এলার্ট নিউজ প্রতিনিধি নোয়াখালী : ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির পোরকরা গ্রামে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে হিজবুত তাওহীদের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন পুলিশসহ উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক।
এ ঘটনায় এক গ্রামবাসী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও পুলিশ তা নিশ্চিত করেনি।
নিহতরা হলেন, হিজবুত তাওহীদকর্মী লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ইব্রাহিম খান রুবেল (৩২) ও চাঁদপুরের কচুয়ার সোলাইমান খোকন (২৮)।
অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে খোদখাস্তা গ্রামের মজিবুল হক ওরফে মজু মিয়া (৫০) নামে একজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য সোহাগ।
আহতদের জেলা সদরের সুধারাম থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরে সেখান থেকে গুরুতর কয়েকজনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতলে পাঠানো হয়।
দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামানসহ অন্তত অর্ধশত পুলিশ সদস্য।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্মীয় আচার নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে কয়েকবছর ধরেই হিজবুত তাওহীদের অনুসারীদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল গ্রামবাসীর।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান এলার্ট নিউজ প্রতিনিধিকে বলেন, সোমবার দিনব্যাপী এ সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রহিম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এর আগে সংঘর্ষ শুরু হলে হিজবুত তাওহীদ কর্মীদের দুটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ।
তিনি বলেন, একই সময় চাষিরহাট বাজারের দোকানপাটে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
হিজবুত তওহীদের অনুসারী আহত নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১১০ জনকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঘটনার জেরে রাত ১০টা পর্যন্ত সোনাইমুড়িতে ঢাকা-লাকসাম বাইপাস সড়কে গাছ ইট ফেলে অবরোধ করে। রাত পৌনে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সোনাইমুড়ি থানায় হামলার চেষ্টা চালায় বলে জানান এসপি।
“ওই সময় সড়ক অবরোধকারীদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সেখান থেকে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সোনাইমুড়ি থানা ঘেরাও করে।”
রাত ১২টার দিকে বিজিবি, র্যাব ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান এসপি ইলিয়াছ শরীফ।
এর আগে সকালে সংঘর্ষ শুরুর পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে হিজবুত তাওহীদের কর্মী-সমর্থক নুরুল হক মেম্বারের বাড়িসহ দুইটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হিজবুত তাওহীদের অনুসারী দুই জনকে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় বিক্ষুব্ধরা।
পরে দুপুরে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ সময় গ্রামবাসী পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এরপর লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলা থেকেও পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের এনে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।
এই সংঘর্ষের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল সোনাইমুড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকেরের কাছে।
তিনি জানান, কয়েক বছর বছর ধরে চাষিরহাট ইউনয়নের পোরকরা গ্রামে মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারী হিজবুত তওহীদের কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় মুসল্লিদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
“মুসল্লিদের অভিযোগ, হিজবুত তাওহীদের কর্মীরা এলাকায় ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এ নিয়ে এর আগেও একাধিকবার মুসল্লিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। ২০১৩ সালে সংঘর্ষের পর এলাকা ছাড়ে এই দলের কর্মীরা।”
তিনি বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চাষিরহাট ইউনয়ন পরিষদ মাঠে সমাবেশ করে তারা ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য দেয়। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ওই সংগঠনের বহিরাগত বেশ কিছু কর্মীকে এলাকায় জড়ো করে হিজবুত অনুসারীরা।
“এ নিয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে এলাকাবাসী মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে আসার সময় হিজবুতকর্মীরা মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে,” বলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মমিনুল।
পুলিশ দুই হিজবুত সদস্যের নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করলেও সংগঠনের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, “তাদের তিন অনুসারীকে হত্যা করা হয়েছে।”
অবশ্য অপর একজনের নাম, পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।