বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠক ছিলেন, ঘোষক ছিলেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা সফল করতে ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাদের সঙ্গে এই যৌথসভা করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঘোষণা নিয়ে যে কথা ওঠে- এই ঘোষণার ম্যানডেট কিন্তু তাকে ৭০ সালের নির্বাচনে জাতি দিয়েছিল। এ অধিকার অন্য কারো ছিল না। ঘোষক অনেকেই হতে পারেন। ঘোষণা পাঠক হতেই পারেন, ঘোষক হতে পারেন না। মরহুম জিয়াউর রহমান নিজেই বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করছি, আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে।’
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘এই রকম ঘোষণা এমএ হান্নানও দিয়েছিলেন। সেদিন জিয়াউর রহমানের ঘোষণার যে একটা তাৎপর্য ছিল না, সেটা আমরা অস্বীকার করবো না। তিনি ঘোষণার পাঠক ছিলেন, ঘোষক ছিলেন না। এই দাবি তিনি করতে পারেন না। তিনি বোধ হয় কোনো দিন করেননি। তার মৃত্যুর পর তার দল হয়তো দাবি করছে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মরহুম জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর বিচিত্রা এবং দৈনিক বাংলায় একটা নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেই নিবন্ধে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণে আমরা স্বাধীনতার গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গিয়েছিলাম। দূর্ভাগ্য, আজ জিয়াউর রহমানের দল ৭ মার্চ পালন করে না। অথচ জিয়াউর রহমান সাহেব নিজেই বলেছেন, এই ভাষণটি ছিল স্বাধীনতার গ্রিন সিগন্যাল।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সেই ঘোষণা হয় ২৫ মার্চে। এখানে তো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করা যাবে না। আমরা ৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। সরকার গঠনের অধিকার কেবল আমাদের। এ কথাও বলে রাখি, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এবং নির্বাচিত দলের নেতা হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণা করা নিরঙ্কুশ অধিকার কেবল বঙ্গবন্ধুর ছিল।’তিনি বলেন, ‘১ মার্চ জাতীয় পরিষদ সভা স্থগিত হওয়ার পর হোটেল পূর্বানীতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিল- আপনি কি এই মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে চান? দু’টি সময়ে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন- নট ইয়েট।’ ‘এক-এগারোর কুশীলবদের সঙ্গে আঁতাত করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেচো খুড়তে গেলে বিষধর সাপ বেড়িয়ে আসবে। তাদের ঘরের শত্রু বিভিষণ কে? এটা তাদের বের করতে হবে। এক-এগারো সম্পর্কে আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে। সেদিন গ্রেপ্তার তো অনেকেই হয়েছিল। প্রথম গ্রেপ্তার হওয়ার কথা ছিল, সরকারি দলের নেতাদের। কিন্তু সেখানে প্রথমেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আমাদের নেত্রী। তাকে (শেখ হাসিনা) কিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটা জাতি দেখেছে। ভোর বেলা পোষাক পরিবর্তন করতে দেয়া হয়নি। তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে ওই সময় কী দূর্ব্যবহার করা হয়েছে, কোর্টে কিভাবে তাকে টানা-হেচড়া করা হয়েছে- সেই ইতিহাস কি এই দেশের মানুষ ভুলে গেছে? কাজেই আমাদের অনেক কষ্ট আছে। কিন্তু দেশের স্বার্থে অনেককেই ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় আমি বলতে পারি- ক্ষমা করে দিয়েছি, কিন্তু ভুলে যাইনি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের সেরা ‘ওয়াল্ড গ্রেট স্পিচ’ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি ‘ওয়াল্ড গ্রেট স্পিচ’ হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। সব ভাষণ কর্তৃত্ব করে না, নেতৃত্ব দেয় না। বাংলাদেশে একটি ভাষণ, যে ভাষণটি কর্তৃত্ব করেছিল এবং একটি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত করেছিল। স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিল।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সম্পাদকম-লীর সদস্য দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় সদস্য সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রমুখ।