দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারের বড় প্রকল্পে দু্র্নীতি হচ্ছে কি না, সেদিনে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন । দুর্নীতি হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধের বিষয়ে কেবিনেট ডিভিশন কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীতে দুর্নীতিবিরোধী সরকারি সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দুদক চেয়াম্যান।
বড় প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির সুযোগ বন্ধে দুদকের কী করার আছে জানতে চাইলে সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছিলাম বড় বড় প্রজেক্টে যদি আপনারা মনে করেন দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাহায্য লাগবে, আমাদের জানাবেন। কিন্তু আমরা সেরকম কোনো রেসপন্স পাইনি। তবে আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে সেটা লক্ষ্য রাখছি।’
সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না পওয়া হতাশাব্যঞ্জক কি না জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এটা হতাশাব্যঞ্জক না। দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়টা চলমান। সরকার চেষ্টা করছে, কেবিনেট ডিভিশন বলেছে, এটি একটি নতুন কনসেপ্ট, যাতে দুর্নীতি হওয়ার আগেই যাতে এটা বন্ধ-প্রতিরোধ করা যায়।’
দুদক সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের প্রতি নমনীয় কি না-এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা ঠিক না। যারা বর্তমানে এমপি আছেন তাদের অনেকেরই সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর বিত্তবান ব্যবসায়ীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস বিষয়ে দুদকের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান বলেন, ‘যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা সম্পদের স্টেটমেন্ট সঠিকভাবে দেবেন, এটাই আমরা চাই। ইতিমধ্যে দুই একজন সংসদ সদস্যেকে নিয়ে ইলেকশন কমিশনে আমরা লিখেছি।’
শিক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে কাজ করবে দুদক
২০১৮ সালে দুদক কোন কোন খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে জানতে চাইলে বিশেষভাবে শিক্ষাখাতের কথা উল্লেখ করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। তিনি মনে করেন, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির জন্য শিক্ষাখাতকে দুর্নীতিমুক্ত করা জরুরি।
দুদক প্রধান বলেন, ‘আগামী বছর শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি যাতে না হয়, দুর্নীতির কোনো প্রভাব যাতে না পড়ে সে ব্যপারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করব। এটা গত বছরও ছিল, আগামী বছরও এটা থাকবে।’
দুদক চেয়ারম্যান মনে করেন, শিক্ষায় দুর্নীতি জনশক্তি রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালে জাপান-চীন বিভিন্ন দেশে ২৭ কোটি শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। তখন বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত থাকবে ১৮ শতাংশ জনশক্তি। এখন শিক্ষিত নাকি অদক্ষ জনশক্তি পাঠানো হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর দুর্নীতি থাকলে এদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না।
অন্য এক প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় ২৫ টি সরকারি খাতে অপচয়-দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য বড় দাগে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করব এবং দৃশ্যমান কিছু করার চেষ্টা করব। যেনো সবাই বুঝতে পারে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু একটা হচ্ছে।’
‘এ বছর আমরা চেষ্টা করবো, প্রকৌশলী বিভিন্ন সংস্থাগুলোর যাতে টেন্ডার এবং ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো অনিয়ম না হয়। তাদের সংস্থার সাথে আমরা সভা করব।’
‘কারণ আমাদের বাজেটের সিংহভাগই যায় প্রকৌশল সংস্থাগুলোর কাছে। জনগণের অর্থে যাতে কোনো দুর্নীতি না হয় সে ব্যাপারে চেষ্টা করব।’
অভিযুক্তের স্ত্রীদের আসামি করার সমালোচনা
১০টি মামলায় অভিযুক্তের সঙ্গে তাদের স্ত্রীদেরও আসামি করাকে দুঃখজনক বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের কাছে একটি সামাজিক সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। স্ত্রীদেরকে জিজ্ঞাসা করার পর তার বলেন যে, ‘আমরা তো কিছুই জানি না’। এ বিষয়টি নিয়ে আগামী বছর বা এ বছর আমরা চেষ্টা করব সামাজিকভাবে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু করা যায় কি না।
‘যেমন অবৈধ অর্থ যাতে স্ত্রীদের নামে না রাখা যায়, স্ত্রীরা যাতে সাবধান হয় সে বিষয়ে হয়তো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করব।’
বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন কবে হবে- জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারব না। যারা তদন্ত করছে তারা ভালো জানবে। তারা যেহেতু আপাতত তদন্ত করছে, তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে।’
বেসরকারি ব্যাংকে ঋণ ক্যালেঙ্কারির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেলেঙ্কারি বাড়ছে- এটা বোধহয় সঠিক নয়। আমার মনে হয় যে ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কালি কমছে। আমার মনে হয় ব্যাংকিং খাতে সুশাসন শুরু হয়েছে এবং এটি অব্যহত থাকবে। ব্যাংকের বোর্ডগুলো ভালোভাবে কাজ করছে বলে আমাদের কাজে মনে হয়েছে।’