একমাত্র শিশুসন্তানকে নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান শিক্ষক পিতা। ‘এক বছর বয়সী সন্তান রেখে স্ত্রী মারা গেছেন।  বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানকে বুকে বেঁধে ক্লাস নিচ্ছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।’ এরকম ক্যাপশন সংবলিত এক শিক্ষক পিতার ছবিতে তোলপাড় হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ছবিতে দেখা গেছে, বেবি বেল্টে বুকের সঙ্গে শিশুকে বেঁধে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। সাদা পাঠদান বোর্ডে সাইনপেনে লিখছেন তিনি। পরম মমতায় শিশুটি কচি হাতে পিতার বুক আঁকড়ে আছে।

 কিন্তু পাঠদানে মোটেও অমনোযোগী মনে হচ্ছে না সাদাকালো চেকশার্ট, চোখে চশমা পরিহিত তরুণ শিক্ষককে। তার পেছনে শিক্ষার্থীরা। সাদা টিশার্ট ও লাল জামা পরিহিত দুই ছাত্রীকে দেখা গেছে শিক্ষকের মতোই বেশ মনোযোগী তারা। ছবির আবেদন ছুঁয়ে গেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হৃদয়। হাজার হাজার ব্যবহারকারী এতে লাইক দিয়েছেন, মন্তব্য করেছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় ফেসবুকের একটি পেইজে ছবি আপ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যেই তা নজর কাড়ে অগণিত ফেসবুক ব্যবহারকারীর। ছবির নিচে মন্তব্যে একজন লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা এই পিতার প্রতি। যিনি মায়ের মমতায় আগলে রেখেছেন শিশুকে। সন্তানের কাছে পিতা-মাতাই তার পরম শান্তির ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল।’ একইভাবে একজন নারী তার মন্তব্যে লিখেছেন, ‘এই শিক্ষক শুধুই একজন শিক্ষক না, তিনি একজন আদর্শ পিতাও। শ্রদ্ধা তার প্রতি।’ কেউ কেউ শুধু শ্রদ্ধা শব্দটি লিখেই এই শিক্ষক পিতাকে সম্মান জানিয়েছেন। একজন মধ্য বয়সী নারী লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি খুব দায়িত্বশীল। এই শিক্ষকের কাছে পিতার স্নেহ ও মায়ের মমতা পাবে শিশুটি।’ একজন পুরুষ লিখেছেন, ‘বাবারা এরকমই হয়। বাবা কখনো খারাপ হয় না। একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এরকম শিক্ষক জাতির জন্য অহংকার। বাবা হিসেবে তিনি সকল বাবাদের আদর্শ হতে পারেন।’ শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক তরুণী তার মন্তব্যে লিখেছেন, ‘যিনি সফল পিতা, তিনি নিশ্চয়ই শিক্ষক এবং স্বামী হিসেবেও সফল। একজন ভালো মানুষ সাধারণত সকল ক্ষেত্রেই ভালো মানুষের পরিচয় দেন। সকল পুরুষরাই তার মতো হোক। এই পিতা ও শিশুর জন্য অনেক শুভকামনা।’
এভাবেই প্রতিটি মন্তব্যে এই শিক্ষক-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। কেউ কেউ অবশ্য ছবিটি বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের মধ্যে এক তরুণী লিখেছেন, ‘পিকচারটি দেখে মনে হচ্ছে এটি দেশের বাইরের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে শিক্ষক ও তার পেছনে বসা ছাত্রীদের দেখে তাই মনে হচ্ছে। যাই হোক, ছবির এই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলো।’ একইরকম মন্তব্য করে এক তরুণ লিখেছেন, ‘তিনি যে দেশের বাসিন্দাই হোন, তিনি পিতা এটাই বড় কথা।’
ছবির শিক্ষকের বিস্তারিত পরিচয় জানতে খোঁজ নেয়া হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এরকম কোনো শিক্ষকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের প্রধান বেলাল আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই শিক্ষক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের না। ধারণা করা হচ্ছে তিনি দেশের বাইরের কেউ হতে পারেন। তবে সত্যিই যদি তাই হয় তিনি যে দেশেরই হোন তার প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
ওই শিক্ষক পিতার ছবিটি সোমবার আপ করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ওই পেইজে ছবিটি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ছবির শিক্ষকের সঠিক পরিচয় দিতে না পারার কারণে তা রিমুভ করা হয়েছে। ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেইজের এডমিন লিখেন, ‘উই ট্রাই টু বি এজ রেসপন্সিভ এজ পসিবল।’
Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031