রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফে ঠাঁই হয়েছে । পাহাড় কেটে ঘর তোলা হয়েছে। বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিতে তাদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। তাদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসাসেবাসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর মধ্যেই অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। তাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে স্থানীয়রা। এ নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য।
উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুরে লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ। সহযোগিতায় ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন, সৈয়দ ঋয়াদ ও বলরাম দাশ অনুপম। ‘পায়ে পায়ে রোহিঙ্গা’ প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ কিস্তি।
টেকনাফ থেকে উখিয়া হয়ে কক্সবাজার যেতে চারটি তল্লাশি চৌকি পার হতে হয়। প্রতিটি চৌকিতে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। উদ্দেশ্য রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই উখিয়া-টেকনাফ পার হয়ে অন্য কোথাও যেতে না পারে। টেকনাফের উনছিপ্রাং থেকে রওনা হলে প্রথমে তল্লাশি চলে হোয়াইক্যং পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে। পরের তল্লাশি বিজিবির চোখে। এটাও হোয়াইক্যংয়ে। তৃতীয় তল্লাশি চালান সেনা সদস্যরা, উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে। লিংক রোড হয়ে কক্সবাজার ঢোকার রাস্তায় মরিচ্যাতেও তল্লাশি চালান বিজিবি সদস্যরা।
বিজিবিরা তল্লাশির সময় কাউকে সন্দেহ হলে তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হয় তিনি রোহিঙ্গা কি না। যেমন, স্থানীয় এলাকার নাম, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বরের নাম জানতে চাওয়া হয়। বিজিবি সদস্যরা জানান, এখন অনেক রোহিঙ্গা এই কৌশলগুলো শিখে ফেলেছে। এ জন্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিকল্প কৌশল অনুসরণ করতে হয়। বিশেষ করে তাদের সঙ্গে কিছুসময় কথা বললে তারা বুঝতে পারেন, কে রোহিঙ্গা কে বাঙালি।
এত নজরদারির মধ্যেও কক্সবাজার হয়ে ঢাকা ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এর পেছনে মাদক চোরাচালানসহ অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আবার তারা মনে করছেন, কক্সবাজার ছেড়ে একবার কোথাও পালিয়ে যেতে পারলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ধরনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া যাবে। তবে ধরা পড়ার পর কারণ হিসেবে তারা বলেন, স্বজন হাসপাতালে ভর্তি তাকে দেখতে তারা কক্সবাজার যাচ্ছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানবপাচার চক্রসহ বিভিন্ন অপরাধী চক্রও সক্রিয় আছে। তারা চাইছে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন পাচারচক্রের হাতে তুলে দিতে। ঢাকায় বাসাবাড়ি, গার্মেন্টে চাকরির লোভ দেখিয়ে কিশোর-কিশোরীদের বের করে আনার চেষ্টাও হচ্ছে গোপনে গোপনে।
মানবপাচার চক্রের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মধ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। এই সংস্থার কর্মীরা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘুরে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। উনছিপ্রাং ক্যাম্পে কথা হয় ইউনিসেফের কর্মী রাবেয়া বসরির সঙ্গে। তিনি জানান, তারা কিশোর-কিশোরীদের মানব পাচার চক্রের ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে কাজ করছেন। তারা যেন লোভে পড়ে ভুল না করে সেজন্য তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্য এবং বিনোদনের জন্য নানা ধরনের খেলার সরঞ্জামও সরবরাহ করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের সংরক্ষিত এলাকায় সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব
রোহিঙ্গা ঢলের প্রভাব পর্যটন খাতে এখনো কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলেনি। তবে রোহিঙ্গাদের এখানে-সেখানে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা পর্যটন খাতের জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কাজের সন্ধানে লুকিয়ে কক্সবাজার আসতে পারে। আমরা সব হোটেল মালিকদের বলে দিয়েছি কেউ যেন রোহিঙ্গাদের কাজে নিয়োগ না করে। কক্সবাজারের মতো পর্যটন নগরীর আশপাশে রোহিঙ্গাদের না রাখাই ভালো হবে। এদের চরাঞ্চল বা কোনো সংরক্ষিত এলাকায় সরিয়ে নিলে পর্যটন এলাকা রক্ষা পাবে।’