প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রসগোল্লা’ খেয়ে সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির খবর চেপে যাওয়ায় গণমাধ্যমের ওপর চটেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশটিতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে খালেদা জিয়ার বিশাল শপিংমলসহ অঢেল সম্পদ পাওয়া গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে দুটি টেলিভিশন ও দুটি পত্রিকা ছাড়া এ বিষয়ে কেউ সংবাদ প্রকাশ করেনি। কেন এ কাজ করেছে, সে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।
তিন দিনের কম্বোডিয়া সফর শেষে বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি কানাডাভিত্তিক টেলিভিশন ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল’ এর একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এতে বলা হয়েছে সৌদি আরবে কয়েকজন বিদেশির অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করছে সে দেশের সরকার।
খালেদা জিয়া সৌদি আরবের শপিং মল ‘আল আরাফাহ’ এবং কাতারের বাণিজ্যিক ভবন তিপরার মালিক বলে জানানো হয়েছে ওই সংবাদে। আবার খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কাতারে ইকরা নামে একটি বহুতল ভবনের মালিক।
আরবসহ ১২টি দেশে খালেদা জিয়ার পরিবারের মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশি টাকায় এই পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা।
কিন্তু বাংলাদেশের মূলধারার বেশিরভাগ গণমাধ্যম এই সংবাদ প্রকাশ করেনি। এ জন্য নাখোশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের তো এ ব্যাপারে নিউজ দেয়ার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখলাম না, রহস্যটা কী? আপনারা কি ওখানে বিনা পয়সায় শপিং করার কোনো কার্ড পেয়েছেন যে নিউজটাই দিতে পারলেন না?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন পত্রিকাকে দেখলাম না এটা নিয়ে উচ্চবাচ্চ করতে। বিষয়টা কী? দুইটা মাত্র চ্যানেল এই নিউজ দিয়েছে, আর দুইটা মাত্র পত্রিকা কিছুটা নিউজ দিয়েছে। বাকিসব পত্রিকা তন্নতন্ন করে খুঁজেও, ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখতে হয়। এটা হলো বাস্তবতা। কেন, এত দুর্বলতা কীসের জন্য?’
বাংলাদেশের বেশিরভাগ পত্রিকা ও টেলিভিশন আওয়ামী লীগ অনুমোদন দিয়েছে-এই বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘বেশিরভাগ পত্রিকা কিন্তু আমিই পারমিশন দিয়েছি, আমার সরকারের আমলে দেয়া পত্রিকা। কিন্তু সেই পত্রিকাগুলোর এইটুকু সৎ সাহস হলো না কেন নিউজগুলো দেয়ার?’।
‘বাংলাদেশে কোনো প্রাইভেট চ্যানেল ছিল না। একমাত্র বিটিভি ছিল। কোনো সরকার সরকার সাহস পায়নি প্রাইভেট চ্যানেল দেয়ার, আমি দিয়েছি। ৪৪টি চ্যানেলের মধ্যে ২৩টা চ্যানেল চলছে। মাত্র দুইটা চ্যানেল নিউজ দিল, বাকিরা দিল না কেন?’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হতে পারে, এত সম্পদের মালিক যারা, তারা জানে কীভাবে মুখ বন্ধ করতে হয়। সবার মুখে বোধ হয় সে রকম কিছু রসগোল্লা ঢুকিয়ে দিয়েছে যাতে সবাই মুখ বন্ধ করে আছে।’
তারেক রহমানের হুমকিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভয় পেয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘দুটি টেলিভিশন ও দুটি পত্রিকা ছাড়া বাকিরা সব তারেক জিয়ার ধমক খেয়ে হাত গুটিয়ে, লেজ গুটিয়ে বসে আছে। সে ধমক দিয়েছে চিনে রাখবে, দেখে রাখবে, এটা শুনেই তো সব হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে।’
‘এখানে সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা যথন সত্যিকারের দুর্নীতির তথ্য আসে, তখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। জানি না, কেন।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার সৌদি আরব সফরের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘একবার আপনাদের মনে আছে, নিউজ আসলো, প্রায় দেড়শ সুটকেস নিয়ে চলে গিয়েছিল, তখন প্রশ্ন উঠেছিল এই সুটকেসে কী আছে, এটাও আপনারা ভুলে গেছেন?’।
