আত্মহত্যার ঘটনা এখন টল্ক অব দ্যা টেকনাফে পরিণত হয়েছে হ্নদয়বিদারক চিরকুট লিখে এক ছাত্রীর । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ টেকনাফের জনসাধারনের মধ্যে এই আত্মহত্যা নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে।

২১ গত নভেম্বর উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী নুর বেগম (১৫) প্রেমের বিরহ-ব্যথা সহ্য করতে না পেরেই আতœহত্যার পথ বেছে নেয়।
আত্মহত্যার পূর্বে চিরকূটে লিখেছে “বাবা-মা আমার জন্য কেঁদনা। আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলাম, আমার জন্য দুয়া করিও এবং সাহাজানকে কিছু বলিও না। আমি ওকে খুব ভালবাসি, তোমরা আর্শিবাদ কর ওকে ও যেন সুখি হয়” এছাড়াও সে লিখেছে, “আমার তিন ভাইকে কোন কিছু করওনা। আমি মা তোমাদের সম্মান রক্ষা করলাম আমি। আমাকে পোস্টমডার্ণ করনা। আমি ব্যথা পাব” সর্বশেষ সে লিখেছে, “সাহাজানের মধ্যে আমাকে দেখতে পাবে”। “আমার বান্ধবীদের সালাম জানিও, ওদের ভুলে যাবেনা, চাচ্চুকে আমি মরে গেছি তা বলবে না”। চিঠির এক পাশে লিখেছে, “আমাকে ক্ষমা কর সবাই, রেশমার মেঝভাই দেলোরকে ২৫০ টাকা দিয়ে দিও” পরিশেষে লিখেছেন, “আদরের মেয়ে নুর বেগম, আমি আত্মহত্যা করলাম মা-বাবা”।

জানা গেছে, বাবা-মা বেড়াতে যাওয়ার সুযোগে খালি বাড়িতে ঘরের চালার তীরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তার ছোট ভাই নুরুল আবছার বোনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর বেরিয়ে আসে স্কুল পড়ুয়া প্রেমিক জুটির ধনী-গরীবের ব্যবধানে গড়া অব্যক্ত প্রেমের কাহিনী।

এদিকে আত্মহত্যার প্রাক্কালে নুর বেগমের লিখে যাওয়া চিরকুটের সুত্রধরে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তার জীবনের প্রেমের কাহিনীসহ মা-বাবা অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড়। যার কারণে নুর বেগম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার মাধ্যমে আবেগঘন ও স্বপ্নভরা একটি প্রেমিক জুটির স্বপ্নভঙ্গ ইতিহাস সৃষ্টি করলো।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, একই গ্রামের প্রবাসী নুরুল আমিনের মেয়ে নুর বেগম ও মৃত মৌলভী ছৈয়দ আহমদের পুত্র মোঃ শাহজাহান নয়াবাজার হাইস্কুলে পড়াশুনা করতো। নুর বেগম প্রতিদিন শাহজাহানের বসত-বাড়ির উপরের রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়াসহ একসাথে চলাফেরায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইতিমধ্যে পাশ্ববর্তী শাহজাহানের সাথে স্কুলে পড়াশুনা ও আসা-যাওয়ার কারণে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার বিষয়টি জানতে পারেন মা। শাহজাহানের পরিবার গরীব বিধায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। ফলে রক্ষণশীল পরিবার মেয়ে উপযুক্ত হওয়ার কারণে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়ে বাড়ির বাউন্ডারী দেওয়ালের মধ্যে মেয়েকে সীমাবদ্ধ রাখে।

এদিকে নুর বেগমের মা-বাবা দ্রুত মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেন। এরই সুত্রধরে প্রবাসী পিতা নুরুল আমিন প্রায় ৬ মাস পূর্বে দেশে ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে মা-বাবা লেদার এক ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য কথা-বার্তা পাকাপোক্ত করে ফেলে। বিষয়টি নুর বেগম জানতে পেরে প্রেমের বেদনায় ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু নুর বেগমের পিতা নুরুল আলম এই বিষয়টি অস্বীকার করে তার মেয়ের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

নুর বেগম ভালবেসে না পারল মমতাজ হয়ে স¤্রাট শাহজাহানের মতো কুঁেড় ঘরে স্বপ্নের তাজমহল গড়তে। তাই শেষ পর্যন্ত প্রেমের বলিদান দিয়ে অমর হয়ে গেলো নুর বেগম। নিজ বাড়িতে প্রেমের আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাঁর শেষ লেখা চিরকুটে পরিচয়হীন ‘মোঃ শাহজাহানের মধ্যে তাকে দেখতে পাবে’। এছাড়া তাকে কিছু না করার জন্যও চিরকুটে উল্লেখ করেছেন।

অপরদিকে এই নুর বেগমের আত্মহননের বিষয়টি মাথায় রেখে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগনকে ছেলে মেয়েদের প্রতি আরো সজাগ হওয়া দরকার বলে সচেতন মহল মনে করেন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031