বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা যুবতী, নারীরা যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। ১৯৯২ সালে স্থাপিত আশ্রয় শিবিরে আগে থেকেই অবস্থান করছেন এমন কমপক্ষে ৫০০ রোহিঙ্গা যুবতী এ ব্যবসায় জড়িয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন তাদের দালাল নূর। এর সঙ্গে নতুন করে যারা আশ্রয় নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তাদের দিকেও লোলুপ দৃষ্টি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের। তারা যুবতীদের যৌন ব্যবসায় প্রলুব্ধ করছে। এমন সব যৌনকর্মীর খদ্দের বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিক পর্যন্ত। তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগে নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।
তারা বাংলাদেশী খদ্দের। ফলে যৌন সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপচে পড়া আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা নারীরা যখন খাদ্য, পানি সহ মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য মরণপণ লড়াই করছেন তখন সেখানে নগদ অর্থের লোভ দেখানো হচ্ছে তাদেরকে যৌন ব্যবসায় যোগ দিতে। এমনই একটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, মাটির পরিচ্ছন্ন একটি ঘর। তার মাঝে প্রবেশ করলেন চারজন নারী। তাদের শরীরে জড়ানো কালো চাদর সরিয়ে নিলেন। পা ক্রস করে দিয়ে বসলেন মেঝেতে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলো, তারা অর্থের বিনিময়ে শরীর বিক্রি করেন কিনা। এ প্রশ্নে তাদেরকে অস্বস্তিতে দেখা গেল। তারা নীরব হয়ে গেলেন। চা পানের পর আবার প্রশ্নোত্তর শুরু হলো। ওই যুবতীরা একে অন্যের চোখের দিকে তাকাতে লাগলেন। ধীর পায়ে তাদের একজন ঘরের ভিতর দিয়ে হেঁটে গেলেন দরজা বন্ধ করতে। আরেকজন জানালা বন্ধ করলেন। ছোট্ট, স্যাতসেতে ঘরে অন্ধকার নেমে এলো। এর মাঝেই ফিসফিসে গলায় কথা চলতে লাগলো। ২৬ বছর বয়সী রমিজা বললেন, যদি কেউ আমাদেরকে এখানে দেখতে পায় তাহলে মেরে ফেলবে। উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর রাখাইন থেকে কমপক্ষে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা শরণার্থী শিবির। এর মধ্যে কুতুপালং হলো সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির। সেখানে যৌন ব্যবসার দ্রুত বিস্তার ঘটছে। এতে যারা জড়িত তারা অনেক আগে থেকেই এখানে আছে। তার ওপর নতুন করে হাজার হাজার যুবতী, নারী আশ্রয় নিয়েছেন এখানে। ফলে এ ব্যবসা সেখানে বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া রমিজা বলেন, এ ব্যবসার যারা হর্তাকর্তা তারা নতুন আসা যুবতীদের দিকে নজর দিয়েছে। তাদেরকে এ ব্যবসায় নিয়োগ করার চেষ্টা করছে। তবে কতজন যুবতী বা নারী এ ব্যবসায় এ পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন সে হিসাব নেই জাতিসংঘে কোনো এজেন্সির কাছে। ইউএনএফপিএ’র বিশেষজ্ঞ সাবা জারিফ বলেন, সংখ্যায় তাদের কতজন এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে তা বলা কঠিন। এ সব আশ্রয় শিবিরে কতজন যৌনকর্মী আছেন সে বিষয়ে আমরা এখনো ডাটা সংগ্রহ করি নি। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলেছে, বিশৃংখল, এলামোলো ক্যাম্পগুলোতে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়তে পারে শিশু ও যুবক, যুবতীরা। তাদেরকে বিপথে পরিচালনা করা হতে পারে। দালাল নূর তাই বলে দিয়েছেন ভিতরের কথা। তিনি বলেছেন, বাইরে থেকে মানুষ মনে করবে এখানে এমন কোনো ব্যবসা হয় না। কারণ, আশ্রয় শিবিরের বাইরে খদ্দেরের সঙ্গে মিলিত হন যুবতীরা। তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কারো সঙ্গে শয্যাসঙ্গীনি হন না। এর মধ্য দিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে তারা নিজেদেরকে ‘পিওর’ হিসেবে দেখাতে চান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছে যারা তার বেশির ভাগই টিনেজ। দিনে তারা একবারের বেশি খাবার পায় না। স্কুলে যায় না। তারা এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে গোপনে, তাদের পিতামাতারও অজ্ঞাতে। এমনই একজন কিশোরী রিনা (১৮)। গত এক দশক ধরে তিনি বসবাস করছেন এই আশ্রয়শিবিরে। দু’ বছর আগে তাকে মাদকাসক্ত এক ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছে। রিনা এ সম্পর্কে বলেন, স্বামী আমার সঙ্গে ভীষণ খারাপ আচরণ করেন। প্রহার করেন। প্রথম ছেলে জন্ম হওয়ার পর তিনি আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখন ওই সন্তানের ভরণ-পোষণ আমার কাছে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই আমি যৌনকর্মী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছি। ১৬ বছর বয়সে আমি এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ি। তখন আমার অর্থের খুব দরকার হয়ে পড়ে। আরেকজন যৌনকর্মী ১৪ বছর বয়সী কমরু। কয়েক বছর আগে তিনি পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে। কমরু বলেছে, আমার স্মৃতিতে এই আশ্রয়শিবির ছাড়া কিছু নেই। এখানেই বড় হয়েছি। সব সময়ই আমাকে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।