পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সব উপজেলায় তিনতলা বাজার নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় বাজার উন্নয়নের জন্য এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এই তথ্য দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ মোট আট প্রকল্প অনুমোদন দেয়।
আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ৪৯১টি উপজেলায় ৫২০টি বাজার নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় তিনতলা বাজার হবে। যার আয়তন হবে চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুটের।
প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি কৃষির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে গ্রামীণ হাট-বাজার নির্মাণ জরুরি। গ্রামাঞ্চলে হাট-বাজারের পূর্ণ সুবিধা থেকে গ্রামীণ কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা (ব্যবসায়ী) সুযোগ পায় না।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান বাজারব্যবস্থায় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে স্বল্পমূল্যে উৎপাদনস্থলেই উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় গ্রামীণ বাজারে মালামালের সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় ভোক্তাদের অধিক মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামীণ বাজার চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট নির্মাণ করা হবে। ভৌত অবকাঠামো সুবিধা প্রদান করা হলে কৃষি ও অকৃষি পণ্যের সহজ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তার পণ্য বিক্রয় করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তারাও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজে ও ন্যায্যমূল্যে ক্রয়ের সুবিধা পাবে।
প্রকল্পটি দেশের সব উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পল্লী অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, কৃষি পণ্য ন্যায্যমূল্যে প্রাপ্তি, ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও প্রকল্প এলাকায় উন্নত হাট-বাজার অবকাঠামো তৈরি হবে।
মন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত আট প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ২২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি তিন হাজার ৭৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা ১০ হাজার ৯২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
মুস্তফা কামাল জানান, ঢাকায় বর্তমানে এক কোটি ৮৯ লাখ লোকের বাস। কিন্তু এই মানুষের জন্য বাসস্থান অপ্রতুল। উত্তরায় ২১৪. ৪৪ একর জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। ১৩১টি ভবনে সাড়ে ১২শ বর্গফুট, এক হাজার ৫০ বর্গফুট ও সাড়ে ৮শ বর্গফুটের ১৫ হাজারের মতো ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এটা সংশোধিত প্রকল্প। রাজধানীর উত্তরায় ১৮ নম্বর সেক্টরে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ব্যয়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য এ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম চার হাজার আটশত টাকা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম প্রকল্প। এটা প্রথম সংশোধিত প্রকল্প। এতে ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবে। ১৮৩টি উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১৩৩০.১৫ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘জামালপুর-কালিবাড়ী-সরিষাবাড়ী সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ’ প্রকল্প , স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প , স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিভাগের ‘বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং বরগুনা ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্প-১: ন্যাশনাল সিংগেল উইন্ডো বাস্তবায়ন এবং কাস্টমস আধুনিকায়ন জোরদারকরণ’ প্রকল্প।