নয় দফা দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিল রাজধানীর শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল থেকে চলতে থাকা ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত হন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ এম মকবুল হোসেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে নয়। তিনি এসে তাদের ওপর চড়াও হন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হুমকিও দেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাবেক এমপি মকবুল বলেন,‘আমার সাথে সরকার একাত্মতা করসে ।
যারাই ইতরামি করবে, খুলি উড়াইয়া দিবে। ওই যে পুলিশ আছে, খুলি উড়ায় দিবে’।
সাবেক সাংসদের এমন বক্তব্যে পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। তবে শিক্ষার্থীরা পিছপা হননি। তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পাশাপাশি মকবুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। ওই মুহূর্তের বেশ কিছু অংশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন।
সাবেক এমপি মকবুলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথপোকথনের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো-
সাবেক সাংসদ মকবুল : এমবিবিএস করতে আসছো না? পাবনা, জানো না? বন্ধ কইরা দিসে। কী (প্রকাশ অযোগ্য) হইসে অথরিটির! কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ টোটালি বন্ধ কইরা দিসে? কি হইসে? প্রিন্সিপালের কি হইসে! (প্রকাশ অযোগ্য) হইসে? তোমার এক বছর মিস হবে। তোমাকে এক্সপেল করা হবে!
শিক্ষার্থী : লাগে পাঁচ বছর মিস হোক। আমি শমরিতায় পড়বো এবং দাবি আদায় করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।
[এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে।]
মকবুল : এই চোপ, এই চোপ। তোদের ছাত্র হলো ৫০০ জন।
শিক্ষার্থী: যারা আসে নাই তারা বাসায় রইসে, সবাই এখানে আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
মকবুল: আর আমার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করসে সরকার। যারাই ইতরামি করবে খুলি উড়াইয়া দিবে। ওই যে পুলিশ আছে, খুলি উড়ায় দেবে।
শিক্ষার্থী: এটা নিয়ম বহির্ভূত হতে পারবে না। নিয়ম বহির্ভূত কিছুই হবে না।
মকবুল: ওর সাহসটা কতো আর অর সাহসটা কতো। কত বড় বেয়াদব, চিন্তা করছেন।
এ পরিস্থিতিতে মকবুল হোসেন শিক্ষার্থীদের উঠে যেতে বলেন। আর শিক্ষার্থীরা বলতে থাকেন- কেউ উঠবেন না। জবাবে মকবুল বলেন, ‘আরে ব্যাটা, তুই তোর কথা চিন্তা কর।’
এরকম বাহাস চলতে থাকে আরো কিছুক্ষণ। তবে শিক্ষার্থীরা মকবুলের হুমকিতে পিছু হটেননি। তারা শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে দেন। পরে অবশ্য বেলা পৌনে দুইটার দিকে শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেন।
যে নয় দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করছিল সেগুলো হলো- ইনটার্ন চিকিৎসক লিমন মন্ডলের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার, ইনটার্ন চিকিৎসক এমবিবিএস সর্বনি¤œ ভাতা ১৫হাজার ও বিডিএস ১০হাজার টাকায় করা, বছর বছর শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি না করা, ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে নিয়ম বহির্ভূত টাকা আদায় না করা, একদিন অনুপস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা বিশটাকা করা, যেকোনো পেশাগত পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ধার্যকৃত ফি এর অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের বেতন দেয়ার সবশের্ষ সময় মাসের ১০ তারিখ করা, সব শিক্ষার্থীদের জন্য চিকিৎসা ও ল্যাব পরীক্ষা ফ্রি এবং অভিভাবকদের ৬০ শতাংশ ছাড় দেয়া এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ না করা।