যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছে ঢাকা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে । অবশ্য উদারপন্থি মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের তরফে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। পরিস্থিতি কোন্ দিকে মোড় নিচ্ছে- আপাতত তাতে ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ রাখছেন দেশ-বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জেরুজালেম নগরীর ওপর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে গোটা দুনিয়ায়। পূর্ব-পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের প্রকাশ্য সমালোচনা করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা আগ বাড়িয়ে কিছু না বললেও মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কি হয়- তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশেষ করে ওআইসির দিকে চেয়ে আছে ঢাকা। অবশ্য ওআইসির নেতৃত্বদানকারী সৌদি আরব এবং অন্য অনেক মুসলিম রাষ্ট্র এরইমধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। মুসলমানদের বর্তমান কেবলা মক্কা মুকাররামা ও পবিত্র মসজিদ মদীনা মুনাওয়ারা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত (কাস্টডিয়ান) সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ বলেছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি চলমান মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনাকে বিঘ্নিত করবে এবং ওই অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়াবে। ওয়াশিংটন সূত্রে খবর বেরিয়েছে- জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান ব্যাখ্যা করে বুধবার (বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে- ট্রাম্পের ঘোষণা যাই হোক- এখনই তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর প্রক্রিয়া যে শুরু হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় নেই। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ডব্লিউএসবি জানিয়েছে- মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের জন্য জেরুজালেমে একটি ভবনের নকশা চূড়ান্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও নজর রয়েছে দেশটির কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের। আন্তর্জাতিক অন্য সংবাদ মাধ্যম বলছে- যুক্তরাষ্ট্রের তেলআবিব দূতাবাসে হাজার খানেক কূটনীতিক ও স্টাফ কর্মরত রয়েছেন। সমান সংখ্যক কূটনীতিক ও স্টাফ রয়েছে দেশটির জেরুজালেমস্থ কনস্যুলেটে। তেলআবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তর নয় মূলত জেরুজালেম কনস্যুলেটের সঙ্গে দূতাবাসকে একীভূত করে বর্ধিত পরিসরে নতুন চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকারে রাখছে দেশটি। চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের জন্য একটি নিরাপদ এলাকা খোঁজা হচ্ছে। যেখানেই প্রকল্পটি হবে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। আর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে এর পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে রীতিমতো হুঁশিয়ার করেছে জর্ডান। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত ‘ন্যায়সঙ্গত হবে না’ বলে মনে করে আরব লীগ। তাদের মতে, এটি হলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দুটি স্বাতন্ত্র্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বৈশ্বিক উদ্যোগের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল। এরইমধ্যে ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতিক্রিয়া নিয়ে রিপোর্ট করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক পত্রিকা মিডল ইস্ট আই। তাদের ভাষ্য মতে, ফাঁস হওয়া ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের নিরাপত্তার ভার ইসরাইলের ওপর দেয়া হয়েছে। যা ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি টুইট বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ওয়াশিংটনের এমন সিদ্ধান্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রচেষ্টাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলবে। আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল গেইত কায়রোয় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন- এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, মধ্যপ্রাচ্য ও পুরো বিশ্বের স্থিতিশীলতা ধসে পড়তে পারে- এ কথা বিবেচনায় না নিয়ে কেউ কেউ জোর করে জেরুজালেমে ইসরাইলের রাজধানী স্থানান্তরের পদক্ষেপে সমর্থন দিতে যাচ্ছেন। আরব লীগ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্প যদি এ ধরনের ঘোষণা দিয়েই ফেলেন, তখন অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য আরব ফিলিস্তিন ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আরব লীগ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেমে দখল প্রতিষ্ঠা করে ইসরাইল। কিন্তু দখল মেনে নেয়নি মুসলিম বিশ্ব। মুসলমানদের প্রথম কেবলা জেরুজালেম এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশসহ সবার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।