সর্বস্ব হারিয়েছে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে আসতে গিয়ে নৌকায় ডাকাতির শিকার হয়ে । এ সময় নৌকার মাঝি-মাল্লারা তাদের নগদ অর্থ, স্বর্ণ, সৌর প্যানেল, কাপড়-চোপড় লুট করে নিয়ে গেছে বলে রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছে। ডাকাতির শিকার রোহিঙ্গারা রাখাইনের বুছিডং থানার পুঁইমালি গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মিঠাপানিরছড়া সাগর সৈকত পয়েন্ট দিয়ে এপাড়ে আসা রোহিঙ্গারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আনু মিয়ার পুত্র উসমান গণি (২২) জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে মংডুর ধংখালীর বালুচর থেকে জনপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় ইঞ্জিনচালিত একটি ফিশিং নৌকায় উঠি। নৌকাটি ঘণ্টাখানেক চলার পর সাগরের মধ্যখানে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে আমাদের সবকিছু লুট করতে থাকে।
এ সময় আমার একটি ব্যাগে ১০ লাখ কিয়াত ও চার আনা স্বর্ণসহ দামি কাপড়-চোপড় ছিল। নৌকার মাঝি-মাল্লারা টাকা, স্বর্ণ ও কাপড়-চোপড় ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে আরো দুই ঘণ্টা পর্যন্ত নৌকা চালিয়ে সাগরের কিনারায় তাড়াহুড়ো করে আমাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত নৌকাসহ সটকে পড়ে মাঝি-মাল্লারা।
তিনি আরো জানান, মিয়ানমার সেনা ও মগদের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রাণ ভয়ে এপাড়ে চলে এসেছি। জীবনে যতটুকু সম্পদ উপার্জন করেছি তার অনেকাংশ নিজ দেশে ফেলে বাকি কিছু বিক্রি করে ১০ লাখ কিয়াত নিয়ে এদেশে আশ্রয়ের জন্য আসার সময় তাও কেড়ে নেয়ায় এখন সর্বস্ব হারালাম। এ সময় তার চোখের পানি বইয়ে পড়তে থাকে। আনু মিয়ার সংসারে এক স্ত্রী আয়েশা বেগম (২০)। দুই কন্যা ফৌজিয়া আক্তার (৪) ও আনজুম আরা (২) ও এক ছেলে মো. হাসান (১)। স্ত্রী আয়েশা এখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাকে ঢালা পথ দিয়ে কাঁধে ভর করে এই লম্বা পথ অতিক্রম করেছে আনুমিয়া। কথাগুলো বলার সময় আনুমিয়ার চোখে মুখে বিষণ্নতা স্পষ্ট পরিলক্ষিত। একই গ্রামের মোস্তফা কামালের পুত্র মো. রফিক (২২) জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে প্রতিটি মুহূর্ত যেন মৃত্যু আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চারদিকে শুধু আতঙ্ক। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। সেনা আর পুলিশের টহল। কাজ নেই, ঘরে খাদ্য নেই। এভাবে কি থাকা যায়? তাই একমাত্র বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে রেখে এপাড়ে চলে আসি। এখান থেকে টাকা উপার্জন করে মাকে নিয়ে আসবো। এ আশা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।
ষাট বছরের বৃদ্ধা ছৈয়দ হোছন জানান, সহিংসতার শুরু থেকে গ্রামের মগ ‘হুক্কাটা’ (চেয়ারম্যান) এতদিন মিলিটারির নির্যাতন থেকে আমাদের রক্ষা করেছিল। তবুও মাঝে মধ্যে সেনারা ঢুকে অনেক নারীদের ধর্ষণ করেছে। এখনো সেনাদের অত্যাচার অব্যাহত থাকায় অবশেষে ‘হুক্কাটা’ আমাদের যে যেখানে পারে চলে যেতে বলে। তার কথায় গত ১১ দিন পূর্বে ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। ধংখালী বালুচরে নৌকার জন্য অপেক্ষায় থেকে অবশেষে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নৌকায় উঠে সাগরপথে রওয়ানা করি। কিছুদূর যাওয়ার পর মাঝি-মাল্লারা নৌকার ইঞ্চিন বন্ধ করে এক প্রকারে আমাদের জিম্মি রেখে ডাকাতি শুরু করে। এসময় আমার ৪০ হাজার কিয়াত কেড়ে নেয়। তিনি আরো জানান, সহিংসতার শুরুতেই আমার চারপাশের গ্রামে অগ্নিসংযোগ করেছে সেনারা। অনেক রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও আগুনে নিক্ষেপ করে মেরেছে। তবু নিজ দেশ ছাড়তে চাইনি। অবশেষে খাদ্য সংকট, অবাধে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে প্রাণ বাঁচাতে এপাড়ে আশ্রয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। পাহাড়ি ঢালাপথ অতিক্রমের সময় এক বিভীষিকাময় ও ভয়াবহ অমানবিক দৃশ্য চোখে পড়ে। যা সারা শরীর শিউরে উঠে। চারদিকে লাশের দুর্গন্ধ। শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধের মৃতদেহ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। মৃতদেহের হাড়, মাথা, পা বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে। আবার কিছু মৃতদেহ পচন অবস্থায় রয়েছে। এদের দুর্গন্ধে পাশে যাওয়ার পরিবেশ নেই। অপরদিকে অনেক যুবতীর উলঙ্গ মৃতদেহগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। যা আইয়ামে জাহিলিয়াতকে পর্যন্ত হার মানিয়েছে। শনিবারও দেখেছি মংডুতে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অগ্নিশিখা। এদিকে উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। গতকাল ভোর রাত হতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া পয়েন্ট দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টেকনাফ থানার এসআই আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন সকাল থেকে তার খাতায় ৫০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের তালিকাভুক্ত করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় নাফ নদ হয়ে দুইটি ভেলায় ভেসে এপাড়ে ঢুকে ৮৮ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া গতকাল ভোরে অনুপ্রবেশকৃত হাজারো রোহিঙ্গাসহ নতুন দেড় হাজার রোহিঙ্গাদের বালুখালী ক্যাম্পসহ নানা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছেন প্রশাসন।
