আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিরতি দিয়ে হিন্দুদের ওপর হামলা পরিকল্পিত বলে মনে করেন। তার মতে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট করাই হামলাকারীদের উদ্দেশ্য। তবে এই চক্র সফল হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

রবিবার দুপুরে রংপুরের শলেয়াশা ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুপল্লী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন কাদের। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত পরিকল্পিত। তারা এখানে পানি ঘোলা করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়।’

কাদের বলেন, ‘সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দেশে একটি রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল ও সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি এসব কর্মকাণ্ড করে প্রতিবেশী ভারতের সাথে বিরাজমান সুসম্পর্ক নষ্ট করতে চায়। তবে এসব ঘটনা ঘটিয়ে যারা ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক বিনষ্ট করতে চাইছে তারা বোকার সঙ্গে বসবাস করছে।’

ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ পোস্ট শেয়ার দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর রংপুর সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়ায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। টিটু নামে এক যুবক এই পোস্ট দিয়েছেন অভিযোগ তুলে গোটা ঠাকুরপাড়া গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে হামলাকারীরা। পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এ সময় একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এরই মধ্যে পুলিশ টিটুকে গ্রেপ্তার করেছে। তার স্থায়ী ঠিকানা ঠাকুরপাড়া হলেও তিনি এখন সেখানে থাকেন না। আবার টিটুর নামে ফেসবুক আইডিতে যে পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে, সেটি খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী নামে একজন প্রথম পোস্ট করেছেন। তিনি ইসলামী আন্দোলনের দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি এবং খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

এর আগেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় একই কৌশল নেয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুপল্লীতে হামলার আগেও হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজনের নামে ফেসবুক আইডি থেকে কাবা শরিফের বিকৃত ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে জানা যায়, যার নামে আইডি থেকে এই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তিনি নিরক্ষর। ফেসবুক সম্পর্কে তার ধারণা নেই।

এর আগে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার আগেও একই কাজ করা হয়। বৌদ্ধ এক যুবকের নামে ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্মের অবমানাকর ছবি প্রকাশের পর উত্তেজনা তৈরি করে হামলা চালানো হয়।

ওবায়দুল কাদেরও মনে করেন রংপুরের হামলা এবং নাসিরনগর ও রামুর হামলা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এসব একই সুত্রে গাঁথা।

এসব হামলায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না বলে আশ্বস্ত করে কাদের বলেন, ‘যারা হামলা করেছে এবং যারা ইন্ধন জুগিয়েছে, সাজা পেতে হবে সবাইকেই।’

‘আমি স্পষ্ট পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর এই পাশবিক হামলা করেছে, তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে, ভাঙচুর করেছে, মন্দিরে হামলা করেছে তারা যারাই হোক, যতই প্রভাবশারী হোক, মঞ্চে যারা ছিল, নেপথ্যে যারা ছিল কেউ রেহাই পাবে না।’

এই ঘটনার তদন্ত চলছে, কিছু গ্রেপ্তার হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘বাকিদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিষ্কার নির্দেশ।’

ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার ও পূজা কমিটির পক্ষ থেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান সড়কমন্ত্রী। বলেন, ‘যা যা ছিল তার সবই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এখানে ১১টি পরিবার যাদের বাড়ি ঘরে আগুন লেগেছে বাড়িঘর পুড়ে গেছে প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে। যাদের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, এমন সাতটি পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হচ্ছে। মন্দির মেরামত চলছে। মন্দির মেরামতের জন্য ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে। আরও প্রয়োজন হলে আরও দেয়া হবে।

এর আগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করেন ওবায়দুল কাদের। পরে এক সম্প্রীতি সমাবেশে যোগ দেন তিনি। স্থানীয় হিন্দু মুসলিমসহ সব ধর্মের লোকজন এতে অংশ নেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগের দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাস গুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031