শেখ হাসিনা বলন, ‘এই যে টাকা পাচার, মানিলন্ডারিং, এটা যে খালেদা জিয়া ও তার ছেলেরা করেছে, এটা তো আমরা বের করিনি। একটা বেরিয়েছে আমেরিকা থেকে, তারপর সিঙ্গাপুর থেকে। টাকা আমরা ফেরতও এনেছি, এটা তো মিথ্যা না।’
‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কী করতেন?’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ বাংলাদেশের গণমাধ্যম চেপে গেছে, সেই ধরনের খবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হলে কী হতো, সে প্রশ্নও তুলে ধরেন তিনি।
‘আমি যদি জিজ্ঞাসা করি এই ধরনের নিউজ যদি আমার ব্যাপারে হতো, আমার পরিবারের ব্যাপারে হতো, আপনারা তো হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।’
‘আমার অপরাধটা কী?’- এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি? আমরা দেশ স্বাধীন করেছি? আর খালেদা জিয়া মাফ পায় কেন? যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী জানিয়েছে জিয়াউর রহমান, পরে খালেদা জিয়া এসে মন্ত্রী বানিয়েছে, জাতির জনকের খুনিদের এমপি বানিয়েছে, মদদ দিয়েছে, সে জন্যেই কি তাদের সাত খুন মাপ?’।
সাম্প্রতিক একটি আন্তর্জাতিক জরিপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বে অন্তত তিন জন সৎ নেতার মধ্যে তো একটা নাম আমার এসেছে। এতে আপনাদের সম্মান বেড়েছে কি না, জানি না।’
‘এদিকে আমাদের এই অঞ্চলেই তিন জন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের মধ্যে একজন আমাদের আছে। ওদিকেই যেন আপনাদের ঝোঁকটা বেশি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ দেয়ার মতো সৎ সাহস আমাদের আছে। আমাদের বহু জন, বহু জ্ঞানী-গুণী অনেকেই তো কত কথা বলেছে আমাদেরকে। দুর্নীতিবাজ বানাতে চেয়েছে, নানা কথা বলেছে আমাকে।’
খালেদার অর্থপাচারের বিচার বাংলাদেশে হবে
সৌদি আরবে খালেদার ‘অর্থপাচারের’ বিচার হবে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মানিলন্ডারিং করে পাঠানো টাকা ফেরত এনেছি এবং প্রক্রিয়া চরছে। সম্প্রতি বের হয়েছে সৌদি আরবে এবং এটা খুঁজে বের করে দিয়েছে সৌদি আরব। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, কী করছে তারা জানে। তবে অবশ্যই জনগণের টাকা যারা এভাবে বাইরে গিয়ে নিজেদের বিলাসবসনে ব্যবহার করছে, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে, দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে।’
‘আইন অনুযায়ী মানি লন্ডারিং এর বিচার বাংলাদেশে হবে এবং এটা হওয়া উচিতও। কারণ এভাবে দেশের উন্নয়ন না করে, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে, দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে বাইরে এভাবে সম্পত্তি বানানোর কী অধিকার আছে, এটা আমাদেরও প্রশ্ন। অবশ্যই এর বিচার হবে, একে কোনো সন্দেহ নাই্।’
তারেককে ফিরে আসতেই হবে
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফেরত আনতে সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (তারেক) বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সে ওখানে এসাইলাম নিয়ে আছে না কি কীভাবে আছে জানি না। মেলা টাকা বানালে মনে হয় সব সুযোগ পাওয়া যায়।’
‘তবে আজ হোক, কাল হোক, তাকে আসতেই হবে এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। সে তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি…তার কিন্তু শাস্তি হয়েছে। আসামিকে ধরে আনার ব্যাপারে আমরা ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করছি, কাজেই এটা আমাদের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’