সকাল ৯টা। চট্টগ্রাম মহানগরের নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে প্রচন্ড ভীড়। আনুমানিক হাজার পাঁচেক হবে। তখনও বিদ্যালয়ের ফটক বন্ধ। আর ফটকের সামনে ৪০০-৫০০ মানুষ দাড়ানোর মতো খোলা জায়গা আছে।

সেখানে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে দাড়িয়ে আছে মা-ভাই-বোন। আবার কারও সাথে মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-মামা পর্যন্ত এসেছে। এভাবে ৫-৬জন স্বজন মিলে ঠাঁই দাড়িয়ে রয়েছে একেকজন জেএসসি পরীক্ষার্থীদের ঘিরে। আর তাতে এমন অবস্থা যে, মুখ নড়লেও শরীর নাড়ার জোঁ নেই কারও।

উড়ছে ধুলা-বালিও। তাতে অনেকে মুখে রুমাল বা মুখোশে পড়েছে। ঘন ঘন চোখ কচলাচ্ছে প্রত্যেকে। এ সময় আক্ষেপ করে অনেকে বলছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের ঢুকার জন্য ফটক খুলে দিলেই পারত। আবার কেউ বলছে বিদ্যালয়ের এত বড় মাঠ শিক্ষার্থীর সাথে স্বজনদেরকেও বসার সুযোগ করে দিতে পারত।

ঠাসাঠাসি আর গাদাগাদিতে পরীক্ষার্থী ও স্বজনদের ব্যাকুলতা হয়তো ততক্ষণে বুঝে ফেলেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাইকে ফু দিয়ে বললেন, হ্যলো, পরীক্ষার্থীদের সাথে আসা সস্মানিত অভিবাবকগণ। আপনার দয়া করে পরীক্ষার্থীদের রেখে চলে যান।

একেক পরীক্ষার্থীদের সাথে ৪-৫ জন স্বজনের দরকার পরীক্ষার্থীদের নেই। পরীক্ষার্থীরা এত ছোট নয় যে, তারা হারিয়ে যাবে। বরং সুরক্ষার নামে আপনারাই ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগের কারণ বাড়িয়েছেন। প্লিজ আপনাদের কাছে হাত জোড় করে বলছি-আপনার চলে যান।

কিছু সচেতন অভিবাবক কর্তৃপক্ষের এ আহ্বানে সাড়া ও সমর্থন দিয়ে তাৎক্ষনিক চলে যান। কিন্তু অধিকাংশ অভিবাবক ও স্বজনরা উল্টো সমালোচনা করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এ সময় চট্টগ্রাম পাহাড়তলি এলাকা থেকে আগত নারী অভিবাবক ইসমত আরা (৩৪) আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের সন্তানদের কিছু হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি দায় নেবেন।

তার কথায় হ-হ করে সমর্থন দেন উপস্থিত কয়েকজন। তবুও সচেতন অভিবাবকের কারণে মুহুতেই কিছুটা হালকা বিদ্যালয় ফটক। এ সুযোগে সাড়ে ৯ টায় ফটক খুলে দেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রবেশের জন্যও শুরু হয় পরীক্ষার্থীদের ঠেলাঠেলি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের লাইন ধরে প্রবেশের নির্দেশ দিলেও কে শুনে কার কথা। আর এতে বাড়ে দুর্ভোগ।

একইভাবে দুপুরে পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে গিয়ে আরেকদফা ঠেলাঠেলি। এতে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের চোখ-মুখ মাথার চুল, হাত-পা সবই প্রায় সাদা। ধুলা-বালিতে বিবর্ণ ক্লান্ত শরীর নিয়ে অনেকে যেন এগোতে পারছিলেন না।

একইভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন হলো নগরীর বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল। কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দগাঁও এএনএম উচ্চ বিদ্যালয়সহ সবকটি জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানান, সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম মহানগরেও ৩৯ কেন্দ্রে ২০৭টি স্কুলের ৪২ হাজার ৮৪৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এ কারণে নগরীর বিভিন্ন জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর বাইরে অভিবাবকদের ভিড় জমেছে। যানজট সৃষ্টি হয়েছে নগরীর প্রতিটি সড়কে। দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।

তবে এ জন্য অভিবাবকদের অসচেতনতাকেই দায়ী করে তিনি বলেন, অভিবাবকদের বোঝা উচিত ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী সে এমন ছোট নয় যে, তাকে রক্ষার জন্য পাহারা দিয়ে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিশ্চয় তারা তাদের সন্তানকে এভাবে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যায়নি। বোকামো কাজে রক্ষক মা-বাবা ও স্বজনরাই পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

নগরীর জামালখানের ডা. খাস্তগীর স্কুলের বাইরে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাঈদা রহমান নামে এক অভিভাবক। তার মেয়ে মাহমুদা এবার কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে কেন্দ্র হলে মা-বাবাদের ছুটতে হত না। তাছাড়া মেয়ে হওয়ায় আসতে হলো আমাকে।

শুধু সাঈদা নন, জামালখান মোড়ে দেখা যায় শত শত মা-বাবার ভিড়। ছোট ছেলে-মেয়েদেরও সাথে নিয়ে এসেছেন তারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় পার্কে বেড়াতে এসেছেন। এসব করে নিজের পরীক্ষার্থী সন্তানটির ক্ষতি মা-বাবা ও স্বজনরাই করছেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু নাসের তালুকদার।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, বোর্ডের অধীনে এবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার ২১৮টি কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষায় এক হাজার ২১২টি স্কুলের ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৭ পরীক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ৮২ হাজার ৭২২ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৮৮৫ জন ছাত্রী।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031