আদালত দুর্নীতির দায়ে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওহাবকে দুদকের মামলায় আট বছর কারাদণ্ড ও ৯৩ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন । এর পাশাপাশি তার ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৯ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার যশোরের স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা এই সাজা দেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালে আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটি করেছিল।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদকের ২৬ (২) ধারায় তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকা ৩২ পয়সা টাকা মূল্যের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, আসামিপক্ষ হাইকোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে। এরপর আদালত গত ২১ আগস্ট মামলার বিচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়। আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী গত ৩ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়েছে। ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মো. ওয়াজেদ আলী গাজী। এই মামলায় ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন।
চার্জশিটে বলা হয় আবদুল ওহাব তার সম্পদ বিবরণীতে ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৩২৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা যাচাই করে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৬ টাকার সম্পদ পেয়েছেন। আবদুল ওহাব নিজে, তার পুত্র, কন্যা ও স্ত্রীর নামে অসাধু উপায়ে ক্রয়সূত্রে অর্জিত ৯০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫২ টাকা ৭০ পয়সা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গোপন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরদিকে তার বিরুদ্ধে নিজের নামে, মায়ের নামে, তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার নামে এবং বেনামে ক্রয়সূত্রে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সর্বমোট ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকা ৩২ পয়সা টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য, আবদুল ওহাব ঝিনাইদহ-১ আসনে একাধিবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়াও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শৈলকূপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে দুদকের মামলায় ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত।