রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে নাফ নদীর সীমান্তের জিরো পয়েন্ট জড়ো হওয়া । বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাদের সরিয়ে নিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে করে আশ্রয় শিবিরে পাঠানো হচ্ছে।

এ ছাড়া নাফ নদীর ওপারে ফাতেয়ার ঢালার মুখে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানান পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিন দশেক আগে মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ফাতেয়ার ঢালার মুখে অবস্থান নিয়েছে।

আজ সকাল থেকে আইওএম, ইউএনএইচসিআর, রেড ক্রিসেন্ট পানি, শুকনা খাবার দিয়ে তাদের ক্যাম্পে পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া এমএসএফ কর্মীরা অসুস্থ রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।

আইওএমের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, গত চার দিনে নাফ নদীর তীরে অবস্থান করা ৫৫৯ পরিবারের ৬ হাজার ৮৫২ সদস্যকে তালিকাভুক্ত করে উখিয়া ও বালুখালী অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।

বুচিদং মুন্নাপাড়া গ্রামের আলী আহমদের ছেলে ইউসুফ (১৮) বলেন, পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে আট দিন আগে দুর্গম পাহাড়ি, টিলা ও মেটোপথ পাড়ি দিয়ে আনজিমানস্থ নাফ নদীর এপারে আসি। আসার সময় সামান্য কিছু খাবার ছিল, তাও চার দিনের মাথায় শেষ হয়ে যায়।

বুচিদং মগনামা গ্রামের শামিমের স্ত্রী সাজিদা বেগম (২৫) জানান, তারা গ্রাম থেকে বের হয়েছেন আট দিন আগে। সেখানে মা-বাবাকে রেখে এসেছেন। এখন তাদের কী অবস্থা জানেন না। তিনি বলেন, ‘হাতে টাকা পয়সা নেই। দুই-তিন বছরের শিশুর মুখে এখনো খাবার দিতে পারিনি।’

একই গ্রামের মৃত কবির আহমদের স্ত্রী মাছুদা খাতুন (৫০) বলেন, ‘তারা পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে এপারে পাড়ি দেয়। পথিমধ্যে পরিবারের তিন সদস্য হারিয়ে যায়। তারা এখন কোথায় কেমন আছে জানি না। গত চার দিন ধরে মুখে খাবার জোটেনি।’

এভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পথে অনেকেই হারিয়েছে মা-বাবাকে, আবার কেউ হারিয়েছে সন্তানকে। নিজ বাস্তুভিটা ও মাতৃভূমি ত্যাগ করে পালিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের কষ্ট, দুর্ভোগ, ক্ষুধা, আতঙ্ক তাদের চোখে-মুখে।

গত কয় দিনে উখিয়ার সীমান্তের নাফ নদী পেরিয়ে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১০ হাজারের বেশি। এভাবে উখিয়ার পালংখালীর আনজিমান, ধামনখালী, ওলুবনিয়া, তমব্রুসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। তাদের বর্মি ভাষায় বাঙালি লেখা কার্ড নিতে চাপ দেয়া হচ্ছে। কার্ড  না নিলে মেরে ফেলার হুমকিসহ হিংসাত্মক আচরণ করছে তাদের সঙ্গে। বুচিদংয়ের ১৪টি গ্রামে মিয়ানমারের উগ্রপন্থী মগ সেনারা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা দলে দলে এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে।

৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক আশিকুর রহিম দুপুরে উখিয়ার পালংখালী আনজিমান সীমান্তে সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে মানবিক সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বিজিবির একটি বিশেষ টিম কাজ করছে। রোহিঙ্গারা যাতে বিস্ফোরক জাতীয় কোনো দ্রব্য বহন করে নিয়ে যেতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসা এসব রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়ার আগে পানি, শুকনো খাবার ও অন্যান্য সহায়তা করা হচ্ছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031