে হ্যান্ডসেট উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাংলাদেশে টেকনো মোবাইল সংযোজন শুরুর জন্য প্রক্রিয়া চলছে। আমরা চেষ্টা করছি ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যে উৎপাদনে যেতে। আমরা গাজীপুরে কারখানা স্থাপন করছি। গাজীপুরের চৌরাস্তার পাশে ভোগরাতে টেকনোর কারখানা হবে। আমরা একটা রেন্টাল জায়গাতে ফ্যাক্টরি স্থাপন করছি। সেখানে বিল্ডিং রেডি করা আছে। আমরা শুধু ভেতরে যন্ত্রপাতি বসাবো। এসব ইকুইপমেন্ট চায়না থেকে আসছে। টেকনোলজিও চাইনিজ। মে মাস নাগাদ প্রডাকশনে যেতে পারবো।
বাংলাদেশে টেকনো হ্যান্ডসেট উৎপাদন করলে এসব ফোনের দাম কতটা কমবে? এমন প্রশ্নের জবাবে রেজওয়ানুল হক বলেন, আমরা আশা করছি বাংলাদেশে টেকনো হ্যান্ডসেট নির্মাণ শুরু করলে এই ফোনের দাম আমদানি করা টেকনো ফোনের তুলনায় ২০ শতাংশ কমে বাজারে পাওয়া যাবে।
দেশে ওয়ালটন ইতোমধ্যে মোবাইল ফোন বাংলাদেশেই উৎপাদন শুরু করেছে। সিম্পনি এবং উই উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেক্ষেত্রে টেকনো মেড ইন বাংলাদেশ ফোন তৈরি করলে ওয়ালটন, সিম্ফনি এবং উইর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আপনাদের শক্তিশালী টুলস গুলো কি? জানতে চাইলে রেজওয়ানুল হক বলেন, আমরা সব সময় কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি। কোয়ালিটিতে আমরা নম্বর ওয়ান। আমাদের গ্রাহকরা বলবে আমাদের পণ্য অন্যান্য ফোনের চেয়ে ভালো। আমরাই প্রথম বাংলাদেশে ১০০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট দিচ্ছি। ১০০ দিনের মধ্যে কোনো ফোনের সমস্যা হলে সেই ফোন আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে নতুন ফোন তুলে দিচ্ছি। তাই আমরা মনে করি প্রডাক্টের কোয়ালিটি দিয়েই আমরা এগিয়ে থাকবো।
বাংলাদেশের বাজারে, নিজেদের প্রসার বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে মানসম্পন্ন পণ্য, ব্যবহার অভিজ্ঞতা এবং বিক্রয়োত্তর সেবা প্রতিটি বিষয়ের উপর সমান গুরুত্ব দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।২০১৭ সালের জুলাই থেকে টেকনো মোবাইল বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। দেশে এই ফোন বিক্রি, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে আসছে ট্রানশান হোল্ডিংস এর সহায়ক প্রতিষ্ঠান ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেড।
টেকনো মোবাইল বিশ্বাস করে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত বাজারে মোবাইল হ্যান্ডসেটের জন্য চাহিদার যে নতুনত্ব তৈরি হচ্ছে তা পূরণ করতে সক্ষম টেকনো মোবাইল।
হ্যান্ডসেটের কোয়ালিটি নিয়ে গ্রাহকদের চিন্তামুক্ত রাখতে, বিক্রয়োত্তর ১৩ মাস পর্যন্ত সার্ভিস ওয়ারেন্টির পাশাপাশি প্রতিটি স্মার্টফোনে ১০০দিন পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা দিচ্ছে টেকনো মোবাইল যা প্রদান করবে ট্রানশান হোল্ডিংস এর এক্সক্লুসিভ সার্ভিসিং ব্র্যান্ড কার্লকেয়ার।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাবেক সহ-সভাপতি এবং ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানুল হক রেজওয়ানুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘থ্রিজি ও ফোরজি হ্যানসেটে মূল্যের পার্থক্য প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫ শ টাকা। দেশে যেহেতু এখনও ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু হয়নি। তাই একজন ক্রেতা ১ হাজার থেকে ১৫ শ টাকা বেশি খরচ করে ফোরজি এনাবল হ্যান্ডসেট কিনত না। ফলে দেশের হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরাও ফোরজি হ্যান্ডসেট খুব বেশি একটা দেশে আনত না। ফলে ফোরজি হ্যান্ডসেটের বাজার এখনও রেডি হয়নি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশে শুধু ফোরজি নেটওয়ার্ক সুবিধা চালু করলেই হবে না। এটাকে শুধু কমিউনিকেশনের জন্য বা কথা বলার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলে হবে না। এটাকে প্রোপার ইউটিলাইজড করতে হবে।
এজন্য টেকনো মোবাইল দেশে ৮ হাজার টাকার মধ্যে ফোরজি এনাবল হ্যান্ডসেট বিক্রি করবে বলে জানিয়েছেন ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের এই কর্তা। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোন শুধু কথা বলার কিংবা বার্তা পাঠানোর জন্য ব্যবহার করেন। এদের জন্য ফোরজি তেমন সুফল বয়ে আনবে না। অন্যদিকে আপনি খেয়াল করে দেখবেন এখনও দেশের সব প্রান্তে থ্রিজি নেটওয়ার্ক সেবা পৌঁছায়নি। ফোরজি অপারেটর লঞ্চিং এবং অপারেটরদের ফোরজির উপর একটা হিউজ কমিউনিকেশন করার পর একটা স্টেপ বাই স্টেপ নামবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলতে পারি নেক্সট ইয়ারে আট হাজার টাকার উপরে হ্যান্ডসেট কেউই আর থ্রিজি করবে না। ফোরজি করবে। আট হাজার টাকার নিচের গুলো ফোরজি হবে। তবে ফোরজির গ্রাহকদের বড় একটা অংশ খরচ করতে হবে। আট হাজার টাকার নিচে কোনো হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই ফোরজি হ্যান্ডসেট গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে পারবে না।
দেশে ফোরজি হ্যান্ডসেট সবার হাতে তুলে দেয়ার জন্য করনীয় কি? জানতে চাইলে রেজওয়ানুল বলেন, দেশে সবার হাতে ফোরজি এনাবল হ্যান্ডসেট আসবে তখন আপনি ফোরজিতে যাবেন। ব্যাপারটা এমন নয়। দুটা একসঙ্গেই হতে হবে। কনজ্যুমারকেও রেডি হতে হবে। তাকে ফোরজি হ্যান্ডসেটের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। আমারা এজন্য হাইএন্ড কিংবা মিড রেঞ্জের ফোনে ফোরজি কানেকটিভিটি সুবিধা দেবো। আমরা এখনো মনে করছি লোএন্ডে কাস্টমাররা এখনও ফোরজির জন্য রেডি।