তাজমহল’ কার- এ প্রশ্ন এখন সর্বত্রই সিলেটের ‘। বহুল আলোচিত চেয়ারম্যান কালাম আহমদ পক্ষের লোকজনের দাবি তাজমহলটি তাদের। একসনা লিজ নিয়ে তারা তাজমহল রেস্টুরেন্টটি বানিয়েছেন। আর যুবলীগ নেতারা দাবি করেছেন- উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারা এখন এই তাজমহলের মালিক। ভাড়া আদায়ের দাবিদার তারা। এ নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি।
উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেট। হামলা, ধর্মঘট, মামলা দায়েরের পরও উত্তেজনা কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে। যুবলীগ নেতারা ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক ও চেয়ারম্যান কালাম আহমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। তাজমহল রেস্টুরেন্টটির অবস্থান সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ভেতরে। এর মালিক ছিলেন সিলেট শহরতলীর কুছাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কালাম আহমদ। তিনি সিলেট পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষ নেতা। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অনেক আগে থেকেই রয়েছে তার প্রভাব। বছর খানেক আগে থেকে তাজমহল নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে মিসবাহ উদ্দিন আহমদ নামের এক যুবলীগ নেতা আদালতের দ্বারস্থ হন। শুরু হয় আইনি লড়াই। ৫ মাস আগে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হন মিসবাহ উদ্দিন আহমদ। তাকে উচ্চ আদালত তাজমহল রেস্টুরেন্টের বৈধ মালিক ঘোষণা করলেও চেয়ারম্যান কালাম আহমদের কাছে রয়ে গেছে তাজমহলের কর্তৃত্ব। এই ৫ মাসে বিভিন্ন সময় তাজমহল নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। দখল পাল্টা দখল নিয়ে সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরানের সঙ্গে কালাম চেয়ারম্যানের বিরোধ চলছিল। এই বিরোধে কালামের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছেন সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক। আর মহসিন কামরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সিলেট জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমদ। গত ১৭ই অক্টোবর তাজমহল রেস্টুরেন্টের দখল পাল্টা দখল নিয়ে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা শাহীন গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর তাজমহলে হামলা ও গুলি বর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে পরদিন ১৮ই অক্টোবর সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এ ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে সিলেট। ওই দিনই সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এবং ২০শে অক্টোবর পুলিশ সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরানকে প্রধান আসামি করে পরিবহন শ্রমিকদের দায়ের করা এজাহারকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। এই মামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি যুবলীগ নেতারা সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলিক ও কালামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। টার্মিনালের ঘটনার জন্য তারা ওই দুইজনকে দায়ী করেন। সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরান জানিয়েছেন-২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল তারা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ইজারা নেন। ইজারার পর বন্ধ হয়ে যায় আগের ইজারাদারের টার্মিনালের সব অবৈধ ব্যবসা। এতে গাত্রদাহ শুরু হয় কালাম ও ফলিকের। আগের ইজারাদার কালাম ও ফলিক মিলে ওই বছরের ৬টি রোডের পাওনা ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। কামরান বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য তারা আবার বাস টার্মিনাল ইজারা নেন। কিন্তু সেলিম আহমদ ফলিক একই অর্থবছর দিগুণ টাকা দিয়ে টার্মিনাল ইজারা নেন। টার্মিনালকে কেন্দ্র করে তিনি আবার শুরু করেন অবৈধ মদ, জুয়া ও চাঁদাবাজি। এ অবস্থায় তাজমহল রেস্টুরেন্টেটি হাইকোর্টের আদেশ বলে যুবলীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন পান। হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর সিটি মেয়র আপিল করেন। মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় ফলিককে টার্মিনাল সমঝে দেন মেয়র। কিন্তু এতে রেস্টুরেন্টের অধিকার ক্ষুণ্ন্ন হয়নি। সে হিসেবে গত ১৭ই অক্টোবর রেস্টেুরেন্টের ভাড়া আদায় করতে গেলে তাদের লোকজন হামলা করে। এমনকি ওই ঘটনায় চাঁদাবাজি মামলা করা হয় আমাদের বিরুদ্ধে। বক্তব্যে বলা হয়, ওইদিনের ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে ফলিক পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন। তারা তুচ্ছ ঘটনায় বার বার পরিবহন শ্রমিকদের লেলিয়ে সিলেটের মানুষকে জিম্মি করে আসছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হচ্ছে। তবে- সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিকের দাবি- আইন সবার ঊর্ধ্বে। হামলা, গুলি চালিয়ে রেস্টুরেন্ট দখলে নেয়ার প্রক্রিয়া কীসের আইন। যারা আইন ভঙ্গ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় তাদের মুখে আইনের কথা মানায় না।