একদিনে বাজারে ছেড়েছে ব্যবসায়ীরা ২২দিনের জমানো ইলিশ । ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ইলিশ কিনতে। মাত্র ৪ ঘণ্টায় বরিশালের ইলিশ মোকামে হাজার মণ ইলিশ কেনা বেচা হয়েছে। টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর রূপালী ইলিশ আসতে শুরু করেছে বরিশালের পোট রোডস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আড়তদার আর শ্রমিকরা। এই ২২ দিনে অকেন জেলে ইলিশ ধরে বরফজাত করে রেখেছিল।
সকাল ৬ থেকে ১০ টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টায় হাজারো মন ইলিশ বেচা-বিক্রি হয়েছে। আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে এমনই চিত্র দেখা গেছে বরিশালের পোট রোডস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।
গত ১লা অক্টোবর থেকে ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। তাই গত ২২ দিন বরিশালের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের দেখা মিলে নি। গতকাল ২২ অক্টোবর সোমবার রাত ১২ টার পর ইলিশ শিকার শুরু করে বরিশালের প্রায় ৫০ হাজার জেলে। অবশ্য দীর্ঘ এ সময়ে অনেক জেলে নৌকা নিয়ে সাগরেই ছিলেন।
তাই সোমবার সকাল থেকেই রূপালী ইলিশ আসতে শুরু করে জেলার বৃহত্তর বরিশালের পোটরোডস্থ বৃহত্তর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। তবে এর সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি বলে দাবী আড়তদারদের। সোমবার সকাল ৬ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত এই অবতরণ কেন্দ্রে এক হাজার মন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। সারা দিনে কমপক্ষে ২ হাজার মন ইলিশ বেচা বিক্রি হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
বরিশাল পোর্ট রোডস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আবদুল¬াহ এনাটার প্রাইজ’র মালিক মোঃ নূরুজ্জামান জানান, সকাল থেকে জাটকা মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা, গোটলা (২৫০ গ্রাম) ইলিশ ১০ থেকে ১২ হাজার, ভেলকা (৪শ থেকে ৫শ গ্রাম) ১৫ থেকে ১৭ হাজার, এলসি (৬শ থেকে ৯শ গ্রাম) ২২ থেকে ২৫ হাজার আর গ্রেট (এক কেজি বা এর উপরে) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে।
তবে দিন বাড়ার সাথে সাথে ইলিশের মূল্যও কিছুটা বাড়ছে। বেলা ১১ টার পর প্রতি মণে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অপর ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম হোসেন।
বরিশালে মোকামে ট্রলার যোগে ইলিশ নিয়ে আসা জেলে কাজেম উদ্দিন বেপারী বলেন, আজ এখন পর্যন্ত যে সকল জেলেরা এসেছেন তার শুধু বরিশালের কীর্তনখোলা, কালাবদর, মেঘনা, তেঁতুলিয়া, কীর্তনখোলা, আরিয়াল খা, সন্ধ্যা ও গজারিয়া নদী থেকে ইলিশ শিকার করেছেন। এ বছর এই সকল নদীতে ইলিশের পরিমান খুবই বেশী। তাই পূর্বের তুলনায় এবারে সাগরে কম পরিমানের জেলে মাছ শিকারে গেছেন। তারা আগামী পরশু থেকে সাগরে ইলিশ সরবরাহ করবেন।
এদিকে জেলেদের জালে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশই ডিমওয়ালা। তাই কমপক্ষে আরো ১০ দিন এ নিষেধজ্ঞা বহাল থাকলে মাছ গুলো ডিম ছাড়তে পারতো বলে মন্তব্য করেছেন ইলিশ কিনতে আসা মোঃ আবদুর রহমান নামের এক ক্রেতা। সাথে ২২ অক্টোবর রাত ১২ টার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এতো পরিমান ইলিশ ধরা পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। তার দাবী নিষেধাজ্ঞার সময়ও ইলিশ শিকার করা হয়েছে। অপরদিকে ইলিশের তুলনায় বরফ উৎপাদন কম হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে জেলে ও ব্যবসায়ীরা। বরিশালের বাইরে জেলা ও উপজেলায় বরফ সংকট চরমে।
এ ব্যাপারে এখানকার খান আইস ফ্যাক্টরীর ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, হঠাৎ করে ইলিশের পরিমান বেশি হওয়ায় বরফের চাহিদা বেড়েছে। অনেক জেলে পাথারঘাটা, কলাপাড়া আর মনপুরা থেকে এখানে এসেছে বরফ নিতে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বরফ উৎপাদন কম হচ্ছে। বরিশাল জেলা মৎস্য বিষয়ক কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এবছর নদীতে প্রচুর ইলিশ থাকায় মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এতো পরিমানের ইলিশ শিকার করতে সক্ষম হয়েছে এ জেলার প্রায় ৭০ হাজার জেলে। ফলে আজ বাজারে যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা তাজা মাছ। তিনি আরো বলেন, ইলিশ সাধারণ ৪টি সময়ে ডিম ছাড়ে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় দুটি সময়ে ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে। তাই ইলিশের পেটে এখানো ডিম থাকা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনা করে দেখা গেছে সরকারের এ বছরের ইলিশের উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। আজ থেকে ৯ দিন পর শুরু হবে ঝাটকা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা।