চালের দাম বেড়েছে দফায় দফায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যয়ের পর । তবে শুল্ক কমানোর পর বেসরকারি খাতে আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে বিদেশ থেকে চাল কেনার চুক্তি করার পর থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে দাম। গত বছরের একই বছরের তুলনায় এখনো চালের দাম অনেক বেশি থাকলেও চলতি বছরের সর্বোচ্চ দাম থেকে কেজি প্রতি পাঁচ থেকে আট টাকা করে কমেছে দাম।

সাধারণত পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার কয়দিন পরেই খুচরা বাজারে সেটার প্রভাব পড়ে। কিন্তু এবারের চিত্রটা ভিন্ন। পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার সাথে সাথে সেটার সুফল দেখা যাচ্ছে খুচরা বাজারেও। দাম আরও কমতে পারে, এই ধারণায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি চাল কিনছেন না।

বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাব অনুযায়ী চালের দাম বেশি কমেছে মোটা এবং মাঝারি মানের। এক মাসের ব্যবধানে এই ধরনের চালগুলো শতকরা ৮.১৬ শতাংশ থেকে ৯.০৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো সরু চালের দাম কমেছে ৫.৬ থেকে ৬.০২ শতাংশ। তবে এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। কিন্তু হাওরে বন্যা উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অতি বৃষ্টি এবং ব্লাস্ট রোগের কারণে গত এক দশকের সবচেয়ে কম উৎপাদন হয়েছে চালের। এ কারণে গত এপ্রিল থেকে চালের দাম বাড়তে থাকে।

এক পর্যায়ে সরকার বিদেশ থেকে আমদানি ও শুল্ক কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কাজ হয়নি কোনোটিতেই। মোটা চালের দাম এক পর্যায়ে উঠে যায় ৫০ টাকার ওপর। আর চিকন চাল বিক্রি হয় ৭০ টাকায়।

তবে সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারিতে মোটা চাল কেজিপ্রতি ৩৯ থেকে ৪০ টাকা, পায়জাম ৪১ থেকে ৪৩ টাকা, বিআর ২৮ মানভেদে ৪৫ থেকে ৪৯ টাকায়, মিনিকেট মানভেদে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৫৯ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পাইকারি ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সরকারি ও বেসকারিভাবে চালের আমদানি বাড়ানোতে আরেক দফা চালের দাম কমেছে। চালের সরবরাহ সংকট নিয়ে এখন আর আশঙ্কা নেই, তাই চালের দাম দফায় দফায় কমছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিগগিরই আসতে শুরু করবে মৌসুমি চাল, তখন দাম আরও কমে যাবে।’

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশেষ করে  আমদানি-শুল্ক দুই দফা; প্রথমে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ  পরে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ কমানোর কারণেই দফায় দফায় চালের দাম কমছে বলে জানান পাইকাররা। চালের দাম আরও কমার সম্ভাবনার কথা জানান তারা।

কাঁঠাল বাগান ও হাতিরপুল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, মোটা চাল কেজিপ্রতি ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, পায়জম ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা, বিআর ২৮ মানভেদে ৫১ থেকে ৫৪ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য বেশি পরিমাণে বা ৫০ কেজির এক বস্তা কিনলে দাম আরও কিছু কমে পাওয়া যাচ্ছে।

চালের দাম কমতে থাকায় ভোক্তা, ক্ষুদ্র বিক্রেতাসহ খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কাঁঠাল বাগানের বাসিন্দা রেবেকা বানু চাল কিনতে এসে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের যে কী বিপদ হয়, সেটা বলে বোঝাতে পারব না। চালের দাম এখন কিছুটা কমছে। আরও কমার দরকার।’

দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মজুদ বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় যথাক্রমে, ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন ও পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন (১৮ অক্টোবর ও ৫ অক্টোবর) করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

আমদানির চিত্র

চাল উৎপাদনে বিপর্যয়ের কারণে দেখা দেয়া সংকট কাটাতে সরকার এ বছর মোট ২০ লাখ টন চাল ও গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারি লক্ষ্যমাত্রার ১৫ লাখ টন চালের মধ্যে তিন লাখ ৫৫ হাজার টন ইতিমধ্যে সরকারি গুদামে পৌঁছেছে। এর মধ্যে কিছু চালবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে খালাসের অপেক্ষায় আছে, বাকি চাল আসার পথে রয়েছে।

সরকারি হিসাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ লাখ ১৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়ে গুদামে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে এসেছে তিন লাখ ৮০ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে এসেছে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031