কিছু মৃত্যু পালকের চেয়েও হালকা। আর কিছু পাহাড়ের চেয়েও ভারি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যু চট্টগ্রামের সুউচ্চ পাহাড়ের চেয়েও যেন অনেক ভারি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর শূন্যতা সত্যিই অপূরণীয়। বক্তব্যের শুরুতে এমন আবেগি কথা বলেই চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আজ রবিবার রাত ৮টায় চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন না। তার রাজনীতির রসায়ন ছিল চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষ। তাই তিনি মানুষের কাছাকাছি থাকতেন, মাটির কাছাকাছি থাকতেন। সত্যিকারের জননেতা হতে পেরেছিলেন তিনি। নেতাদের, মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করতেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যানারের ছবি ছিঁড়ে যাবে, বিলবোর্ডের ছবি মুছে যাবে কিন্তু হৃদয়ে লেখা, গাথা ছবি কখনো মুছে যাবে না। মহিউদ্দিন চৌধুরীও কখনো মুছে যাবেন না। তিনি মানুষের হৃদয়ে আছেন, হৃদয়ে থাকবেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় শোকসভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রচার স¤পাদক ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন, রেলপথ মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মহিউদ্দিনপুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলম, কেন্দ্রীয় উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ দপ্তর স¤পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ স¤পাদক এম এ সালাম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
আগামী নির্বাচনে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২২টি আসন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়ে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীকে যদি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চান, তাহলে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, যেখানে দুর্দিন, সেখানে মহিউদ্দিন। দুঃসময়ে, দুর্দিনে মহিউদ্দিন চৌধুরী যেমন চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতেন, তেমনি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি এই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ অগ্রযাত্রা প্রত্যাশা করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে কোনো শক্তি চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। চট্টগ্রামকে আবারও সংগ্রাম-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ আর গণতন্ত্রের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে পরিণত করুন। আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামের সবগুলো আসনে বিজয় ছিনিয়ে এনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করুন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে এই লালদিঘী ময়দানে কত বক্তৃতা দিয়েছি। আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আমি আর মহিউদ্দিন চৌধুরী একসাথে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। মহিউদ্দিন চৌধুরী আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আজ এসব কেবল স্মৃতি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, শত অন্যায়-অবিচার, জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আমি ও মহিউদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে অবিচল ছিলাম।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম স¤পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বক্তব্য দেয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা শোকসভাস্থলের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ছাত্রলীগকে প্রকাশ্যে বেয়াদব বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, নেত্রী আমাকে বলেছেন চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নিয়ে পত্র পত্রিকায় যেন আর কোন খারাপ সংবাদ না আসে। পরে তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি সম্মান ও তার পরিবারের প্রতি শুভকামনা করে তার বক্তব্য শেষ করেন।