কালো অধ্যায় নেমে আসে ‘কুয়েতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমার জীবনে । দুর্ঘটনার পর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখন অনেক রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। ওই সময়ে বহু লোক রক্ত দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে তোলেন। কিন্তু এখন বেঁচে থেকেও মৃত। শুধু আমার একার নয়, পরিবারের তিনজনই এখন এইচআইভি পজেটিভে আক্রান্ত।
প্রথমে আমার শরীরে এই রোগ ধরা পড়ে। মনে হচ্ছে-ওই রক্ত থেকেই আমার শরীরে এইচআইভি পজেটিভ বাসা বেঁধেছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে আমার স্ত্রী এবং সাত বছরের কন্যাসন্তানও এই রোগে আক্রান্ত।’ কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার এক ব্যক্তি। ২০০৩ সালে তিনি কুয়েতে যান। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালে তার এই রোগ ধরা পড়ে। এরপর থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে পরিবারটি। তার আরো এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছেন। তারা ভালো আছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। আরেক রোগী নারায়ণগঞ্জের যুবতী এইচআইভি পজেটিভ আক্রান্ত। তিনি অভিযোগ করেন চিকিৎসকরাও এই রোগকে ভয় পান। হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেন। কারো কাছে প্রকাশ করতে পারি না। মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। পরিবারের সঙ্গে থাকলেও আত্মীয়স্বজনদের বলতে পারছি না। জীবিত থেকেও মৃত। স্বামী ব্যবসার কাজে ঘন ঘন ভারত যেতেন। তার ধারণা তার আগের স্বামী থেকে তার এই রোগ হয়েছে। তিনি জানান, ইআরবি নামের ওষুধ তাদের ফ্রি দেয়া হয়। এই ওষুধটি যাতে সহজভাবে নিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। কেবল এ দু’জন নয়। দেশে এই পর্যন্ত ১১ হাজার ৭০০ জন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। ৭৯৯ জন মারা গেছেন। এই হিসাব ১৯৮৯ থেকে। সূত্র জানায়, দেশে এবছর এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তর সংখ্যা ৫ শতাধিক। মারা গেছে শতাধিক; যা অন্যান্য বছরে তুলনায় বেশি। অন্যান্য বছর এই সংখ্যা ৪০০, ৪৫০ ছিল। ২০১৬ সালে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭৮ জন। মারা গেছেন ১৪১ জন।
বর্তমানে দেশে চিকিৎসা সেবা ও এইচআইভি শনাক্তকরণ কার্যক্রম সরকারি ১২টি হাসপাতালের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ৪টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এইডস নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংগঠন ‘আশার আলো সোসাইটির’ পরিচালক হাবিবা আক্তার। তিনি মানবজমিনকে জানান, দাতা সংস্থাগুলোর কিছুসংখ্যক বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকারি হাসপাতাল এই ব্যাপারে কাজ করছে। এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এইডস নিয়ে কাজ করে আরেক সংগঠন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’। এ সংগঠন ৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত করে। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক এম এইচ মুক্তি মানবজমিনকে বলেন, আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কর্মসূচি কমিউনিটি ভিত্তিক চালু করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো চালু হয়নি। ‘কেয়ার অ্যান্ড সাপোর্ট’-কর্মসূচিতে তিনটি সংস্থা কাজ করতো। তা বন্ধ। এটা এখন সরকার করছে। তিনি বলেন, আগে যারা সনাক্ত হয়েছেন, তাদের সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। যারা এইচআইভি পজেটিভ বহন করছেন, তাদের টেককেয়ার করতে হবে। না হলে তারা অন্ধকারে চলে যাবেন। এই ভাইরাস ছড়াবেন। তিনি আরো জানান, সরকারকে এনজিওদের নিয়ে কাজ করতে হবে।
জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক শাখার এক তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ৩ কোটির ওপর মানুষ এইডস আক্রান্ত। ২০১৪ সালে ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ৭০ লাখ ৮০ হাজার এইডস আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানো গেছে। ২০১৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার শিশু নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ ৪০ হাজার শিশু সুস্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাতে যা ৩১ শতাংশ কম। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছে বিশ্বে।
মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে এসব তথ্য তুলে ধরেন ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর উপপরিচালক শেখ মাসুদুল আলম। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ৫০ শতাংশ টার্গেট গ্রুপকে কভারেজের আওতায় আনার চেষ্টা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও টিবি রোগ থেকে এইডস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ১৭২টি সেন্টারের মাধ্যমে ১৪ হাজার মাদকাসক্ত, ২৮ হাজার ৬০০ যৌনকর্মী, ১ হাজার ১০৬ এইচআইভি আক্রান্তকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সঙ্গে যদি এইচআইভি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা যুক্ত করা যায় তাহলে এইচআইভি নির্ণয় করাটা আরও সহজ হবে। যখন বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে তখন অর্থবরাদ্দ কমে যাচ্ছে।
এইডস কী এবং এইচআইভি কী: এইচআইভি একটি ভাইরাসের ছোট নাম। হিউমেন ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস থেকে নাম হয়েছে এইচআইভি। এই ভাইরাসটা মানুষের শরীরে সংক্রমণ হলেই রোগ হয়ে যায় না। সংক্রমণ হয়ে রোগ হতে অনেক বছর লাগে। ১০ থেকে ১৫ বছর বা ২০ বছর পর এই রোগ হয়। এজন্য যাদের এইচআইভি আছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে কোনো রোগ নেই। এই এইচআইভি ইনফেকশনের কারণে যখন কতগুলো লক্ষণ শরীরের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে- সেটা জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, টিবি রোগ হওয়া। এইচআইভির কারণে যখন মানুষের মধ্যে এই রোগগুলো দেখা দেয়, তখন একে এইডস বলে। এর মানে এইচআইভি পজিটিভ কেউ হলেও তার মধ্যে এটি কেরিয়ার (বহনকারী) হিসেবে থাকছে, তখন এটি রোগ নয়। যখন এটা রোগে পরিণত হচ্ছে, তখন একে এইডস হিসাবে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে রিকশাচালকদের মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ লোক এইডস কীভাবে ছড়ায় তা জানে না।
একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়: এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো, দুজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে। দ্বিতীয়, ইনজেকশনের মাধ্যমে হতে পারে, ইনজেকশন যদি শেয়ার করে বা রক্ত দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে। তিন নম্বর হচ্ছে, মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তখন এটি হতে পারে, তাও এর সম্ভাবনা খুব কম। ১০০ ভাগের এক ভাগও নয়, দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। এই দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে পড়ে গেলে সন্তানেরও এইচআইভি পজিটিভ হতে পারে। যৌন কার্যক্রমের মধ্যে নারী, পুরুষ, সমকামীদের মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস বিষয়ক কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসিয়োশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এইডস’র দিকে দিয়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। দেশে এই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৭০০ জন। মারা গেছেন ৭৯৯ জন। তিনি আরো জানান, ২ হাজার ৪৬৯ জন ওষুধ সেবন করছেন। যারা মাদক সেবন করে এবং শিরায় সুই নেন তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সচেতনতার কারণে যৌন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটা এখন কম ছড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। দাতাসংস্থাগুলোর অর্থায়ন বন্ধ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে উন্নত হচ্ছি। ফলে দাতারা এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনুদান বন্ধ করে অনুন্নত দেশের দিকে নজর দিচ্ছে।
বর্তমানে দেশে চিকিৎসা সেবা ও এইচআইভি শনাক্তকরণ কার্যক্রম সরকারি ১২টি হাসপাতালের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ৪টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এইডস নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংগঠন ‘আশার আলো সোসাইটির’ পরিচালক হাবিবা আক্তার। তিনি মানবজমিনকে জানান, দাতা সংস্থাগুলোর কিছুসংখ্যক বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকারি হাসপাতাল এই ব্যাপারে কাজ করছে। এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এইডস নিয়ে কাজ করে আরেক সংগঠন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’। এ সংগঠন ৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত করে। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক এম এইচ মুক্তি মানবজমিনকে বলেন, আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কর্মসূচি কমিউনিটি ভিত্তিক চালু করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো চালু হয়নি। ‘কেয়ার অ্যান্ড সাপোর্ট’-কর্মসূচিতে তিনটি সংস্থা কাজ করতো। তা বন্ধ। এটা এখন সরকার করছে। তিনি বলেন, আগে যারা সনাক্ত হয়েছেন, তাদের সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। যারা এইচআইভি পজেটিভ বহন করছেন, তাদের টেককেয়ার করতে হবে। না হলে তারা অন্ধকারে চলে যাবেন। এই ভাইরাস ছড়াবেন। তিনি আরো জানান, সরকারকে এনজিওদের নিয়ে কাজ করতে হবে।
জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক শাখার এক তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ৩ কোটির ওপর মানুষ এইডস আক্রান্ত। ২০১৪ সালে ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ৭০ লাখ ৮০ হাজার এইডস আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানো গেছে। ২০১৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার শিশু নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ ৪০ হাজার শিশু সুস্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাতে যা ৩১ শতাংশ কম। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছে বিশ্বে।
মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে এসব তথ্য তুলে ধরেন ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর উপপরিচালক শেখ মাসুদুল আলম। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ৫০ শতাংশ টার্গেট গ্রুপকে কভারেজের আওতায় আনার চেষ্টা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও টিবি রোগ থেকে এইডস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ১৭২টি সেন্টারের মাধ্যমে ১৪ হাজার মাদকাসক্ত, ২৮ হাজার ৬০০ যৌনকর্মী, ১ হাজার ১০৬ এইচআইভি আক্রান্তকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সঙ্গে যদি এইচআইভি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা যুক্ত করা যায় তাহলে এইচআইভি নির্ণয় করাটা আরও সহজ হবে। যখন বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে তখন অর্থবরাদ্দ কমে যাচ্ছে।
এইডস কী এবং এইচআইভি কী: এইচআইভি একটি ভাইরাসের ছোট নাম। হিউমেন ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস থেকে নাম হয়েছে এইচআইভি। এই ভাইরাসটা মানুষের শরীরে সংক্রমণ হলেই রোগ হয়ে যায় না। সংক্রমণ হয়ে রোগ হতে অনেক বছর লাগে। ১০ থেকে ১৫ বছর বা ২০ বছর পর এই রোগ হয়। এজন্য যাদের এইচআইভি আছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে কোনো রোগ নেই। এই এইচআইভি ইনফেকশনের কারণে যখন কতগুলো লক্ষণ শরীরের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে- সেটা জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, টিবি রোগ হওয়া। এইচআইভির কারণে যখন মানুষের মধ্যে এই রোগগুলো দেখা দেয়, তখন একে এইডস বলে। এর মানে এইচআইভি পজিটিভ কেউ হলেও তার মধ্যে এটি কেরিয়ার (বহনকারী) হিসেবে থাকছে, তখন এটি রোগ নয়। যখন এটা রোগে পরিণত হচ্ছে, তখন একে এইডস হিসাবে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে রিকশাচালকদের মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ লোক এইডস কীভাবে ছড়ায় তা জানে না।
একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়: এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো, দুজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে। দ্বিতীয়, ইনজেকশনের মাধ্যমে হতে পারে, ইনজেকশন যদি শেয়ার করে বা রক্ত দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে। তিন নম্বর হচ্ছে, মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তখন এটি হতে পারে, তাও এর সম্ভাবনা খুব কম। ১০০ ভাগের এক ভাগও নয়, দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। এই দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে পড়ে গেলে সন্তানেরও এইচআইভি পজিটিভ হতে পারে। যৌন কার্যক্রমের মধ্যে নারী, পুরুষ, সমকামীদের মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস বিষয়ক কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসিয়োশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এইডস’র দিকে দিয়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। দেশে এই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৭০০ জন। মারা গেছেন ৭৯৯ জন। তিনি আরো জানান, ২ হাজার ৪৬৯ জন ওষুধ সেবন করছেন। যারা মাদক সেবন করে এবং শিরায় সুই নেন তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সচেতনতার কারণে যৌন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটা এখন কম ছড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। দাতাসংস্থাগুলোর অর্থায়ন বন্ধ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে উন্নত হচ্ছি। ফলে দাতারা এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনুদান বন্ধ করে অনুন্নত দেশের দিকে নজর দিচ্ছে।