দেশের ৩৬ হাজার ৬৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাত দিনে অডিট হবে । আগামী জানুয়ারি মাসে একসঙ্গে এ অডিট করার উদ্যাগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। নাম দেয়া হয়েছে পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহ। এ সপ্তাহ উপলক্ষে সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অডিট হবে বলে জানিয়েছেন ওই অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, এত কম সময়ে এতসংখ্যক প্রতিষ্ঠান অডিট করে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ডিআইএ। এই অডিট চালু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।

 ডিআইএ কর্মকর্তারা জানান, পেয়ার ইন্সপেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয় আরো বছর খানেক আগে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং শেষে একটি সফটওয়ার তৈরি করা হয়। দেশের সব প্রতিষ্ঠান প্রধান, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ছকে তথ্য দেয়ার জন্য চিঠি দেয় ডিআইএ। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পাঠানো সব তথ্য এখন ডিআইএ সার্ভারে সংরক্ষিত আছে। প্রাথমিক ধাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল, প্রধান শিক্ষক ও গভর্নিং কমিটির সভাপতির সব তথ্য ওয়েবসাইটে সম্প্রতি আপলোড করা হয়েছে। বাকি তথ্যগুলো ধাপে ধাপে প্রকাশ করবে ডিআইএ। জানুয়ারির শেষের দিকে এক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান অডিট করানো বা পেয়ার ইন্সপেকশন শুরু হবে। আর ফেব্রুয়ারি শুরুর দিকে পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। ওই ৭ দিনে অডিট হবে ৩৬ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহের ডাক টিকিট অবমুক্ত করার সম্মতি দিয়েছে। সেই আলোকেই পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহ পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এ ব্যাপারে ডিআইএ যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার মানবজমিনকে বলেন, পেয়ার ইন্সপেকশন করার সব প্রক্রিয়া শেষ। ওই ৭ দিনে দেশে সব প্রতিষ্ঠান অডিট হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শেষে এখন প্রতিষ্ঠানের তথ্য আপলোড শুরু হয়েছে । প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য আপলোড করেছি। বাকি তথ্য পর্যায়ক্রমে করা হবে। তিনি বলেন, এই অডিট বাস্তবায়িত হলে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে। এখানে কোনো তথ্য গোপন করার সুযোগ নেই। কেউ গোপন করলেই সঙ্গে সঙ্গে ধরা খাবে।
ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রোফাইল, প্রধান ও গভর্নিং কমিটির তথ্যের পর ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ফরমে ১৪ ধাপে তথ্য আপলোড করা হবে। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যাবলী, প্রতিষ্ঠান প্রধানের কার্যাক্রম মূল্যায়ন, শিক্ষকের পেশাদারিত্ব মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীর দক্ষতা মূল্যায়ন, ক্লাস রুটিন পর্যালোচনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ, শ্রেণিকক্ষ, পরিবেশ ও স্যানিটেশন ও সাঁতার, শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, মিলনায়তন সংক্রান্ত তথ্য, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, আয় ব্যয়ের হিসাব এবং নিরাপত্তার তথ্য আপলোড করা হবে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল হিসেবে ৫ ধরনের রঙ দেয়া থাকবে। বিভিন্ন কালারে পাঁচটি রঙ দেখেই বুঝা যাবে কোনো প্রতিষ্ঠান সাধারণ, অতি উত্তম, উত্তম, চলতিমান এবং নিম্নমানের।
পিয়ার ইন্সপেকশনের মাধ্যমে এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক পরিদর্শন করবেন। মোট ১১৪টি বিষয়ে মনিটরিং করা হবে অনলাইনে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে আরো জানা যাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের পেশাদারিত্ব-শ্রেণি পাঠদান মূল্যায়ন, শিক্ষকের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য (এসিআর), প্রতিষ্ঠান প্রধানের একাডেমিক কার্যক্রম মূল্যায়ন, শিক্ষার্থী কৃতিত্ব মূল্যায়ন, ক্লাস রুটিন পর্যালোচনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমাবেশ ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ। এ ছাড়াও স্যানিটেশন পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীর আসনব্যবস্থা, মিলনায়তন, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাবের তথ্য, শিক্ষার্থীর ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা যাচাই, আয়-ব্যয় বিবরণী, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও অভিভাবক-শিক্ষক সম্পর্ক ইত্যাদি।
কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সাধারণ পরিদর্শন হয় অভিযোগ ও বাই রোটেশনের ভিত্তিতে। সাধারণভাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন ও তদন্ত হয় বেশি। জাল সনদ, ভুয়া এমপিওসহ নানা বিষয় উদঘাটন করেন কর্মকর্তারা। তবে সম্প্রতি প্রত্যেক জেলায় একটি সরকারি কলেজ ও স্কুল পরিদর্শন করা শুরু করেছে ডিআইএ। ডিআইএর কর্মকর্তারা জানান, ডিআইএ একাডেমিক পরিদর্শন ফরমের (ওয়েব সাইটে প্রদত্ত) মাধ্যমে পরিদর্শন সম্পন্ন করবেন স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রধানরা। ওই ফরমে প্রধানরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বর্ষের সামগ্রিক পারফরমেন্স প্রতিনিয়ত আপলোড করবেন। উপজেলাভিত্তিক সমজাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানরা চক্রাকারে (এক প্রতিষ্ঠান প্রধান আরেক প্রতিষ্ঠান) পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর নির্ধারিত পরিদর্শন সূচি অনুযায়ী পরিদর্শন কার্য সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধানদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করবেন। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা ও ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট প্রতি বছর ১ থেকে ২০শে জানুয়ারির মধ্যে এবং সব ধরনের কলেজ, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসা ১ থেকে ২০শে জুলাইয়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম পরিদর্শন করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবেন। ওই মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পরিদর্শনের দশ কর্ম দিবসের মধ্যে ডিআইএ’র ওয়েবসাইটে আপলোড করবেন। এরপর সর্বশেষ মূল্যায়ন প্রতিবেদনসমূহ অধিক যাচাই-বাছাই শেষে কোথাও গলদ ধরা পড়লে ডিআইএ কর্মকর্তারা সেখানে পরিদর্শন করবেন।
Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031