তিনি আরো জানান, মিয়ানমার সেনা ও মগদের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রাণ ভয়ে এপাড়ে চলে এসেছি। জীবনে যতটুকু সম্পদ উপার্জন করেছি তার অনেকাংশ নিজ দেশে ফেলে বাকি কিছু বিক্রি করে ১০ লাখ কিয়াত নিয়ে এদেশে আশ্রয়ের জন্য আসার সময় তাও কেড়ে নেয়ায় এখন সর্বস্ব হারালাম। এ সময় তার চোখের পানি বইয়ে পড়তে থাকে। আনু মিয়ার সংসারে এক স্ত্রী আয়েশা বেগম (২০)। দুই কন্যা ফৌজিয়া আক্তার (৪) ও আনজুম আরা (২) ও এক ছেলে মো. হাসান (১)। স্ত্রী আয়েশা এখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাকে ঢালা পথ দিয়ে কাঁধে ভর করে এই লম্বা পথ অতিক্রম করেছে আনুমিয়া। কথাগুলো বলার সময় আনুমিয়ার চোখে মুখে বিষণ্নতা স্পষ্ট পরিলক্ষিত। একই গ্রামের মোস্তফা কামালের পুত্র মো. রফিক (২২) জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে প্রতিটি মুহূর্ত যেন মৃত্যু আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চারদিকে শুধু আতঙ্ক। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। সেনা আর পুলিশের টহল। কাজ নেই, ঘরে খাদ্য নেই। এভাবে কি থাকা যায়? তাই একমাত্র বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে রেখে এপাড়ে চলে আসি। এখান থেকে টাকা উপার্জন করে মাকে নিয়ে আসবো। এ আশা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।
ষাট বছরের বৃদ্ধা ছৈয়দ হোছন জানান, সহিংসতার শুরু থেকে গ্রামের মগ ‘হুক্কাটা’ (চেয়ারম্যান) এতদিন মিলিটারির নির্যাতন থেকে আমাদের রক্ষা করেছিল। তবুও মাঝে মধ্যে সেনারা ঢুকে অনেক নারীদের ধর্ষণ করেছে। এখনো সেনাদের অত্যাচার অব্যাহত থাকায় অবশেষে ‘হুক্কাটা’ আমাদের যে যেখানে পারে চলে যেতে বলে। তার কথায় গত ১১ দিন পূর্বে ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। ধংখালী বালুচরে নৌকার জন্য অপেক্ষায় থেকে অবশেষে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নৌকায় উঠে সাগরপথে রওয়ানা করি। কিছুদূর যাওয়ার পর মাঝি-মাল্লারা নৌকার ইঞ্চিন বন্ধ করে এক প্রকারে আমাদের জিম্মি রেখে ডাকাতি শুরু করে। এসময় আমার ৪০ হাজার কিয়াত কেড়ে নেয়। তিনি আরো জানান, সহিংসতার শুরুতেই আমার চারপাশের গ্রামে অগ্নিসংযোগ করেছে সেনারা। অনেক রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও আগুনে নিক্ষেপ করে মেরেছে। তবু নিজ দেশ ছাড়তে চাইনি। অবশেষে খাদ্য সংকট, অবাধে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে প্রাণ বাঁচাতে এপাড়ে আশ্রয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। পাহাড়ি ঢালাপথ অতিক্রমের সময় এক বিভীষিকাময় ও ভয়াবহ অমানবিক দৃশ্য চোখে পড়ে। যা সারা শরীর শিউরে উঠে। চারদিকে লাশের দুর্গন্ধ। শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধের মৃতদেহ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। মৃতদেহের হাড়, মাথা, পা বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে। আবার কিছু মৃতদেহ পচন অবস্থায় রয়েছে। এদের দুর্গন্ধে পাশে যাওয়ার পরিবেশ নেই। অপরদিকে অনেক যুবতীর উলঙ্গ মৃতদেহগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। যা আইয়ামে জাহিলিয়াতকে পর্যন্ত হার মানিয়েছে। শনিবারও দেখেছি মংডুতে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অগ্নিশিখা। এদিকে উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। গতকাল ভোর রাত হতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া পয়েন্ট দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টেকনাফ থানার এসআই আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন সকাল থেকে তার খাতায় ৫০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের তালিকাভুক্ত করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় নাফ নদ হয়ে দুইটি ভেলায় ভেসে এপাড়ে ঢুকে ৮৮ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া গতকাল ভোরে অনুপ্রবেশকৃত হাজারো রোহিঙ্গাসহ নতুন দেড় হাজার রোহিঙ্গাদের বালুখালী ক্যাম্পসহ নানা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছেন প্রশাসন।